বগুড়ার ইতিহাস
বগুড়ার বিখ্যাত চিকিৎসক ও সমাজসেবক মরহুম ডাঃ ইয়াছিন সাহেবের জীবন চরিত্র
মরহুম ডাঃ ইয়াছিন সাহেব ১৭ মে ১৯২২ খ্রিষ্টাব্দে বগুড়া জেলার সদর উপজেলাধীন লতিফপুর মহল্লায় জন্মগ্রহণ করেন। তাহাঁর পিতা মরহুম শাহ মাহমুদ আব্বাস। তিনি তাহাঁর পিতামাতার সর্বকনিষ্ঠ সন্তান ছিলেন।
তিনি জহুরা ইয়াসমিন-এর সহিত বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।
শিক্ষাজীবনঃমরহুম ইয়াছিন সাহেব বগুড়া জিলা স্কুলে ভর্তির মাধ্যমে তিনি তাহাঁর প্রাথমিক শিক্ষা শুরু করেন। তিনি ১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দে এই প্রতিষ্ঠান হতে কৃতিত্বের সহিত ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন। তারপর তিনি ঢাকা কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণীতে ভর্তি হন। তিনি ১৯৪১ খ্রিষ্টাব্দে হতে এই প্রতিষ্ঠান হতে প্রথম বিভাগে উচ্চ মাধ্যমিক (বিজ্ঞান) পাশ করেন। অতঃপর তিনি ঢাকা ম্যাডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন এবং ১৯৪৬ খ্রিষ্টাব্দে এম.বি.বি.এস ডিগ্রী লাভ করেন।
কর্মজীবনঃমরহুম ইয়াছিন সাহেব এম.বি.বি.এস ডিগ্রী লাভ করার পর তিনি বগুড়ায় ফিরে আসেন এবং পেশা হিসেবে ‘চিকিৎসা প্রদান’কে গ্রহণ করেন। অতি অল্প সময়ের মধ্য তিনি একজন সুচিকিৎসক হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। তিনি স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তান, ন্যাশনাল ব্যাংক সহ বগুড়া জেলার বেশ কয়েকটি ব্যাংকের মেডিক্যাল অফিসার হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। তাছাড়া তিনি টিবি এসোসিয়েশনের আজীবন সদস্য হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন।
সমাজসেবামুলক কাজে অংশগ্রহণঃমরহুম ইয়াছিন সাহেব চিকিৎসা পেশার সাথে সাথে তিনি নিজেকে বহুবিদ সমাজসেবা মুলক কর্মকান্ডে আত্মনিয়োগ করেন। তিনি লতিফপুর মহল্লার অবহেলিত প্রতিবন্ধী ছেলে-মেয়েদের জন্য স্থাপন করেন “মুখ ও বধির বিদ্যালয়” যা সর্বসাধারণের নিকট “বোবা স্কুল” নামে সুপরিচিত। ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠানটি বাক প্রতিবন্ধীদের জন্য বাংলাদেশে একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে মর্যাদা লাভ করেছে। তিনি এই প্রতিষ্ঠানের সম্পাদক হিসেবে দীঘদিন নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করেন।
এছাড়া ডাঃ ইয়াছিন সাহেব লতিফপুর ফয়জুল্লাহ উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি এই উচ্চ বিদ্যালয়ের জন্য তিন বিঘা জমি দান করেন। স্থানীয় মিউনিসিপ্যাল মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় বিশেষ ভুমিকা পালন করেন।
অন্যান্যঃ উপরোক্ত প্রতিষ্ঠানসমুহ প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি তিনি নিন্মোক্ত প্রতিষ্ঠানের সহিত যুক্ত থেকে নিজেকে সমাজসেবা মুলক কাজে নিয়োজিত রাখেন। ১. তিনি বগুড়া সরকারী আজিজুল হক কলেজ এবং সরকারী মুজিবুর রহমান মহিলা কলেজের গভর্নিং বডির মেম্বার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।২. তিনি বগুড়া সমবায় জমি বন্ধকী ব্যাংকের সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।৩. বগুড়া জেলার সমবায় ইউনিয়নের এবং বগুড়া মেডিক্যাল কো-অপারেটিভ সোসাইটির সহ-সভাপতি হিসেবে দীঘদিন দায়িত্ব পালন করেন।৪. তিনি ১৯৪৩ খ্রিষ্টাব্দে মানিকগঞ্জে বন্যায় দুঃস্থদের মধ্য আর্থিক সাহায্য এবং সেবাদানের মাধ্যমে ভূয়ষি প্রশংসা অর্জন করেন। ৫. তিনি ১০ বৎসরকাল স্কাউট সার্জন এবং পরবর্তী সময়ে স্কাউট আন্দোলনের সহকারী কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।৬. তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য ছিলেন।৭. বগুড়া ইয়াকুবিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সেক্রেটারি হিসেবে অত্যন্ত যোগ্যতার সাথে দায়িত্ব পালন করেন।
সন্মাননাঃ সমাজসেবা মুলক বিভিন্ন কর্মকান্ডে অংশগ্রহণের জন্য তৎকালীন পাকিস্থান সরকার তাহাঁকে “তঘমা-ই-কায়েদে আজম”-সন্মাননায় ভূষিত করেন।
সাদাসিধে জীবন যাপন করে তিনি সততা এবং ন্যায়পরায়ণতার মহান আদর্শ স্থাপন করে করে গেছেন, তা যুগ যুগ ধরে মানবকল্যানের পথ প্রদর্শক হিসেবে কাজ করবে। মানবকল্যানের এই পথ প্রদর্শক ২৩ আগস্ট ১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দে মৃত্যুবরন করেন।
মরহুম ডাঃ ইয়াছিন সাহেব-এর জৈষ্ট্য পুত্র মোঃ জাকির হাসান (ডাক্তার,অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসরত) দ্বিতীয় পুত্র মোঃ মাহমুদ হাসান (কাজাকিস্তানের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন), তৃতীয় পুত্র মোঃ সাইদ হাসান (ব্যাবসায়ী), চতুর্থ পুত্র মোঃ নাহিদ হাসান (ব্যাবসায়ী)।জৈষ্ট্য কন্যা মোছাঃ নাসরিন সুলতানা এবং কনিষ্ঠ কন্যা মোছাঃ জেসমিন সুলতানা (সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার, সোনালী ব্যাংক)।
তথ্যসংগ্রহেঃ গোলাম জাকারিয়া কনক