বগরা খান এর জিবনী
আজকের বগুড়া বর্তমান বাংলাদেশের এক উল্লেখযোগ্য শহর ও বাণিজ্যকেন্দ্র। এই বগুড়া শহরের উৎপত্তি ও এর নামের তাৎপর্য সম্পর্কে রয়েছে নানা কিংবদন্তী। এই কিংবদন্তীর বাইরে রয়েছে এর ঐতিহাসিক পটভূমি।
ধারণা করা হয় আজ থেকে প্রায় ৭০০ বৎসর পূর্বে সৌখিন ও আমোদপ্রিয় এক শাহজাদা এসেছিলেন বাংলাদেশে। এই শাহজাদা ছিলেন কোমলপ্রাণ, তিনি বাংলার রূপ, সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন। এই শাহজাদার নাম ছিল বগরা খান। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় এই বগরা খান থেকেই বগুড়া নামের উৎপত্তি। শাহজাদা বগরা খানের পিতা ছিল দিল্লীর বিখ্যাত সুলতান এবং উপমহাদেশে ভারতের প্রবল প্রতাপান্বিত সম্রাট সুলতান গিয়াসউদ্দিন বলবন শাহ্। গিয়াসউদ্দিন বলবনের প্রতাপকে বলা যায় ‘বাঘ আর ছাগল এক ঘাটে জল খেতো। সুলতান বলবন ছিলেন সে যুগের বিশ্বের সর্বাপেক্ষা ক্ষমতাশালী শাসকদের অন্যতম। এহেন দোর্দণ্ড প্রতাপী সুলতানের দুই পুত্রের মধ্যে কনিষ্ঠ পুত্র ছিলেন বগরা খান। সুলতান তার কনিষ্ঠ শাহজাদার কোমলমতি ও আমোদপ্রিয়তার কারণে মাঝে মাঝে হতাশা বোধ করতেন। সুলতান বলবন মনে করতেন তাঁর এই কনিষ্ঠ পুত্র রাজ্য শাসনের উপযুক্ত নন। সুলতান তার জ্যেষ্ঠ পুত্রকে পাঞ্জাব ও সিন্ধু এলাকার শাসনকর্তা নিযুক্ত করেন এবং কনিষ্ঠ পুত্র শাহজাদা বগরা খানকে বাংলার শাসনকর্তা নিযুক্ত করেন। এই সময়ে বাংলাদেশে যথেষ্ট পরিমাণে সুখ ও ধনসম্পদ বিরাজমান ছিল। এখান থেকে প্রতি বৎসর বহু সংখ্যক হাতি ও ঘোড়া দিল্লীর দরবারে প্রেরিত হতো। বাংলার ধনসম্পদ ও যুদ্ধের জন্য প্রেরিত হাতি দিল্লীর সুলতানের সুরক্ষার প্রয়োজনে ব্যবহৃত হতো।
শাহজাদা বগরা খান বাংলাদেশের শাসনকর্তা নিযুক্ত হলেও তিনি তাঁর আমোদ প্রিয়তা ও কোমল স্বভাবের জন্য পরিচিতি লাভ করেছিলেন। এ জন্য সুলতান তাঁর গতিবিধির উপর কড়া নজর রাখতেন। তিনি সর্বদা বগরা খানকে উপদেশ দান করতেন। এই উপদেশের মধ্যে তিনি পুত্র বগরা খানকে অস্থিরচিত্ততা পরিহার করতে বলতেন। রাজ্য শাসনের জন্য অভিজ্ঞ ও গুণী লোকদের পরামর্শ গ্রহণ করতে বলতেন। বগরা খানকে ‘মদ্যপান’ করতেনিষেধ করতেন। আরাম-আয়েশকে বর্জন করতে বলতেন। মাঝে মাঝে বগরা খানকে পদচ্যুত করার জন্য হুমকিও প্রদান করতেন। সুলতান বলবন শাহজাদা বগরা খানের উপর নজর রাখার জন্য বহুসংখ্যাক গুপ্তচর নিযুক্ত করেছিলেন। পিতার কঠোরতার কারণে বগরা খান ‘মদ্যপান’ ত্যাগ করে অনেকটা সহজ ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছিলেন। এক সময় সুলতান বলবনের নিযুক্ত এক সেনানায়ক বাংলা