বগুড়া সদর উপজেলার প্রাক্তন মেজর এ টি এম হামিদুল হোসেন তারেক বীরবিক্রম এর জীবন চরিত

মেজর বীর বিক্রম এ টি এম হামিদুল হোসেন তারেক ২২ ফেব্রুয়ারি ১৯৫৫ খ্রিষ্টাব্দে বগুড়া জেলার সদর উপজেলায় জন্ম গ্রহন করেন। তাঁহার পিতা মরহুম আবদুল আজিজ এবং মাতা মরহুম মনোয়ারা হামিদ।
কর্মজীবনঃএ টি এম হামিদুল হোসেন ১৯৭১ সালে শিক্ষার্থী ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ঝাঁপিয়ে পড়েন যুদ্ধে। ভারতে প্রশিক্ষণ নিয়ে যুদ্ধ করেন ৭ নম্বর সেক্টরের তপন সাব-সেক্টরে। ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। ১৯৭৫ সালে কমিশন্ড লাভ করেন। ১৯৮৯ সালে তাঁকে মেজর হিসেবে অকালীন অবসর দেওয়া হয়।
মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকাঃ১৯৭১ সালের ২২ নভেম্বর দিনাজপুর জেলার ফুলবাড়ীতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রতিরক্ষা অবস্থান রেকি করার পর যুদ্ধ-পরিকল্পনা তৈরি হলো। মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনী যৌথভাবে সেখানে আক্রমণ করবে। সিদ্ধান্ত হলো, প্রথম আক্রমণের সম্মুখদল হিসেবে থাকবে মিত্রবাহিনীর দুটি দল।
এই দুই দলের মধ্যে এ টি এম হামিদুল হোসেন তাঁর সহযোদ্ধাদের নিয়ে থাকবেন। তিনি মুক্তিবাহিনীর নেতৃত্ব দেবেন। পেছনে থাকবে মিত্রবাহিনীর অপর দুটি দল। সকাল থেকে শুরু হলো যুদ্ধের প্রস্তুতি। রাত ৯-১০টার মধ্যে মধ্যেই সবাই তৈরি হলেন। আক্রমণের জন্য যাত্রার নির্ধারিত সময় রাত ১১টা। এফইউপিতে (ফর্মি আপ প্লেস) পৌঁছার সময় রাত সাড়ে চারটা। আক্রমণের সময় ভোর সাড়ে পাঁচটা। শীতের অন্ধকার রাত। চারদিক নিস্তব্ধ। মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্রবাহিনীর সেনারা অ্যাসেম্বলি এরিয়ায় সমবেত হলেন নির্ধারিত সময়েই। তখন রাত আনুমানিক তিনটা। সেখানে কিছুক্ষণ যাত্রাবিরতি দিয়ে রওনা হলেন এফইউপির উদ্দেশে। তাঁরা খুব সতর্কভাবে এগোতে থাকলেন কোনো প্রকার শব্দ না করে।
মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্রবাহিনী সব মিলে প্রায় ৭০০ জন। কারও মুখে কোনো কথা নেই। শুধু ইশারায় কাজ হচ্ছে। চলতি পথে ছায়ামূর্তি দু-একজন মাঝেমধ্যে ফিসফিস করে পাশের কাউকে জিজ্ঞেস করছেন কে কোন দলের। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্রবাহিনীর সেনারা এফইউপিতে অবস্থান নিলেন। তারপর সময় দ্রুত গড়াতে থাকল। এইচ আওয়ার (আক্রমণের সময়) আর মাত্র তিন মিনিট।
এ টি এম হামিদুল হোসেন সহযোদ্ধাদের নিয়ে উঠে দাঁড়ালেন। হাতে অস্ত্র, ট্রিগার হাতে সবেমাত্র পা বাড়িয়েছেন—এমন সময় নিস্তব্ধতা ভেদ করে বিকট শব্দ। আক্রমণের তখনো আড়াই মিনিট বাকি। মিত্রবাহিনীর একজন সৈনিকের হাত থেকে উত্তেজনায় পিনখোলা গ্রেনেড মাটিতে পড়ে এই বিপত্তি। গ্রেনেড বিস্ফোরণের বিকট শব্দে পাকিস্তানি সেনারা বুঝে গেল তাদের ওপর আক্রমণ আসন্ন। সঙ্গে সঙ্গে তারা আক্রমণ শুরু করল। ওদের সব বাংকার থেকে মেশিনগান, লাইট মেশিনগান ও অন্যান্য স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রের বৃষ্টির মতো গুলিবর্ষণ শুরু হলো। মাথার ওপর দিয়ে হাজার হাজার গুলি যাচ্ছে।
এ টি এম হামিদুল হোসেন তাতে বিচলিত হলেন না। সহযোদ্ধাদের নিয়ে মাটি কামড়ে পড়ে থাকলেন। এমন সময় মিত্রবাহিনীর পক্ষ থেকে শুরু হলো গোলাবর্ষণ। প্রথম লেয়ার শেষ হওয়ামাত্র মুক্তিযোদ্ধারা এ টি এম হামিদুল হোসেনের নেতৃত্বে জয় বাংলা চিৎকার দিয়ে গুলি করতে করতে ধাবিত হলেন পাকিস্তানি অবস্থানের দিকে।
শুরু হলো ডগফাইট। একটু পর মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বাংকারগুলোতে গ্রেনেড চার্জ করতে শুরু করলেন। কয়েকটি বাংকার ধ্বংস হয়ে গেল। কিছুক্ষণের মধ্যেই গোটা পাকিস্তানি প্রতিরক্ষা মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে এল। সেদিন সূর্য ওঠার আগেই ফুলবাড়ির অপারেশন শেষ হয়। এ যুদ্ধে আটজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।
লেখার কাজ চলমান….