আন্তর্জাতিক খবর

বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা

করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব চীনের বাইরেও ছড়িয়ে পড়ায়, বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

“চীনের কী হচ্ছে সেটার জন্য এই ঘোষণা দেয়া হয়নি বরং অন্যান্য দেশে যা ঘটছে সেটাই এই ঘোষণার মূল কারণ, ” ডব্লিউএইচও- এর প্রধান টেড্রোস অ্যাধনম ঘেব্রেইয়েসাস বলেছেন। উদ্বেগ রয়েছে যে এই ভাইরাস দুর্বল স্বাস্থ্য ব্যবস্থার দেশগুলোতে ছড়িয়ে পড়তে পারে।

এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র তাদের নাগরিকদের বলেছে তারা যেন চীনে ভ্রমণ করতে না যায়। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর চার স্তরের সতর্কতা জারি করেছে – এর আগে আমেরিকানদের চীন ভ্রমণের বিষয়টি “পুনর্বিবেচনা” করার আহ্বান জানানো হয়েছিল। সেখানে বলা হয়েছে যে চীনে যেসব মার্কিন নাগরিক আছে তারা যেন সতর্ক থাকে।

চীনে এই ভাইরাসে এখন পর্যন্ত ১০ হাজার জনের আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এতে মৃত্যু হয়েছে অন্তত ২১৩ জনের। ডব্লিউএইচও জানিয়েছে যে, অন্যান্য ১৮টি দেশে আরও ৯৮জন মানুষের আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তবে চীনের বাইরে এখনও কারও মৃত্যু হয়নি।

চীনের বাইরের দেশের যতো মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের বেশিরভাগ চীনের উহার শহরে ছিলেন, যেখান থেকে এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হয়। তবে জার্মানি, জাপান, ভিয়েতনাম এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মানুষে মানুষে-ভাইরাস সংক্রমণের আটটি ঘটনা ঘটেছে।

জেনেভাতে এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখার সময় ড. টেড্রোস ভাইরাসটিকে একটি “অভূতপূর্ব প্রাদুর্ভাব” হিসাবে বর্ণনা করেছেন, যাকে গিয়ে প্রতিক্রিয়াও “অভূতপূর্ব”।

তিনি চীনা কর্তৃপক্ষের “অসাধারণ পদক্ষেপ” গ্রহণের প্রশংসা করেন এবং বলেছেন যে চীনে বাণিজ্য বা ভ্রমণ সীমাবদ্ধ করার কোনও কারণ নেই। “একটি বিষয় স্পষ্ট করে বলি, এই ঘোষণাটি চীনের প্রতি অবিশ্বাস বা অনাস্থার জন্য নয়,” তিনি বলেন।

তবে বিভিন্ন দেশ সীমান্ত বন্ধ করার পাশাপাশি বা ফ্লাইট বাতিল করার পদক্ষেপ নিয়েছে এবং গুগল, আইকা, স্টারবাকস এবং টেসলার মতো সংস্থাগুলি তাদের দোকান বন্ধ করে দিয়েছে বা কার্যক্রম বন্ধ রেখেছে। এই ভাইরাস যদি এমন একটি দেশে প্রবেশ করে যাদের এমন প্রাদুর্ভাব মোকাবেলার সক্ষমতা নেই, তখন কী হবে?

অনেক নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশে এই ভাইরাসের আক্রান্ত হওয়ার বিষয়ে শনাক্ত করা এবং আক্রান্ত ব্যক্তির দেখভাল করার সরঞ্জামের অভাব রয়েছে। আশঙ্কা হল সেসব দেশে এই ভাইরাস অনিয়ন্ত্রিতভাবে ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং কিছু সময়ের জন্য বিষয়টি নজরে নাও পড়তে পারে।

মনে রাখবেন এটি এমন একটি রোগ যা কেবল গত মাসে উদ্ভূত হয়েছিল – এবং ইতিমধ্যে চীনের প্রায় ১০ হাজার জনের এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর নিশ্চিত হওয়া গিয়েছে।

২০১৪ সালে পশ্চিম আফ্রিকার ইবোলার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়- যা ছিল মানব ইতিহাসের সবচেয়ে বড় প্রাদুর্ভাব- সেখান থেকে বোঝা যায় যে এইরকম প্রাদুর্ভাব দারিদ্র্যপীড়িত দেশগুলোর ওপর কত ভয়াবহ প্রভাব ফেলতে পারে।

নভেল করোনাভাইরাস যদি এই জায়গাগুলিতে উল্লেখযোগ্য হারে ছড়িয়ে পড়ে তবে এটি নিয়ন্ত্রণ করা অবিশ্বাস্য রকমভাবে কঠিন হয়ে পড়বে।

আমরা এখনও সেই পর্যায়ে নেই – আক্রান্ত হওয়ার ৯৯% ঘটনাই ঘটেছে চীনে। এবং ডব্লিউএইচও এতোটুকু নিশ্চিত হতে পারছে যে দেশটি সেখানকার এই প্রকোপ নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। তবে বৈশ্বিক জরুরী অবস্থা ঘোষণার মাধ্যমে ডব্লিউএইচও নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলোয় তাদের নজরদারি চালাতে পারবে। যেন তাদের রোগ নির্ণয় করার পদ্ধতি জোরদার করা যায় – এবং এ ধরণের প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় তাদের প্রস্তুত করা যায়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এর আগেও পাঁচবার বৈশ্বিক জনস্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে। কোন রোগ খুব দ্রুত এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় ছড়িয়ে পড়ার কারণে জনস্বাস্থ্য ঝুঁকি মুখে পড়লে এই জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়।বিশেষ করে যদি এই প্রাদুর্ভাবের এমন বড় কোন ঘটনা ঘটে যা বৈশ্বিক উদ্বেগের সৃষ্টি করে।

এই বিভাগের অন্য খবর

Back to top button