অঞ্চলে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। তাঁর নাম ছিল তুখরিল খান। সুলতান বলবন ও শাহজাদা বগরা খান অভিযান পরিচালনা করে তুখরিল খানকে পরাজিত ও নিহত করেন। তুখরিল খানকে পরাজিত করার পরে সুলতান বলবন শাহজাদা বগরা খানকে বাংলা, লক্ষণাবতী ও পার্শ্ববর্তী এক বিশাল জনপদের শাসনকর্তা নিযুক্ত করেন। বগরা খানকে তিনি ডেকে কসম করান যেন, বাংলার সকল অঞ্চল সম্পূর্ণরূপে তার করায়ত্ব করার পূর্বমুহূর্ত পর্যন্ত যেন নাচগানের আসর, জলসা, মদ্যপান ও আমোদপ্রমোদে মত্ত না হয়। একদিনের কথা। সুলতান বলবন শাহজাদা বগরা খানকে ডেকে বললেন- ‘হে পুত্র! তুমি কোথায় ছিলে?’ পুত্র উত্তরে বললেন- ‘বড় বাজারের নিকট পুরাতন মালিকদের একটি গৃহে ছিলাম’। বগরা খানের আর একটি নাম ছিল ‘মাহমুদ’। সুলতান বললেন- ‘হে মাহমুদ দেখেছ!’ বগরা খান সুলতানের এ কথার উত্তর কী হবে- বুঝতে না পেরে চুপ করে থাকলেন। তখন সুলতান বললেন ‘বড় বাজারে আমার শাস্তি দেখেছ!’ এখানে সুলতান বিদ্রোহী তুখরিল খান ও তার সহযোগীদের যে নিষ্ঠুর শাস্তি দিয়েছিলেন তাই বুঝাতে চেয়েছেন। তখন বগরা খান বললেন- ‘হ্যাঁ, দেখেছি, তখন সুলতান বলবন তাঁর স্বভাবসুলভ গম্ভীর কণ্ঠে বললেন- ‘যদি কোন দিন কোন বদমায়েশের কুমন্ত্রণায় তুমি বিদ্রোহী হও! যদি দিল্লীর বাদশাহের আনুগত্য অস্বীকার কর! তবে সেইদিন বড় বাজারে দেখা এই শাস্তি ও হত্যাকাণ্ডের কথা স্মরণ করবে এবং আমার কথা ভুলে যেয়ো না! ভারতের দূরদূরান্তে অবস্থিত কোন প্রদেশ সিন্ধু, গুজরাট, লক্ষণাবতী, সোনারগাঁও যদি দিল্লীর বাদশাহের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে, তাহলে উক্ত শাসকের স্ত্রী-পুত্র, পাত্র-মিত্র ও সৈন্য-অসৈন্য সকলের অবস্থা তেমনই হবে, যেমন তুখরিলের হয়েছে।’ সুলতান বাংলা ছেড়ে দিল্লী ফিরবেন, শাহজাদা বগরা খানকে নিজের খাস কামরায় আবার শেষ মুহূর্তে ডাকলেন। তিনি বগরা খানকে তার মনোভাব ব্যক্ত করলেন এভাবে; ‘হে মাহমুদ, আমি তোমার মধ্যে যোগ্যতা ও কর্তৃত্বের ভাব দেখতে পাই না পাই, তাতে কিছু যায় আসে না। শুধু সন্তানের স্নেহের বশবর্তী হয়ে এবং বাদশাহের উপযুক্ত কাজ করতে গিয়ে এই লক্ষণাবতী ও বাংলাদেশতোমার হাতে অর্পণ করলাম। তুমি নিজেই দেখেছ, এই দেশ জয় করতে কত রক্তপাত করেছি। কত মানুষের খণ্ডিত মাথা দরজায় দরজায় লটকিয়ে দিয়েছি। পরকালে যখন সৃষ্টিকর্তা আমাকে জিজ্ঞাসা করবেন, তুমিত পুত্রের অপকর্মের কথা জানতে। মদ্যপান ও কুকাজে লিপ্ত হওয়া সম্পর্কে অবহিত ছিলে, তা হলে কেন তাকে শাসনকর্তা হিসাবে নিযুক্ত করলে? তখন আমি, হে মাহমুদ! স্রষ্টার নিকট আমি কী জবাব দিব?
