বগুড়ার ইতিহাস

সোনাতলা-সারিয়াকান্দি আসনের প্রাক্তন সংসদ সদস্য মরহুম ডাঃ হাবিবুর রহমান সাহেবের জীবনী


মরহুম ডাঃ হাবিবুর রহমান ৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৩১ খ্রিষ্টাব্দে বগুড়া জেলার সোনাতলা উপজেলাধীন কামারপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতাঃ মরহুম দৌলতুল্লা মন্ডল নিজ এলাকার প্রসিদ্ধ চিকিৎসক এবং মাতাঃ মরহুমা জমেলা খাতুন গৃহিনী ছিলেন। পিতামহ মরহুম দেয়ানতুল্লাহ মন্ডল ব্যবসায়ী ছিলেন। মাতা-পিতা’র ২ পুত্র ৫ কন্যা সন্তানের মধ্য তাহাঁর অবস্থান তৃতীয়।


শিক্ষাজীবনঃমরহুম ডাঃ হাবিবুর রহমান প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করে সোনাতলা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। তিনি ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দে এই প্রতিষ্ঠান হতে কৃতিত্বের সহিত ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন। অতঃপর তিনি রংপুর কারমাইকেল কলেজে ভর্তি হন এবং ১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দে আই.এস.সি পাশ করেন।


মেধাবী মরহুম ডাঃ হাবিবুর রহমান কৃতিত্বের সহিত আই.এস.সি পাশ কর করার পর ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হন এবং ১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দে এম.বি.বি.এস পাশ করেন।


কর্মজীবনঃএম.বি.বি.এস পাশ করে করে তিনি ১৯৫৮ খ্রিষ্টাব্দে পাকিস্তানের পাঞ্জাব মেডিক্যাল হেলথ্ সার্ভিসে সার্জন হিসেবে যোগদান করেন। তিনি মার্চ ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত এই পদে বহাল ছিলেন। স্বাধিনতা যুদ্ধের কিছুদিন পুর্বে দেশে ফিরে আসেন এবং নিজ উপজেলায় “ইসলামিয়া মেডিক্যাল-এ সার্জন হিসেবে যোগদান করেন। শারীরিক অসুস্থতার পুর্ব পর্যন্ত নিজেকে চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত করেন। তিনি ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে স্বাধীনতা যুদ্ধে আহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা সেবা প্রদান করেন।


রাজনৈতিক জীবনঃসাধারণ মানুষের চিকিৎসা সেবা প্রদানের পাশাপাশি তিনি (সোনাতলা-সারিয়াকান্দি) এলাকার অপামার জনসাধারনের সামগ্রিক কল্যানের নিমিত্তে চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে স্বল্প ভোটের ব্যাবধানে পরাজিত হন।তিনি ১৯৯০ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বি.এন.পি)-তে যোগদান করেন। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের মনোনিত প্রার্থী হিসেবে ১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দে পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন। অতঃপর ষষ্ঠ ও সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়লাভ করেন। তিনি পরপর তিনবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়লাভ করায় বিশেষ কৃতিত্ব অর্জন করেন।


সমাজসেবাঃমরহুম ডাঃ হাবিবুর রহমান এম.পি একজন নিবেদিত প্রান সমাজ কর্মী ছিলেন। তিনি সোনাতলা ইউনিয়ন’কে উপজেলায় রুপান্তরিত করার আন্দোলনে মুখ্য ভুমিকা পালন করেন। ১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দে সোনাতলা উপজেলা বাস্তবায়ন কমিটি গঠিত হলে, তিনি উক্ত কমিটির সভাপতি মনোনিত হন। তাহাঁর নেতৃত্বে সফল আন্দোলনের প্রেক্ষিতে ২৫ জানুয়ারি ১৯৮১ খ্রিষ্টাব্দে “সোনাতলা” উপজেলা হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে।


তাছাড়া তাহার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় সোনাতলা পাইলট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্টিত হয়। তিনি উক্ত প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে ব্যক্তিগত অর্থায়ন এবং তত্ত্বাবধানে বিদ্যালয়ের পাকা ভবনের প্রাথমিক কাজ সম্পন্ন হয়।


মরহুম ডাঃ হাবিবুর রহমান এম.পি, নাজির আকতার কলেজ সরকারীকরনের প্রচেষ্টা চালান এবং সফলকাম হন। এছাড়া তিনি সবুজসাথী প্রিপারেটরি স্কুল নামে একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন।
সোনাতলা-সারিয়াকান্দি এলাকার মাননীয় সাংসদ হিসেবে তিনি এলাকার উন্নয়ন কর্মকান্ডের অংশ হিসেবে আড়িয়ার ঘাট সেতু নির্মান, যমুনা নদী ভাঙন রোধে গ্রোয়েন বাধ নির্মান, সোনাতলা ও সারিয়াকান্দি উপজেলায় বিভিন্ন সেতু, কালভাট স্থাপন, পাকা রাস্তাঘাট পাকাকরন সহ প্রভৃতি উন্নয়নমুলক কাজ বাস্তবায়নের জন্য বিশেষ অবদান রাখেন।


মরহুম ডাঃ হাবিবুর রহমান এম.পি একজন নিষ্ঠাবান, সৎ, দুর্নীতিমুক্ত সাংসদ হিসেবে সুপরিচিত ছিলেন। তিনি পরপর পর তিনবার সাংসদ হিসেবে দুর্লভ খ্যাতি অর্জনের পাশাপাশি নিজেকে একজন ন্যায়পরায়ণ সাংসদ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। তিনি তৃতীয় বারের মত সাংসদ নির্বাচিত হওয়ার পর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক ঘোষিত বিশেষ পুরস্কার গ্রহণ করেন নাই। তিনি ব্যাক্তিগত অর্থায়নে ক্রয়কৃত যানবাহনে যাতায়াত করতেন। এমনকি রাষ্ট্রীয় কোন সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করেন নি।


মরহুম ডাঃ হাবিবুর রহমান এম.পি ১১ মে ২০০২ খ্রিষ্টাব্দে নিজ বাসভবনে ইহলোক ত্যাগ করেন।


আত্ম সমালোচনা এবং মাগফেরাত কামনাঃ মরহুম ডাঃ হাবিবুর রহমান এম.পি’র জীবন চরিত পুরাপুরি তুলে ধরতে না পারায় বগুড়া’র ইতিকাহিনী আন্তরিকভাবে দুঃখিত। এমন দেশপ্রেমিক সাংসদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।
তথ্যসূত্রঃগোলাম জাকারিয়া কনকবগুড়া চরিতকোষ- জনাব আকতার উদ্দিন মানিক।

এই বিভাগের অন্য খবর

Back to top button