বগুড়ার ইতিহাস

বাবা আদম (দ্বাদশ শতাব্দীর সাধক ও ধর্ম প্রচারক)-এর জীবন চরিত



বাবা আদম পবিত্র মক্কা নগরীর অধিবাসী ছিলেন।সুলতান বলখী মাহী সাওয়ার কর্তৃক মহাস্থান অধীকৃত হইবার কয়েক যুগ পর ঢাকার বিক্রমপুরে বৌদ্ধ ও মুসলিম বিদ্বেষী বল্লাল সেন নামক এক রাজার আবির্ভাব হয়। তিনি হিন্দু ধর্মের মধ্যে শ্রেণী বিভাগ (কুল-প্রথা) প্রবর্তন এবং বৌদ্ধদের উপর অত্যাচার শুরু করেন।


সুলতান বলখী মাহী সাওয়ারের প্রভাব বিস্তৃতিরর ফলে, যাহারা ইসলাম ধর্মে দিক্ষীত হইতেছিলেন ও বল্লাল সেন রাজার অধীনতা বা নাগপাশ ছিন্ন করিয়া সনাতন ইসলামের সাম্য মন্ত্রে আশ্রয় লইতেছিলেনন, তিনি তাহাঁদের উপরও শালীনতাহীন পাশবিকতা শুরু করিয়া দেন। সেই সময় বাবা আদম একদল অনুচর সহ পশ্চিম হতে এদেশে আগমন করিয়া ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশের বর্তমান বগুড়া জেলার আদমদিঘী উপজেলায় এসে প্রথম বসতি স্থাপন করেন।


বাবা আদম উক্ত স্থানে আসিয়া ছাউনি ফেলিলে জলকষ্ট নিবারনের লক্ষ্যে তিনি একটি বিরাট দিঘী খনন করেন। উক্ত দিঘীকে কেন্দ্র করে উক্ত এলাকার পূর্ববর্তী নাম পরিবর্তীত হয়ে “আদমদিঘী” হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। (এখানে উল্লেখ্য যে, আদমদিঘী”র পূর্ববর্তী নাম কি ছিল তা জানা যায় নাই।)


এতদঞ্চলে অভিজ্ঞতা অর্জনের উদ্দেশ্যে কিছুদিন অবস্থান করতঃ কতিপয় শিষ্যকে রাখিয়া তিনি রাজা বল্লাল সেনের খোজে বাহির হন। যে কয়েকজন শিষ্য ইসলাম প্রচারাকার্যে আদমদিঘীতে অবস্থান তন্মধ্যে মিয়া সাহেব, পাচপীর, দেওয়ান সেনের রাজবাড়ি ছিল। বাবা আদম আদমদিঘী হতে রওয়ানা হয়ে কিছুদূর গমন করতঃ ঢাকা জেলার রামপালে ছাউনি গাড়েন।


এই সময় চিল কর্তৃক এক টুকরা গো-মাংস রাজবাড়ির অন্দর মহলে নিক্ষিপ্ত হয়। ইহাতে স্বীয় রাজ্যের মধ্যে গোবধ জনিত পাপ থেকে রক্ষার্থে রাজা বল্লাল সেন বাবা আদমের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করেন। প্রায় পক্ষকাল বিপুল বিক্রমে যুদ্ধ করিয়া যখন রাজ সৈন্য জয়ী হতে পারল না, তখন রাজা স্বয়ং অবতরণপূর্বক তাহাঁকে উপর্যুপরি আক্রমণ করেন। এই সময়, বাবা আদম (রাঃ)-এর অনুচরগনও রাজা বল্লাল সেনকে উপর্যুপরি আক্রমণ করায় তিনি যুদ্ধক্ষেত্র হইতে রাজবাড়িতে পলায়ন করেন।


বাবা আদম পুনরায় বেশ কয়েকজন গাজী সহ পুনরায় রাজ সৈন্যকে আক্রমণ করিলেন। যুদ্ধে বেশ কয়েকজন রাজ সৈন্য নিহত হইলে, রাজা বল্লাল সেন অনুধাবন করিলেন যুদ্ধে তিনি পরাজিত হইলে তাহাঁর পরিবারবর্গের সম্ভ্রম রক্ষা করিতে পারিবেন না। তাই তিনি যুদ্ধ যাত্রার প্রাক্কালে অন্দর মহলে চিতা প্রজ্জ্বলিত করতঃ স্বীয় পরিবারবর্গকে আদেশ দিলেন যে, তাহাঁরা যেন রাজার পরাজয়ের সংবাদে জলন্ত অগ্নিতে প্রান বিসর্জন করেন।


যাহাতে এই সংবাদ যথাসময়ে লাভ করিতে পারেন, তৎজন্য এক জোড়া সংবাদবাহী পারাবত সাথে লুকাইয়া লইলেন। যুদ্ধে রাজা বল্লাল সেন জয়ী হইলেন। অধিকাংশ মুসলমান শহীদ হলেন, বাবা আদম তখন নামাজে আদায়রত অবস্থায় ছিলেন। নামাজে আদায়রত বাবা আদম অবস্থায় রাজা বল্লাল সেন কর্তৃক শহীদ হন।
রাজা বল্লাল সেন, রাজবাড়ি ফিরিবার পূর্বে বস্ত্রাদি খুলিয়া পুকুরে গোছল করিতে লাগিলেন। এই সুযোগে বস্ত্রা অভ্যন্তর হতে পারাবত যুগল মুক্ত হয়ে রাজধানীতে ফিরে আসিলে, রাজার পরিবারবর্গ ধারনা পোষন করেন যে, রাজার পরাজয় ঘটিয়াছে। তাই প্রজ্জ্বলিত চিতায় মহিলাগন আত্ম বিসর্জন করেন।


রাজা বল্লাল সেন অতি স্বত্তর রাজধানীতে পৌছাইয়া দেখিলেন যে, সকলেই পুড়িয়া ভস্মীভুত হয়ে গিয়েছে। ইহাতে রাজা মর্মাহত হয়ে নিজেও অগ্নীদগ্ধ হয়ে মৃত্যুমুখে পতিত হইলেন।
চলমান……
তথ্যসুত্র:

১. বগুড়া ইতিহাস – শ্রী প্রভাস চন্দ্র সেন

২. বগুড়া ইতিকাহিনী- কাজি মোহাম্মদ মিছের ।

এই বিভাগের অন্য খবর

Back to top button