সম্রাট গিয়াসউদ্দিন বলবন কনিষ্ঠপুত্র বগরা খানকে নাসির উদ্দিন অর্থাৎ ধর্মরক্ষক উপাধি দান করে বাংলার শাসনকর্তা নিযুক্ত করে ১২৮২ সালে দিল্লী যাত্রা করলেন। তিনি পুত্রকে আপন জীবনের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা থেকে কতিপয় উপদেশ দান করে যান। এই উপদেশগুলো মধ্যে নিম্নরূপ দিকনির্দেশনা ছিল :
১. দিল্লীর সম্রাট আত্মীয় হোন বা অনাত্মীয় হোন, তার উপদেশ বঙ্গাধিপতির জন্য কর্তব্য স্বরুপ।
২. যদি লক্ষণাবতীর শাসক (তখন বাংলার রাজধানী ছিল লক্ষণাবতী) দিল্লীর সম্রাটের বিরাগভাজন হন, তবে দিল্লীর সম্রাট লক্ষণাবতীতে উপস্থিত হলে, তার রাজধানী ছেড়ে বহু দূরে চলে যাওয়া কর্তব্য। আবার দিল্লীর সম্রাট দিল্লীতে প্রত্যাবর্তন করলে তিনি আবার যেন সস্থানে ফিরে আসেন।
৩. রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে মধ্যমপন্থা অবলম্বন করা কর্তব্য। অত্যধিক রাজস্ব আদায় করলে, প্রজাগণ পীড়িত হয়ে বিদ্রোহী হতে পারে। নিতান্ত দয়া-পরবস হয়ে রাজস্ব আদায় করলে, সরকারের পক্ষে ক্ষতিকর হতে পারে।
৪. কর্মচারীগণকে এই পরিমাণে বেতন দেয়া উচিত, যাতে তাদের বার্ষিক ব্যয় নির্বাহ হতে পারে। ব্যয়ের জন্য অর্থের অভাবে কষ্ট না হয়।
৫. বুদ্ধিমান ও হিতাকাঙক্ষী আমত্যগণের পরামর্শ অনুসারে কাজ করবে। আদেশ দেবার সময় ভাবাবেগতাড়িত হবে না এবং স্বার্থ-সিদ্ধির জন্য ন্যায়-বহির্ভূত কাজ করবে না।
৬. সম্ভ্রান্ত ও সাধারণ জনগণের অবস্থার অনুসন্ধান করবে এবং তাদের পদ-মর্যাদা অক্ষুণ্ন রাখার চেষ্টা করবে। কোন কাজেই অসাবধান ও শিথিল হবে না।
৭. কোন ব্যক্তি যদি এই উপদেশগুলোর বিরুদ্ধে কাজ করার জন্য উপদেশ দেয় তবে, তাকে শত্রু বিবেচনা করবে, তার বাক্যে কর্ণপাত করবে না।
৮. যিনি সংসারের কাম ও লোভের অতীত হয়ে সৃষ্টিকর্তার শরণাগতহয়েছেন, এমন মহাপুরুষের আশ্রয়ে থাকা কর্তব্য, কারণ মহাপুরুষের আশ্রয় সিকান্দার বাদশাহের প্রাচীর হতেও দৃঢ়।
শাহজাদা বগরা খান পিতার কঠোর নীতিমালা দ্বারা পরিচালিত হন নাই। তথাপি তিনি ছিলেন একজন সুশাসক ও জনপ্রিয় ব্যক্তি। তিনি পিতা সুলতানের কঠোর উপদেশসমূহ সর্বদা মনে রাখতেন। বগরা খান কখনো দিল্লীর বাদশাহ হতে চাননি। জীবনের অন্তিম সময়ে পিতা সুলতান বলবন বগরা খানকে দিল্লীতে আহ্বান করলেন। তিনি পুত্রের প্রতি উপরে উপরে কঠোর মনোভাব দেখালেও পুত্রের জন্য তার ছিল সীমাহীন স্নেহ ও বাৎসল্য। তিনি বগরা খানকে দিল্লীর