খেলাধুলা

বগুড়ার গর্ব মুশফিকুর রহিমের ৩২তম জন্মদিন আজ

৯-ই মে ১৯৮৭ সালে বগুড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। পুরো নাম মুশফিকুর রহিম মিতু। ছোটবেলা থেকেই মুশির ছিলো পড়াশোনার প্রতি বাড়তি টান। তাইতো সেই ছোটবেলা থেকেই চালিয়ে গেছেন পড়াশোনা। শুধু পড়াশোনায় নেশা ছিলো না তার। তিনি ছিলেন অনেক জেদি একজন মানুষ। সেই ছোটবেলায় ক্রিকেটকে মনে প্রাণে ধারণ করেন তিনি। বগুড়ায় বেড়ে উঠতে থাকেন, পাশাপাশি ক্রিকেট ব্যাট নিয়ে অনুশীলন করতে থাকলেন। কিন্তু বগুড়ায় ছিলো না ভালো মানের কোচিং ব্যবস্থা।
তাইতো চেষ্টা চালিয়ে গেলেন ভালো কোথাও ভর্তি হওয়ার। এবার সেই সুযোগ হয়ে গেলো তার।

সেই সময় বিকেএসপিতে ভর্তির জন্য ফর্ম কিনলেন তার
বাবা,এবং ছেলেকে ভর্তি করালেন বিকেএসপিতে। এরপর
মুশি শুরু করলেন পরিশ্রম, তৈরি করতে থাকলেন
নিজেকে,পাশাপাশি চালিয়ে যেতে থাকলেন
পড়াশোনা।
সেই ছোট বেলা থেকেই তিনি ছিলেন অনেক পরিশ্রমী।
এই পরিশ্রমের ফলে খুব তাড়াতাড়ি নিজেকে প্রমাণ করলেন, এবং সবার নজরে চলে আসলেন।

সময়টা ২০০৫ সাল, বাংলাদেশ দল তখন ইংল্যান্ড
সফরে,সেই সফরে দলে জায়গা হলো মাত্র ১৬ বছর বয়সী এই
উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যানের। অপরিচিত পরিবেশের সাথে
মানিয়ে নিতে খেললেন দুইটি প্রস্তুতি ম্যাচ। এই ম্যাচের
আগে মুশফিককে বিবেচনা করা হতো মূলত উইকেটরক্ষক
হিসেবে। কিন্তু প্রস্তুতিমূলক ম্যাচে অচেনা পরিবেশে
অন্য এক মুশিকে দেখেছিলো বাংলাদেশ। নিজেকে
প্রমাণ করে সাসেক্সের বিরুদ্ধে ৬৩ রানের এবং
নটিংহ্যাম্পশায়ারের বিরুদ্ধে করা অপরাজিত ১১৫* এক

ইনিংস।

এই দুই ইনিংসেই পথ খুলে যায় মূল একাদশে খেলার।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম টেস্টেই অভিষেক হয় ১৮ বছর
বয়সী তরুণ উদীয়মান এই উইকেটরক্ষকের। অভিষেক ম্যাচে
মাত্র ১৯রানেই আউট হন তিনি। এরপর ইনজুরিতে পড়ে

ছিটকে যান ইংল্যান্ড সিরিজ থেকে।

দেশে ফিরে ইনজুরি কাটিয়ে যোগ দেন অনূর্ধ্ব-১৯ দলের
সাথে। এবং বিশ্বকাপের জন্য তাকে অধিনায়ক ঘোষণা
করা হয়। সাকিব-তামিমদের নিয়ে সেই আসরে কোয়ার্টার
ফাইনালে খেলেছিলো মুশির নেতৃত্বে খেলা

বাংলাদেশ।

এরপর ২০০৬ সালে আবারো জায়গা হয় বাংলাদেশ জাতীয়
দলে। এবার জিম্বাবুয়ে সফরের জন্য দল ঘোষনা করে
বাংলাদেশ। সেই স্কোয়াডে সাকিব-রেজার সাথে ডাক
পান মুশি। এবং অভিষেক ম্যাচেই ফিফটি করার গৌরব

অর্জন করেন।

এভাবে এগিয়ে যেতে থাকেন তিনি। এরপর ২০০৭ সালে
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আবারো টেস্ট দলে জায়গা পান
তিনি। দ্বিতীয় টেস্টে ব্যাটিংয়ে নেমে ৮০ রানের এক
ঝকঝকে ইনিংস উপহার দিলেও দলকে জেতাতে পারেননি

তিনি।

এবার ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি নতুন করে দায়িত্ব পান
মুশি। ২০০৯ সালে বাংলাদেশ দলের সহ-অধিনায়ক
হয়েছিলেন এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান। এভাবে চলতে
থাকলো সময় আর এদিনে নিজেকে আস্তে আস্তে এগিয়ে
নিয়ে যাচ্ছিলেন মুশি, করছিলেন পরিশ্রম। এবার সেই
পরিশ্রমের ফল পেয়ে গেলেন মুশি। ২০১০ সালের ১ লা
জানুয়ারি শক্তিশালী ভারতের বিপক্ষে করেছিলেন

টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি।

এমন পারফরম্যান্সে মন জয় করতে লাগলেন নির্বাচকদের।
নিজেকে নিয়ে যাচ্ছিলেন যোগ্য স্থানে। এরপর ২০১১
সালে বাংলাদেশ দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পান
তিনি। তার অধিনায়কত্বে এশিয়া কাপে রানার্সআপের
পর টেস্ট ক্রিকেটের শক্তিশালী প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড,
অস্ট্রেলিয়া এবং শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জয়লাভ করে
বাংলাদেশ। এবং তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজে
জিম্বাবুয়েকে বাংলাওয়াশ করেছিলো মুশির নেতৃত্বে

খেলতে নামা বাংলাদেশ।

এরপর ২০১৩ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মাঠে নামে
বাংলাদেশ। সেই ম্যাচে আশরাফুলকে সাথে নিয়ে
রেকর্ড জুটি গড়েন মুশি। শুধু জুটির রেকর্ডই করেন নি
সেদিন, সেদিন করেছিলেন প্রথম বাংলাদেশী
ব্যাটসম্যান হিসেবে টেস্ট ক্রিকেটে ডাবল সেঞ্চুরি
করার রেকর্ড। এভাবেই সময়ের সাথে সাথে নিজেকে
মানিয়ে নিতে থাকলেন এবং নিজেকে নিয়ে যেতো

লাগলেন সেরাদের কাতারে।

এরপর ২০১৫ বিশ্বাকাপে সেরা স্কোয়াডে জায়গা হলো
মুশির। সেরাটা দিয়ে বাংলাদেশকে এগিয়ে
নিয়েছিলেন তিনি। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলেছিলেন
লড়াকু এক ইনিংস। বাংলাদেশকে এনে দিয়েছিলেন

লড়াই করার পুঁজি।

এরপর ঘরের মাঠে পাকিস্তান,ভারত,দক্ষিণ আফ্রিকা
বধের সদস্য ছিলেন তিনি। করেছিলেন পাকিস্তানের
বিপক্ষে একদিনের ক্রিকেটে সেঞ্চুরি। এর আগে ২০১৪
সালে ঘরের মাঠে ভারতের বিপক্ষে করেছিলেন
ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি।
শুধু ব্যাটিংয়েই সেরা নন, কিপিংয়েও দুর্দান্ত মুশি।
দলের প্রয়োজনে কিপিং হাতেও সেরাটা দিয়ে যাচ্ছেন
মুশি। অসাধারণ কিছু ক্যাচ নিয়ে ম্যাচে ফেরান

বাংলাদেশকে।

শুধু দেশেই নয় দেশের বাহিরেও দুর্দান্ত মুশি,যার প্রমাণ
২০১৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সেঞ্চুরি।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ উইনিং নক, এশিয়া কাপে

দুর্দান্ত পারফরম্যান্স।

এরপর ২০১৮ সালে মুশি ছাড়িয়ে গেলেন নিজেকে। গড়লেন
রেকর্ড করলেন প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে টেস্ট
ক্রিকেটে দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। ছাড়িয়ে গেলেন নিজেকে,
ছাড়িয়ে গেলেন সাকিব-তামিমদের। যদিও সবার উপরে
যাওয়ার সুযোগ ছিলো মুশির সামনে কিন্তু অধিনায়কের

বেখেয়ালিতে হাতছাড়া হয়েছিলো সেই বিশ্বরেকর্ডটি।

মুশিকে বলা হয় বাংলাদেশের সেরা ব্যাটসম্যান, তিনি
মিস্টার ডিপেন্ডেবল, তিনি রানমেশিন, তিনি
বাংলাদেশের সেরা উইকেটরক্ষক, তিনি স্লগ হিটার,
তিনি পরিশ্রমী, তিনি আবেগী, তিনি ইসলাম প্রিয়, তিনি
ক্লাসিকাল ব্যাটসম্যান। তিনি শুধুই ভালো ক্রিকেটারই

নয় তিনি একজন ভালো মনের মানুষও।

মুশির ক্রিকেট মাঠের পরিসংখ্যান দিয়ে তাকে
বিবেচনা করলে ভুল হবে। তিনি আসলেই সেরা,তিনি
বাংলাদেশের রত্ন,তিনি বাংলাদেশের স্বপ্ন, তিনি
বাংলাদেশের আশা,তিনি চ্যাম্প, তিনি যোদ্ধা-যে ২৫
টি ব্যাথা নাশক ঔষধ খেয়ে লড়াই করেছেন দেশের
জন্য,যিনি পাঁজরের ভাঙ্গা হাড় নিয়ে খেলে যাচ্ছেনঅবিরত।

এই বিভাগের অন্য খবর

Back to top button