বগুড়ায় বাঁশ শিল্পে জীবিকা নির্বাহ
হারুন-অর-রশিদঃ পূর্বপুরুষদের রেখে যাওয়া প্রায় দেড়শো বছরের ঐতিহ্য বাঁশের তৈরি চাটাই-বেড়া তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন বগুড়া সদর উপজেলার শাখারিয়া ইউনিয়নের গোপালবাড়ি (বাবুপাড়া) গ্রামের প্রায় অর্ধশত পরিবার।
অর্থনৈতিক সংকটের কারণে পরিবার পরিজন নিয়ে যারা একসময় মানবেতর জীবনযাপন করতেন তারা আজ এ ব্যবসায় জড়িত হয়ে সুখে স্বাচ্ছন্দে বসবাস করছেন। নিম্ন আয়ের এ সব খেঁটে খাওয়া মানুষেরা এখন স্ত্রী, বাবা-মা ও সন্তানদেরকে নিয়ে সুখের স্বপ্ন বুনছেন। তবে আধুনিকতার ছোয়ায় ইট,দালানকোঠা হওয়ায় বাঁশের তৈরি বেরার কদর ও কমে গেছে।গোপালবাড়ি গ্রামে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আপন মনে একাগ্রচিত্তে বাঁশের চাটাই তৈরিতে ব্যস্ত প্রায় মহল্লার সকলেই।
কথা হয় বাবু পাড়া মহল্লার শ্রী বিমল চন্দ্র দাশের সঙ্গে, তিনি জানান, বাঁশ শিল্পের এই ব্যবসা প্রায় ১৫০ বছর আগে থেকে পূর্বপুরুষরা করে আসছেন, ব্যবসার পাশাপাশি পূর্বপুরুষদের শেখানো এই ঐতিহ্যকে ধরে রাখার জন্যেই আমরা বাঁশ শিল্পের কাজ করি। আরো জানান একসময় তাদের সংসার চালাতে ভীষণ কষ্ট হতো। বৃদ্ধ বাবা-মা স্ত্রী আর সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে অবশেষে এই ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে মহল্লায় প্রায় অর্ধ শতাধিক পরিবার এই ব্যবসায় জড়িত আছে,এতে করে ঐতিহ্য রক্ষার পাশাপাশি বেকারদের কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে।
এতো বাঁশ কোথা থেকে সংগ্রহ করেন এমন প্রশ্নের জবাবে বয়জেষ্ঠ্য শ্রী যোগেন চন্দ্র দাশ জানান, বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে ঘুরে বাঁশ বাগানের মালিকদের থেকে কিনে নিয়ে আসি। সেই বাঁশ দিয়েই তৈরি হচ্ছে চাটাই। আর এই চাটাইগুলো বিভিন্ন জেলায় ব্যাপক চাহিদা থাকায় স্থানীয় ব্যাপারিরা পাইকারি দরে কিনে নিয়ে বিভিন্ন বাজারে খুচরা দরে বিক্রি করেন।শুধু চাটাই-ই নয় এছাড়াও টিনের ঘরের জন্য সাজ-সজ্জা করে সুন্দর (ছাদ) সিলিং তৈরি করে থাকেন তারা। চাইলেই দেশের যে কোনো জায়গায় গিয়ে সিলিং-এর কাজ করে দিয়ে আসেন।
স্বামী হারা শ্রীমতি আনোবালা জানান এ ব্যবসা করে সংসার চালানোর পাশাপাশি ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া শিখিয়েছি। বিধবা হয়েও অন্যের বাড়িতে কাজ না করে নিজের শেখা কাজ করে পরিবার পরিজন নিয়ে আমরা ভালই আছি।