সিংহাসনে আসীন হওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। কিন্তু শাহজাদা বগরা খান বাংলার শ্যামল নিসর্গের গভীর প্রেমে পড়ে গিয়েছিলেন। তাই তিনি পিতার অনুরোধ সবিনয়ে প্রত্যাখান করে ফিরে এলেন বাংলায়। তাই সুলতান বলবনের মৃত্যুর পর বগরা খানের পুত্র ১৭ বৎসর বয়ষ্ক কায়কোবাদ দিল্লীর সিংহাসনে বসলেন। পুত্র যখন দিল্লীর বাদশাহ, তখন পিতা বগরা খান বাংলাদেশের শাসনকর্তা। এতে মোটেই তিনি অতৃপ্ত ছিলেন না। বাংলার মাটি ও মানুষকে ছেড়ে ভারত সাম্রাজ্যের সুলতান হওয়ার চিন্তা কখনো তিনি করতেন না। কিন্তু বাংলার শাসনকর্তা বগরা খান যখন জানতে পারলেন তাঁর পুত্র ‘মুইযউদ্দিন কায়কোবাদ’ সুলতান হয়ে ধরাকে সরা জ্ঞান করছে। আমোদ-প্রমোদ ও বিলাসিতায় গা ভাসিয়ে দিয়েছে, তখন তার কঠোরহৃদয় প্রয়াত পিতার কথা স্মরণ করতো। তিনি পুত্রকে সৎ পথে ফেরার জন্য অনেক পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি সর্বদা পত্র মারফত পুত্র কায়কোবাদকে উপদেশ দিতেন, পিতামহ সুলতান গিয়াসউদ্দিন বলবনের আদর্শ থেকে শিক্ষা গ্রহণের জন্য। কিন্তু বগরা খান তার পুত্র সুলতান কায়কোবাদের আচরণে ব্যথিত হলেন এবং বাংলা থেকে এক বিশাল সেনাবাহিনী নিয়ে দিল্লীর উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলেন। পুত্রের প্রতি অসন্তুষ্ট হয়ে এই সময় বগরা খান স্বাধীনভাবে বাংলা শাসন করতেন। তিনি বাংলার স্বাধীন সুলতান হিসাবে সুলতান নাসিরউদ্দিন মাহমুদ উপাধি ধারণ করেন।
বগরা খান সুলতান নাসিরউদ্দিন মাহমুদ শাহ হিসাবে পরিচিত হবার পরে নিজ নামে খোৎবা পাঠ ও নিজ নামে মুদ্রাপ্রচলন করেন। বগরা খান তাঁর বিশাল সেনাবাহিনী, বহুসংখ্যক হাতি ও দ্রুতগামী অশ্বসজ্জিত বাহিনী নিয়ে কেন দিল্লীর উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলেন, এ নিয়ে নানাকথা প্রচলিত হলেও তিনি নিজ পুত্র দিল্লীর বাদশাহ কায়কোবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চাননি। তিনি পুত্রের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন এবং নানা উপদেশ দিয়ে সৎ পথে ফিরিয়ে আনার জন্যই দিল্লীর উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। এদিকে বাদশাহ্ কায়কোবাদ স্বসৈন্যে পিতার অগ্রযাত্রার খবর পেয়ে বিশেষ চঞ্চল হয়ে পড়েন। প্রথমে স্থির করেন তিনি একাকী তার স্নেহবৎসল পিতার সান্নিধ্যে উপস্থিত হবেন। কিন্তু দরবারের সভাসদ ও মন্ত্রীগণ বাদশাহের এই ইচ্ছারবিরুদ্ধে মত প্রকাশ করলেন। তারা বোঝালেন একাকী পিতার সঙ্গে সাক্ষাৎ করা মোটেই নিরাপদ নয়। বাধ্য হয়ে বাদশাহ্ কায়কোবাদও বিপুল সৈন্যসজ্জিত হয়ে পিতার উদ্দেশ্যে রাজধানী থেকে বের হলেন। অযোধ্যার নিকট সরযূ নদী’র দুই পাড়ে দুই সেনাবাহিনী মুখোমুখি অবস্থান নিল। এদিকে বগরা খান পুত্রের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য ব্যাকুল আর অন্যদিকে বাদশাহ্ কায়কোবাদ তার স্নেহবৎসল পিতার পদতলে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য অস্থির। কিন্তু দুই স্বাধীন সুলতানের সেনাবাহিনী, পাত্র-মিত্র এবং কুটনীতিকগণের মতামত, রাষ্ট্রীয় নিয়মনীতির কারণে ক্রমাগত সময়ক্ষেপণ হতে থাকলো। বাদশাহ্ কায়কোবাদের প্রধান উজির ‘মালিক নিয়াজ’ নানা রকম শাহী কানুনের কথা উত্থাপন করলেন, যেমন পিতা যেখানে নিজে পৃথক খোৎবা ও মুদ্রার মালিক আবার অন্যদিকে দিল্লীর বাদশাহীর বিরাট মর্যাদা, সম্মান ও জাঁকজমক বিদ্যমান। এই অবস্থায় বাদশাহ্ তার সাম্রাজ্যের যেখানেই গমণ করুন না কেন, সর্বত্রই রাজা-প্রজা সকলেই বাদশাহের খেদমতে এসে ভূমি চুম্বন করবে। না হলে বাদশাহ্ হিসেবে মানুষের সমীহ ও শ্রদ্ধা বিনষ্ট হতে পারে। প্রায় তিনদিন উভয়পক্ষের বিশিষ্ট ব্যক্তিগণ পিতা ও পুত্রের মধ্যে সাক্ষাতের জন্য শর্তসমূহে স্থির হলেন যে, বগরা খান দিল্লীর বাদশাহের প্রতি যথাযোগ্য সম্মান প্রদর্শন করবেন, সাক্ষাতের জন্য বগরা খান নদী অতিক্রম করে বাদশাহ্ শিবিরে আগমন করবেন, পুত্র সিংহাসনে উপবিষ্ট থাকবেন এবং পিতা হস্ত চুম্বনের প্রথা পালন করবেন। বগরা খান বললেন- ‘পুত্রের খেদমত করতে আমার মনে কোন দ্বিধা-দ্বন্দ্ব নাই। সে আমার পুত্র হলেও, দিল্লীতে সে আমার পিতার সিংহাসনে উপবিষ্ট হয়েছে এবং দিল্লীর তখতের মর্যাদা সর্বাপেক্ষা অধিক। পৃথিবীর অন্যান্য বাদশাহ্গণও যথার্থই ইহার প্রতি সম্মান দেখিয়ে থাকেন। আমি যদিও সুলতান বলবনের পুত্র এবং এই সিংহাসেনের প্রতি আইনগত অধিকার রয়েছে। তবু ইহা যখন আমার পুত্র লাভ করেছে তখন আমি ইহাকে নিজের বলে মনে করি। আমি যদি দিল্লীর বাদশাহের প্রতি প্রাপ্য সম্মান প্রদর্শন না করি, আমার পুত্রের খেদমতের জন্য হাত না বাড়াই ও তার সম্মুখে না দাঁড়াই; তা হলে দিল্লীর অসম্মান হবে। এছাড়াও আমার পিতা আমাকে উপদেশ দিয়েছেন যে, আমি যেন দিল্লীর বাদশাহের আনুগত্য স্বীকার এবং তার প্রতি যথাযথ সম্মান দেখাতে দ্বিধা না করি।