শেরপুর উপজেলা

বগুড়ার শেরপুরে আইপিএল ক্রিকেট জুয়ার মহোৎসব

বগুড়ার শেরপুরে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগ (আইপিএল) ক্রিকেট জুয়ার মহোৎসব চলছে। এই উপজেলার অন্তত দুই শতাধিক পয়েন্টে নিয়মিতভাবে বসছে জমজমাট এই ক্রিকেট জুয়ার আসর। এসব আসরে সর্বস্বান্ত হচ্ছে অসংখ্য মানুষ। বিশেষ করে তরুণ-যুবকরা এই জুয়ায় সবচেয়ে বেশি ঝুঁকে পড়েছে। এছাড়া স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরাও আইপিএল জুয়ায় জড়িয়ে পড়ছে। এভাবে আসর বসিয়ে লাখ লাখ টাকার ক্রিকেট জুয়া চালানো হলেও এই বিষয়ে প্রশাসনের তেমন নজরদারি না থাকায় এই জুয়া যেন ওপেন সিক্রেটে পরিনত হয়েছে।

উপজেলার গুরুত্বপুর্ণ বাজার, বিভিন্ন গ্রাম-পাড়া মহল্লার একাধিক কাব, অফিস, চা-স্টল, দোকানসহ বাসা-বাড়িতে এই জুয়ার আসর বসছে। স্থানীয় ক্রিকেট জুয়ারিরা এসব আসরের সদস্য হয়ে প্রতিনিয়তই অংশ নিচ্ছে এই সর্বনাশা খেলায়। টেলিভিশনে খেলা দেখা ও সরাসরি ক্রিকেট জুয়া ছাড়াও মোবাইল ফোনের মাধ্যমেও অন্য এলাকার জুয়ারিদের সঙ্গেও বাজি ধরে জুয়া খেলা হয়। এতে করে অনেকই এই জুয়ার খপ্পরে নিঃস্ব হয়েছে।

নগদ টাকার পাশাপাশি জমাজমি, বাড়িঘর, যানবাহন, স্বর্ণালংকারসহ মূল্যবান জিনিসপত্র বিক্রি করে ক্রিকেট জুয়া খেলে সর্বস্বান্ত হয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। অনেকে বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজনসহ বিভিন্ন মহাজনের কাছ থেকে অতিরিক্ত সুদে ধার-দেনাগ্রস্ত হয়ে পরিশোধ করতে না পারায় পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। এমনকি সর্বনাশা এই আইপিএল জুয়ায় হার-জিত নিয়ে অপহরণ, খুনের মতো ঘটনাও ঘটেছে। উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের মির্জাপুর গ্রামের শাহ আলমের ছেলে মো. সোহাগ হোসেন (২৫) তার বন্ধু সাগর আইপিএল জুয়া খেলে। খেলায় সোহাগ সাত হাজার টাকা বাজি ধরে সাগরের কাছে হেরে যান। সেই টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। একপর্যায়ে গেল ২জানুয়ারি রাতে সেই দ্বন্দ্বের জেরে এবং বাজির টাকা না দেয়ায় সাগর লাঠি দিয়ে সোহাগের মাথায় আঘাত করে। এরপর ঘটনাস্থলেই সোহাগ মারা যায় বলে জানা গেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক জুয়ারির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কোন খেলোয়াড় বেশি রান পাবে, কে বেশি উইকেট পাবে, কে বেশি ছক্কা মারবে, কে বেশি চার মারবে, কোন বলে ‘চার’ বা ‘ছয়’ হবে এসবের উপর প্রতি মুহুর্তে চলে বাজি ধরার মাধ্যমে ক্রিকেট জুয়া। বাজিতে হেরে গেলেই গুণতে হয় টাকা। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শেরপুর থানার পুলিশ পরিদর্শক (ওসি তদন্ত) বুলবুল ইসলাম জানান, এ বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে আইপিএল জুয়ারিদের বিরুদ্ধে পুলিশি অভিযান শুরু করা হয়েছে। গত বুধবার ২৭মার্চ অভিযানের প্রথমদিনেই উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে নয়জন ক্রিকেট জুয়ারিকে গ্রেফতার করা হয়। তাদেরকে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলে এই পুলিশ কর্মকর্তা জানান। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. লিয়াকত আলী এ প্রসঙ্গে বলেন, বিষয়টি খোঁজখবর নিয়ে এসব জুয়ারিদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এই বিভাগের অন্য খবর

Back to top button