বগুড়ার ইতিহাস
সাবেক এয়ারভাইস মার্শাল ও বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর প্রধান মরহুম খাদেমুল বাশার, বীরউত্তম-এর জীবন চরিত
সাবেক এয়ারভাইস মার্শাল ও বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর প্রধান মরহুম খাদেমুল বাশার সাহেব ১ সেপ্টেম্বর ১৯৩৫ খ্রিষ্টাব্দে বগুড়া জেলায় সদর উপজেলাধীন কাটনারপাড়া মহল্লায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁহার পিতা মরহুম শাহ মুহাম্মদ হাশমত উল্লাহ সাহেব (নাটোর জেলার আত্রাই উপজেলাধীন সাঁতারবাড়িয়ায় জন্মগ্রহণকারী) সরকারি চাকুরীতে প্রাথমিক পর্যায়ে বগুড়া সদর অতঃপর সাতক্ষীরা জেলায় পরবর্তী সময়ে রাজশাহী জেলায় কর্মরত থেকে অবসর গ্রহন করেন এবং মাতাঃ মরহুমা হাসিনা খাতুন একজন রত্নগর্ভা মাতা হিসেবে সুপরিচিত ছিলেন। তিনি তাহাঁর পিতা-মাতার দুইজন কন্যা এবং চারজন পুত্র সন্তানের মধ্য তৃতীয় ছিলেন। এখানে জেনে রাখা ভাল বগুড়া জেলার কৃতিমান ব্যাক্তিত্ব মরহুম খাঁন বাহাদুর কোরবান উল্লাহ সাহেব তাহাঁর পরদাদা (নানীর-বাবা) ছিলেন।
বাল্যকাল এবং শিক্ষাজীবনঃবাল্যকালে তিনি পরিবার ও বন্ধুমহলে “ডিকেন” নামে পরিচিত ছিলেন। তিনি তাহাঁরর বাল্যকালে বগুড়ায় অতিবাহিত করেন। বগুড়া সদর এলাকার সুনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হন পরবর্তী সময়ে পিতার চাকুরীতে বদলি হওয়ায় সাতক্ষীরা প্রাননাথ উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন এবং ১৯৫১ খ্রিষ্টাব্দে সাতক্ষীরা প্রাননাথ উচ্চ বিদ্যালয় হতে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন। ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করার পর রাজশাহী গভঃ কলেজে ভর্তি হন এবং কৃতিত্বের সহিত আই.এস.সি পরিক্ষায় কৃতকার্য হন।
তিনি বগুড়া জেলার গাবতলী উপজেলাধীন প্রকৌশলী মোয়াজ্জেম হোসেন সাহেবের কন্যা শিরিন বাশার (সরকারি চাকুরীতে নিয়োজিত)-এর সহিত বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। সাংসারিক জীবনে তিনি দুই কন্যা এবং এক পুত্র সন্তানের জনক ছিলেন।
কর্মজীবনঃমরহুম খাদেমুল বাশার, বীরউত্তম ১৯৫৩ খ্রিষ্টাব্দে পাকিস্তান বিমানবাহিনীতে ফ্লাইট ব্রাঞ্চে ক্যাডেট হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত এই পদে দায়িত্ব পালন করে একই বছরে পি.এফ.এ-এর নব গঠিত বোমারু স্কোয়াড্রনে যোগদান করেন এবং ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত এই পদে দায়িত্ব পালন করেন। পাকিস্তান বিমান বাহিনীতে দায়িত্ব পালনকালে নিজের দক্ষতা ও নৈপুণ্যের জন্য খ্যাতি লাভ করেন। ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দ-১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত বিমান বাহিনীর দুটি স্কোয়াড্রনের একটির অধিনায়ক ছিলেন। বিমান বাহিনীতে অসাধারণ অবদানের জন্য টি.বি.টি খেতাবে ভুষিত হন। ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দে উইংকমান্ডার পদে উন্নীত হয়ে এবং একটি রাডার স্কোয়াড্রনের অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করে ঢাকায় বদলি হন।
বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর তিনি রংপুরে ব্রিগেড কমান্ডার নিযুক্ত হন। ফেব্রুয়ারি ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দে গ্রুপ ক্যাপ্টেন পদে পদন্নোতি লাভ করেন। জুলাই ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী প্রবর্তনের পর ঢাকা বিমান ঘাটির অধিনায়ক নিযুক্ত হন। এই সময়ে তিনি যুদ্ধ বিধ্বস্ত বিমানঘাটি পুনর্গঠন করেন।
তিনি অক্টোবর ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দে এয়ার কমোডর হিসেবে পদন্নোতি লাভ করেন। উক্ত দায়িত্ব পালনকালে তিনি বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর অপারেশন ও প্রশিক্ষণের সহকারী স্টাফপ্রধান নিযুক্ত হন।
তিনি ৩ মে ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দে এয়ারভাইস মার্শাল হিসেবে পদন্নোতি লাভ করেন এবং একই দিনে উপপ্রধান সামরিক প্রশাসক নিযুক্ত হন। উক্ত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি পেট্রলিয়াম,খাদ্য, বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রণালয় ও পর্যটন বিভাগের দায়িত্ব পালন করেন।
মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকাঃমুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে মে মাসের শুরুতে তিনি ভারতে যান এবং যুদ্ধে যোগ দেন। খাদেমুল বাশার জুন মাস থেকে মুক্তিবাহিনীর ৬ নম্বর সেক্টরে অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বৃহত্তর রংপুর ও বৃহত্তর দিনাজপুর জেলার অংশবিশেষ নিয়ে এই সেক্টর গঠিত হয়।
১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে মুক্তিযুদ্ধকালে এ সেক্টরের অধীনে অসংখ্য যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এই সেক্টরের একটি বৈশিষ্ট্য ছিল, তা হল ৬ নম্বর সেক্টরসহ কয়েকটি সাব-সেক্টরের অবস্থান বাংলাদেশের ভূখণ্ডেই অবস্থিত ছিল এবং পাকিস্তান সেনাবাহিনী তা দখল করতে পারেনি। খাদেমুল বাশার,বীরউত্তম-এর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ পরিচালনায় ৬ নম্বর সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অসংখ্য অপারেশনে অংশগ্রহণ করেন এর মধ্যে ভূরুঙ্গামারীর যুদ্ধ অন্যতম। নভেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে এ যুদ্ধ সংঘটিত হয়।
বড় ও ছোট ঝুঁকিপূর্ণ আক্রমণ পরিচালনা, অ্যামবুশ ও রেইড ইত্যাদি নিজেই পরিচালনা করতেন। সফল রণকৌশল, অস্ত্র চালনা, প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব, আত্মবিশ্বাস, সেই সাথে সহকর্মী ও মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি তাঁর গভীর অনুভূতি, স্নেহ ইত্যাদি মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্য অনুপ্রেরণা সৃস্টি করে। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে “বীর উত্তম” খেতাব প্রদান করে।
খাদেমুল বাশার, বীরউত্তম ১ সেপ্টেম্বর ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দেঢাকা বিমান ঘাটিতে বিমান দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরন করেন।
তথ্য সংগ্রহেঃ Golam Zakaria Kanak
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ জনাব শামসুল হুদা সাহেব।এটিএন বাংলা টেলিভিশনের প্রধান উপদেষ্টা।