বগুড়ার ইতিহাস
বগুড়া জেলার শহীদ মুক্তিযোদ্ধা শাহ আব্দুল মোমিন হিটলু সাহেবের জীবন চরিত্র
শহীদ মুক্তিযোদ্ধা শাহ আব্দুল মোমিন হিটলু….. ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দে বগুড়া জেলা সদরের জলেশ্বরীতলায় জন্মগ্রহন করেন। তাহার পিতা শাহ্ মোজাম্মেল হক পেশায় একজন ঠিকাদার এবং মাতা মমতা হক গৃহিনী ছিলেন। তিন ভাই এবং চার বোনের মধ্য তাহাঁর অবস্থান দ্বিতীয়।
বগুড়া জিলা স্কুলে ভর্তির মাধ্যমে তিনি তাহাঁর প্রাথমিক শিক্ষা শুরু করেন। বগুড়া জিলা স্কুল থেকে মাধ্যমিক পরিক্ষায় সফলতার সহিত কৃতকার্য হয়ে রাজশাহী ক্যাডেট কলেজে ভর্তি হন। রাজশাহী ক্যাডেট কলেজের দ্বাদশ শ্রেণী (নম্বর-৩৫, কাসিম হাউজ) থাকাকালীন সময়ে দেশের রাজনৈতিক অবস্থা খারাপ দেখে তিনি বগুড়ায় চলে আসেন।
মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণঃ১৯৭১ এর ২৫ মার্চ মধ্যরাতে পাক হানাদার বাহিনী ঢাকায় ‘অপারেশন সার্চ লাইটের’ নামে হত্যাযজ্ঞ শুরু করে। রংপুর থেকে পাক সেনা বাহিনী বগুড়ার দিকে অগ্রসরমান হয়েছে এই খবর শহরে খুব দ্রুত ছড়িয়ে পরে। এ খবরে বগুড়ায় ছড়িয়ে পড়ার পর কোনরকম অস্ত্র প্রশিক্ষণ ছাড়াই ৭১’র ২৫ মার্চ প্রায় মধ্য রাত থেকেই হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে বন্দুক, লাঠি নিয়ে ছুটে আসে অনেক তরুণ। তাহাঁর মধ্য শাহ আব্দুল মোমিন হিটলু একজন।
স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা “রাত ১২টার দিকে যখন ডিসি অফিস এর সামনে গাছের গুড়ি ফেলে রাস্তা বেরিকেড সৃষ্টিতে তৎপর তখন শাহ্ মোমিনুল হক হিটলু প্রাচির টপকিয়ে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে যোগ দেন৷ স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা সকলেই তাহাঁর বাবার বন্দুক চাইলে, সে তৎক্ষনাত তাহাঁর বাবার দুটি গুলিসহ বন্দুক নিয়ে উপস্থিত হন।
২৬ মার্চ ভোরে হিটলুসহ আরও কয়জন মুক্তিযোদ্ধা অবস্থান নিয়েছিলেন বড়গোলার ইউনাইটেড ব্যাংকের ছাদের ওপর পাকিস্তানীদের প্রতিহত করার জন্য। পাক সেনারা যখন বগুড়া শহরের ২নং রেল ঘুমটির কাছাকাছি এসে গেলে, আজাদ রেস্ট হাউজের উপর থেকে দারোগা নিজাম উদ্দিন, দারোগা নুরুল ইসলাম ও তাদের সহযোগীদের ৩০৩ রাইফেল গর্জে ওঠে। পাক সেনারা হকচকিয়ে যায়। এমন সময় ইউনাইটেড ব্যাংকের ছাদের ওপর থেকেও হিটলু, টিটু, ছুনু ও দোলনের বন্দুকও গর্জে ওঠে। হানাদারেরা দিশেহারা হয়ে পরে। এক সময় হানাদাররা এই চার জনের অবস্থান টের পায়। ছাদে অবস্থানরত মুক্তিযোদ্ধাদের লক্ষ করে এলোপাতারি গুলি ছুড়তে থাকলে টিটু গুলিবিদ্ধ হয়। সেখানেই লুটিয়ে পরে টিটু। এরপর হানাদারেরা ক্রমাগত গুলি করতে করতে ইউনাইটেড ব্যাংক ঘিরে ফেলে।
মুক্তিযোদ্ধাদের যৎসামান্য গুলি ফুরিয়ে গেলে পাক হানাদারেরা হিটলু, ছনু এবং দোলন’কে আটক করে। হিটলু একটি ডিবিবিএল গানসহ ধরা পড়েন। পাক বাহিনী এই তিন প্রতিরোধ যোদ্ধাকে ধরে মহিলা কলেজের নিকট ওয়ারলেস সেন্টারে নিয়ে গিয়ে বেয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে ও পরে গুলি করে হত্যা করে। ২৬ মার্চ ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে মাত্র ১৭ বছর বয়সে তিনি শহীদ হন।
মুক্তিযুদ্ধে তাহাঁর এই অসামান্য আত্মত্যাগের প্রতি সন্মানপ্রদর্শন সরুপ বগুড়া জেলা সদরের একটি প্রধান রাস্তা “শহীদ হিটলু সড়ক” নামে নামকরণ করা হয়।
বগুড়ার ইতিকাহিনী এই বীর মুক্তিযোদ্ধাকে শ্রদ্ধাভরে স্মরন করেছে এবং তাহাঁর আত্মার মাগফেরাত কামনা করছে।
তথ্যসুত্রঃ – তৌফিক হাসান ময়না (বগুড়ায় প্রথম প্রতিরোধ যুদ্ধ), – মাহফুজুর রহমান দুলু’র সাহেবের স্মৃতিচারন (আজ সেই ২৬শে মার্চ),
– সেলিনা শিউলী (বগুড়া জেলার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস)।