বগুড়া সদর উপজেলা
দুর্ভোগে লাখো মানুষ, মুখ থুবড়ে পড়েছে বগুড়ার সড়ক
উন্নয়নের জোয়ারে যখন ভাসছে পুরো দেশ- তখন অনেকটা মুখ থুবড়ে পড়ে আছে বগুড়ার সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা। কিছু কিছু সড়ক সংস্কার ও পুনঃনির্মাণ করা হলেও এখনও খানাখন্দে ভরা জেলার ছয় উপজেলার বেশ কয়েকটি সড়ক। সরকারের সুদৃষ্টি আর কাজ শুরুর অপেক্ষার প্রহর গুনছেন এ অঞ্চলের লাখ লাখ মানুষ। কোন কোন অঞ্চলে প্রকল্প অনুমোদন হলেও হয়নি টেন্ডার, কোথাও আবার প্রকল্প অনুমোদন থেকে ঠিকাদার পর্যন্ত নিয়োগ হলেও কাজ শুরু হয়নি আজ অবধি। আবার কোন কোন রাস্তা সংস্কারে এখনো মেলেনি বরাদ্দ।
জেলার নন্দীগ্রাম ও দুপচাঁচিয়া উপজেলার ৬৪ কিলোমিটার সড়ক পুনঃনির্মাণের প্রকল্প অনুমোদন হলেও টেন্ডার না হওয়ায় কাজ শুরু হয়নি এখনও।এদিকে, টেন্ডার হওয়ার পর ঠিকাদার নিয়োগ হলেও দৃশ্যমান হয়নি শিবগঞ্জের মোকামতলা থেকে সোনাতলা এবং সারিয়াকান্দি উপজেলায় ১৮ কিলোমিটার সড়ক মেরামতের কাজ। আর শিবগঞ্জের একটি সড়কের ৬ কিলোমিটার অংশ এবং গাবতলী উপজেলার মধ্য দিয়ে চলে যাওয়া সড়কের ১৮ কিলোমিটার অংশ মেরামতের জন্য আজ পর্যন্ত কোন বরাদ্দই মেলেনি। প্রায় ৩ বছরেরও বেশি সময় ধরে মেরামতের কোন উদ্যোগ না নেওয়ায় জেলার দক্ষিণের উপজেলা নন্দীগ্রামের ওমরপুর থেকে উত্তরে দুপচাঁচিয়া উপজেলার তালোড়া হয়ে জিয়ানগর এবং নন্দীগ্রামের কাথম থেকে নওগাঁর কালিগঞ্জ পর্যন্ত সড়কের অবস্থা সবচেয়ে শোচনীয়। এর মধ্যে তালোড়া থেকে দুপচাঁচিয়া এবং দুপচাঁচিয়া থেকে জিয়ানগর অংশের গর্তগুলো যেন রীতিমত ডোবায় পরিণত হয়েছে। বর্ষা মৌসুমে সেগুলো যেন পুকুরে পরিণত হয়। তখন দুপচাঁচিয়া-জিয়ানগর সড়কে যানবাহনগুলোকে বিকল্প পথে চলাচল করতে হয়।
সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নন্দীগ্রামের ওমরপুর থেকে দুপচাঁচিয়ার তালোড়া হয়ে জিয়ানগর পর্যন্ত ৪৭ কিলোমিটার। এবং নন্দীগ্রামের কাথম থেকে নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার কালিগঞ্জ পর্যন্ত ১৭ কিলোমিটার। এই দুইটি সড়ক ১২ ফুট থেকে ১৮ ফুট সম্প্রসারণ ও পুনঃনির্মাণের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিশ্রুত ‘ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণের জন্য রাস্তাঘাট উন্নয়নে সড়ক-মহাসড়ক উন্নয়ন ও প্রশস্তকরণ’ নামে একটি প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। প্রায় সাড়ে তিন বছর অপেক্ষার পর ২০১৮ সালের ১১ অক্টোবর ১৭৯ কোটি টাকা ব্যয় সাপেক্ষ ওই প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) অনুমোদন পায়। তবে এখন পর্যন্ত টেন্ডার আহবান করা যায়নি। ফলে কাজও শুরু হয়নি। বাকি সড়কগুলোর মধ্যে শিবগঞ্জ উপজেলার মোকামতলা থেকে সোনাতলা উপজেলা। এবং সোনাতলা উপজেলা থেকে যমুনা নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ হয়ে সারিয়াকান্দি উপজেলা অংশে ১৮ কিলোমিটার অংশের মেরামতের জন্য ৪৫ কোটি টাকা ব্যয় ধরে টেন্ডারের মাধ্যমে ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়। কিন্তু এখনও কাজ শুরু করা যায়নি।
এ ব্যাপারে মোকামতলা এলাকার বাসিন্দা তৌহিদ মন্ডল জানান, মোকামতলা তলা থেকে সোনাতলা সড়কের কয়েকটি স্থানে রীতিমত খাদে পরিণত হয়েছে। একটু বৃষ্টি হলেই সেগুলো ডোবায় পরিণত হয়। তিনি বলেন, ‘আমরা সাধারণত সিএনজি চালিত অটোরিকশায় চলাচল করি। শুকনো মৌসুমে অনেক কষ্ট হলেও যাওয়া যায় কিন্তু বর্ষা হলে চলাচলের কোন উপায় থাকে না।’ এর আগে রাস্তাটির মেরামত না করায় এলাকাবাসী রাস্তায় ধানের চারা রোপণ করে প্রতিবাদও করে।প্রায় একই অবস্থা শিবগঞ্জের খয়েরাপুকুর-পীরব বাজার সড়কের ৬ কিলোমিটার এবং গাবতলীর গোলাবাড়ি-পোড়াদহ সড়কের ১৮ কিলোমিটার অংশ।
সওজের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ওই দু’টি সড়কের ২৪ কিলোমিটার অংশ মেরামতের জন্য ৩০ কোটি টাকা প্রয়োজন। কিন্তু এখন পর্যন্ত সেটি বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। ফলে টেন্ডারও করা যাচ্ছে না।
বগুড়া সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুজ্জামান শিবগঞ্জের খয়রাপুকুর ও গাবতলীর গোলাবাড়ি সড়ক মেরামত প্রসঙ্গে বলেন, ‘এ খাতে এখনও পর্যন্ত কোন অর্থ বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। তাই গুরুত্বপূর্ণ ওই দু’টি সড়ক মেরামতের ব্যাপারে এই মুহুর্তে কোন কিছু বলা সম্ভব হচ্ছে না। ‘নন্দীগ্রাম ও দুপচাঁচিয়া উপজেলায় প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি সড়ক পুনঃনির্মাণের জন্য পনের দিনের মধ্যে টেন্ডার আহবান করা হবে। তবে কাজ শুরু হবে বর্ষার পরে।’
শিবগঞ্জের মোকামতলা থেকে সোনাতলা এবং সারিয়াকান্দি উপজেলার ১৮ কিলোমিটার সড়ক মেরামত কবে শুরু হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এরই মধ্যে ঠিকাদাররা মালামাল আনতে শুরু করেছেন। দুই সপ্তাহের মধ্যেই কাজ শুরু হয়ে যাবে।