বগুড়ার ইতিহাস
বগুড়া জেলার ঐতিহ্যবাহী নবাব পরিবার সম্পর্কিত ইতিহাস
সৈয়দ নজির উদ্দিনের স্ত্রী সৈয়দানী হুরী বিবি (১১৫৯ হিজরিতে) শেলবর্ষ জমিদারীর “নয় আনা” অংশ প্রাপ্ত হয়ে কুন্দগ্রামে বসবাস করেন। নজির উদ্দিনের পরবর্তী বংশধরদের মধ্য সৈয়দ আতা হোসেন অত্যন্ত ধর্মপরায়ন এবং দানশীল ছিলেন। তৎকালীন সময়ে তিনি কুন্দগ্রামে বৃহৎ বৃহৎ দিঘী, পুষ্করিণী,শাহী মসজিদ নির্মান করেন। সৈয়দ আতা হোসেনের মৃত্যুর পর তাহার পুত্র সৈয়দ আকবর হোসেন উক্ত সম্পত্তির মালিকানা প্রাপ্ত হন। সৈয়দ আকবর হোসেনের একমাত্র কন্যা লতিফুন্নেছা উক্ত সম্পত্তির মালিকানা প্রাপ্ত হলে,তিনি রাস্তাঘাট ও মসজিদ সহ নানাবিধ সৎকর্ম করেন। তাছারা তিনি বগুড়া শহরের পীর ফতেহ আলীর মাজার সংলগ্ন করতোয়া বাধা ঘাট (বর্তমানে ফতেহ আলী ব্রিজ নির্মিত হয়েছে) এবং কুন্দগ্রামে একটি মুসাফির খানা স্থাপন করেন। তাহার মৃত্যুর পর সমুদয় সম্পত্তি দৌহিএ মীর ছরওয়ার আলীর করতলগত হয়।
মীর ছরওয়ার আলী মৃত্যুকালে তাহার অপর কোন ওয়ারিশ না থাকায় সমস্ত সম্পত্তি তাহাঁর ভগ্নিদ্বয় জোবেদাতন্নেছা খাতুন ও তহুরুন্নেছা খাতুন প্রাপ্ত হন।জোবেদাতন্নেছা খাতুন সৈয়দ হামেদ আলী চৌধুরী (বিহার নিবাসী)-এর সহিত বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তহুরুন্নেছা খাতুন টাঙাইল দিলদুয়ার নিবাসী সম্ভ্রান্ত জমিদার সৈয়দ আব্দুস সুবাহান চৌধুরীর সহিত বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তহুরুন্নেছা খাতুন এবং সৈয়দ আব্দুস সুবাহান চৌধুরী কুন্দগ্রামে বসবাস করেন এবং একমাত্র কন্যা সন্তান (আলতাফুন্নেছা) প্রাপ্ত হন। অপরদিকে জোবেদাতুন্নেছা খাতুন নিঃসন্তান হওয়ায় তাহাঁর সমুদয় সম্পত্তি আলতাফুন্নেছা প্রাপ্ত হন।
সৈয়দা আলতাফুন্নেছা চৌধুরী একাধারে চার জমিদারের মালিকানা পেয়েছিলেন। প্রথমত পিতা মরহুম আব্দুস সুবাহান চৌধুরীর পৈত্রিক মালিকানা, দ্বিতীয়ত মাতা মরহুমা তহরুন্নেছা চৌধুরী বিপুল সম্পত্তি, তৃতীয়ত খালা জোবেদাতুন্নেছা চৌধুরী এবং মামা ছাওয়ার আলী চৌধুরীর সম্পত্তি। এখানে উল্লেখ্য যে খালা জোবেদাতুন্নেছা চৌধুরী এবং মামা ছাওয়ার আলী চৌধুরী কোন সন্তান না থাকায় তিনি এই মালিকানা প্রাপ্ত হন। সৈয়দা আলতাফুন্নেছা চৌধুরী টাঙ্গাইল ধনবাড়ির জমিদার নবাব বাহাদুর নওয়াব আলী চৌধুরীর সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। বিবাহের পর স্বামীসহ পিতার গৃহেই অবস্থান করতেন।
১৮৬৮ খ্রিষ্টাব্দে সৈয়দা আলতাফুন্নেছা চৌধুরী এবং নওয়াব আলী চৌধুরীর ঘর আলো করে একমাত্র পুএ সন্তান জন্ম নেয়। তাদের উভয়ের নামের সঙ্গে মিল রেখে পুত্রের নাম রাখেন আলতাফ আলী চৌধুরী।
পিতা নবাব আব্দুস সুবাহান চৌধুরী, স্বামী ও শিশুপুত্র আলতাফ আলী চৌধুরীকে রেখে সৈয়দা আলতাফুন্নেছা চৌধুরী অকালে মৃত্যু বরন করেন। নওয়াব আলী চৌধুরী একমাত্র পুত্র সন্তানকে নিয়ে বিলেত গমন করেন। নবাব আব্দুস সুবাহান চৌধুরী স্ত্রী এবং কন্যাকে হারিয়ে বিমর্ষ হয়ে পড়েন এবং তিনি তাহার সমস্ত সম্পত্তি ওয়াকফ ষ্টেটে দান করেন। তিনি আলতাফ আলী চৌধুরীকে উক্ত ওয়াকফ ষ্টেটের মতওয়াল্লী নিযুক্ত করেন।
আলতাফ আলী চৌধুরী বিলেত থেকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে বগুড়ায় ফিরে আসেন এবং ওয়াকফ ষ্টেটের প্রথম মতওয়াল্লী হয়ে দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করেন।তিনি পৌরসভার চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্বরত অবস্থায় বর্তমান নবাব বাড়ি প্রস্তুত করেন। তাহাঁর মৃত্যুর পরবর্তী সময়ে তাহাঁর সন্তানগন বিভিন্নস্থানে বসবাস করায় নবাব বাড়িটি দিঘদিন অব্যাবহারিত অবস্থায় থাকে।
১৯৯০ খ্রিষ্টাব্দে ওয়ারিসগন বাড়িটি সকল শ্রেণীর মানুষের চিত্তবিনোদনের জন্য উন্মুক্ত করেন এবং বাড়িটিকে প্যালেস মিউজিয়াম হিসেবে নামকরণ করা হয়। ইহাতে অনেক চিত্তবিনোদনের উপকরণ স্থাপন করা হয়। খুব অল্প সময়ে এই প্যালেস মিউজিয়ামটি ভ্রমনপিপাসুদের অন্তরে স্থান দখল করে।
কিন্তু বর্তমানে উক্ত প্যালেস মিউজিয়ামটি বিক্রয় করায় উক্ত স্থানে সকলের প্রবেশাধিকার বন্ধ করা হয়। কেটে ফেলা হয় শতবর্ষী অনেক বৃক্ষ। চিত্রবিনোদনের স্থানে নির্মান হবে বহুতল ভবন।
লেখকঃ গোলাম জাকারিয়া কনক
তথ্যসুত্র: কাজী মোহাম্মাদ মিছের-বগুড়া ইতিকাহিনী।শ্রীযুক্ত প্রভাস চন্দ্র সেন-বগুড়ার ইতিহাস।