বগুড়ার ইতিহাস
হযরত শাহ সুফি ফতেহ আলী মাজার সম্পর্কিত ইতিহাস
মাজারের অবস্থানঃবগুড়া শহরের প্রাণকেন্দ্র সাথমাথা হতে আনুমানিক ২৫০ মিটার পূর্বে, বগুড়ার শহরের সাথে পূর্ব বগুড়ার সংযোগ রক্ষাকারী প্রধান সেতু (ফতেহ আলী) সংলগ্ন স্থানে শাহ সুফি ফতেহ আলী (রঃ) মাজার অবস্থিত।
হযরত শাহ সুফি ফতেহ আলীর সংক্ষিপ্ত পরিচিতিঃহিন্দুস্থানের অন্তর্গত “আস্কালা” নামক স্থানে মোহাম্মদ হোসেন নামক একজন সাধক বাস করিতেন। তাহাঁর দ্বিতীয় পত্নী বিবি হামজার গর্ভে ১০৯০ বঙ্গাব্দে হযরত শাহ সুফি ফতেহ আলী (রঃ) জন্মগ্রহন করেন। অবাল্য তিনিও সাধক ছিলেন। শৈশবে তাহাঁকে বিদ্যাশিক্ষা অর্জনের জন্য ” ছামন্দর” নামক স্থানে পাঠানো হয়। সেথা হতে প্রাথমিক বিদ্যাশিক্ষা অর্জন শেষে তিনি “শাহাবাল” নামক স্থানে গমন করেন। তথায় মজনু শাহ নামক এক কামেল তত্ত্বজ্ঞ ফকিরের শিষ্যত্ত্ব গ্রহণ করেন। সেথায় তিনি নয় বছর কঠোর সাধনার পর তিনি উচ্চ আধ্যাত্মিক জ্ঞান লাভ করেন।
মজনু শাহের মৃত্যুর পর তিনি যথাক্রমে মঈন উদ্দিন শাহ্ ও কাবুল নিবাসী মিসকিন শাহের সান্নিধ্য লাভ করেন। অতঃপর,গৃহে প্রত্যাবর্তন করিবার পর তিনি আল্লাহ্পাকের জেকেরে মশগুল হয়ে পড়েন এবং সংসার জীবনের প্রতি অনাসক্ত ভাব প্রদর্শন করেন। তাহাঁর পিতা-মাতা তাহাঁকে সংসারী হতে পীড়াপীড়ি করতে থাকেন। কিন্তু হযরত শাহ সুফি ফতেহ আলী তাহাতে সন্মত না হওয়ায়, অবশেষে পিতা কর্তৃক তিরস্কৃত ও গৃহ হইতে বহিষ্কৃত হন।
গৃহ ত্যাগের পর, তিনি সুদূর চীনদেশে গমণ করেন। তথায় আঠারো বৎসর অবস্থান করিবার পর, পুনরায় আজমীর গমণ করেন। পথে অর্থাভাব দেখা দিলে তিনি গোপাল সাহা নামক, জনৈক সওদাগরের অধীনে মাসিক ছয় টাকা বেতনে কিছুকাল ঘোরার সহিস রুপে নিযুক্ত থাকেন।
পরবর্তী সময়ে আজমীর শরীফ হতে তাহাঁকে বগজ শিরস্থানের নারী সাধিকা বালিয়ার সান্নিধ্য লাভ করেন। সেথায় একুশ বৎসর অবস্থান করিবার পর, তিনি ১১৬৫ বঙ্গাব্দে উত্তরবঙ্গের বর্তমান বগুড়া জেলার করতোয়া নদী তটস্থ, বগুড়া শহরের ফতেহ আলী ঘাটে (বর্তমানে ফতেহ আলী ব্রিজ সংলগ্ন) আস্তানা করেন এবং ইসলাম প্রচারে মনোনিবেশ করেন। এখানে খাকী শাহ নামক একজন ফকির তাহাঁর কার্যে শরিক হন। এইভাবে আঠার বৎসর বয়োক্রম কালে করতোয়া নদীর তীরে দেহত্যাগ করেন। অদ্যাপি তথায় তাহাঁর মাজার শরীফ চতুর্দিকে প্রাচীর বেষ্টিত অবস্থায়, ফতেহ আলী দরগা রুপে পরিচিতি লাভ করেছে। প্রত্যক বৎসর ফাল্গুন মাসে মাজার শরীফ’কে কেন্দ্র করে সাড়ম্বরে বিরাট ওরশ অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।
হযরত শাহ সুফি ফতেহ আলীর বৈশিষ্ট্যঃপীর ফতেহ আলী অত্যন্ত সরল ও সহজ স্বভাবের লোক ছিলেন। উর্দু ও ফার্সি ভাষা তাহাঁর দখলে ছিল। শোনা যায়, ছোট ছোট ছেলে মেয়ে তাহাঁর এতই প্রিয় ছিল যে, পথ চলিবার সময় তিনি যে কম্বল ব্যাবহার করিতেন তাহাঁর উভয় প্রান্ত ঝুলিয়া থাকিত। শিশুরা সানন্দে উহার উপর বসিয়া থাকিত ; তিনি ঐ অবস্থায় হেলিয়া দুলিয়া পথ চলিতেন। আরও শোনা যায়, পথ চলিবার সময় কাহারো দোকান হইতে স্ব-ইচ্ছাই কিছু উঠাইয়া নিলে; তাহাঁর অধিক বিক্রয় হইত। অপরদিকে ইহাতে কেহ বিরক্ত প্রকাশ করিলে তাহার ক্ষতির পরিসীমা থাকিত না। আরও প্রকাশ যে, তিনি রান্নার সময় উনুনের ভিতর জ্বালানী কাঠের পরিবর্তে নিজের পা ঢুকাইয়া দিতেন। ইহাতেই রন্ধন কার্য সম্পন্ন হইত। আরও প্রকাশ যে, তিনি সারাদিন যাহা নজরানা পাইতেন তাহাঁ সমস্তই ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের মাঝে বিলাইয়া দিতেন।
তাহাঁরই নামানুসারে বগুড়া নওয়াব বাজারের নাম হইতে পরবর্তী সময়ে “ফতেহ আলী” নামে নামকরণ করা হয়।
তথ্যসংগ্রহেঃ Golam Zakaria Kanak
স্থির চিত্র সংগ্রহঃ Adhar Alo
তথ্যসুত্রঃবগুড়ার ইতিহাস-শ্রীযুক্ত প্রভাস চন্দ্র সেন।বগুড়ার ইতিকাহিনী- কাজী মোহাম্মদ মিছের।