শীতের হিম ঠান্ডা আর আগের মতো গায়ে লাগছে না। বেলা বাড়ার সাথে সাথে বেশ অস্বস্তিকর হয়ে পরছে গায়ে দেওয়া শীতের মোটা পোশাক। ঠিক শীতও নয় আবার তেমন গরমও নয়। এই অনুভূতিই জানান দিচ্ছে বসন্ত এসে পরেছে। শীতের বিদায়ের পথ ধরে সহাস্যে উঁকি দিচ্ছে ঋতুরাজ ‘বসন্ত’। আর বসন্ত মানেই নতুন সাজে প্রকৃতি মুখরিত হওয়ার দিন। শীতের জরাগ্রস্ততা কাটিয়ে নতুন পাতায় ঋদ্ধ হয়ে উঠতে শুরু করেছে বাঙলার রুক্ষ প্রকৃতি।
তথ্যমতে, পুরনো বাংলা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী বসন্তের প্রথম দিন অর্থাৎ পহেলা ফাল্গুন ছিল ১৩ ফেব্রুয়ারি। কিন্তু বাংলা বর্ষপঞ্জি সংশোধনের পর এক দিন পিছিয়েছে বসন্ত। বাংলা বর্ষপঞ্জি সংশোধনের কাজ করেছে বাংলা একাডেমির গবেষণা, সংকলন এবং অভিধান ও বিশ্বকোষ বিভাগ। তারা জানিয়েছে, সংশোধিত বর্ষপঞ্জিতে বৈশাখ থেকে আশ্বিন পর্যন্ত প্রথম ছয় মাস ৩১ দিন, কার্তিক থেকে মাঘ মাস ৩০ দিন এবং ফাল্গুন মাস ২৯ দিন ধরে গণনা করা হবে। তবে গ্রেগরীয় পঞ্জিকার অধিবর্ষে (লিপ ইয়ার) ফাল্গুন মাস ২৯ দিনের পরিবর্তে ৩০ দিন গণনা করা হবে।
সৌন্দর্যে লিপ্ত বাংলার দুয়ারে হাজারো মুগ্ধতা নিয়ে হাজির হয়েছে বসন্ত। নতুন হাওয়ার ছোঁয়ায় নেচে উঠছে প্রকৃতি। এই ছোঁয়া শিহরণ যাগাচ্ছে মানুষের মনে, এমনি পুলকিত হয়ে উঠছে পাখ-পাখালির মনও। আশেপাশের আম কিংবা লিচু গাছে ধরতে শুরু করেছে নতুন মুকুল। ফুটতে শুরু করেছে নানা জাতের না রঙের নানা নকশার ফুল। গাছে গাছে ফুটেছে রক্তশিমুল-পলাশ, কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া, নাগলিঙ্গম। বসন্ত বাতাস দোলা দিচ্ছে মনে-প্রাণে। কয়েকদিন বাদেই শোনা যাবে কোকিলেল কুহু কুহু কলকাকলি।
ফাল্গুন আর চৈত্র, বাংলার এ দুটি মাস নিয়ে বসন্ত। নামের সাথেই রয়েছে যার ‘ঋতুরাজ’ উপাধি তার রূপে কী মুগ্ধ না হয়ে কেউ পারে? বসন্তের এই মুগ্ধতায় মগ্ন হয়ে নানা কবি লিখেছেন নান ছন্দের কবিতা, বেধেছেন নানা সুরের গান। ফাল্গুন নামটি মুখে আসলেই সকলের মনে আপন সুরেই বেজে ওঠে কবি গুরুর –
“ফাগুন, হাওয়ায় হাওয়ায় করেছি যে দান:
তোমার হাওয়ায় হাওয়ায় করেছি যে দান:
আমার আপনহারা প্রাণ;
আমার বাঁধন ছেঁড়া প্রাণ”
এ গানটি। তেমনি কবি সুভাস মুখোপাধ্যায় লিখেছেন- “ফুল ফুটুক আর না ফুটুক, আজ বসন্ত।”
বসন্ত আসেই মাতাল করা ফুলের ঘ্রাণ নিয়ে। বসন্তের উচ্ছলতা ও উন্মদনায় ভাসবে নাগরিক বাঙালি। বসন্তের আনন্দযজ্ঞ থেকে বাদ যাবে না গ্রামীণ জীবনও। বসন্তকে তারা আরও নিবিড়ভাবে বরণ করে। বাংলা পঞ্জিকা বর্ষের শেষ ঋতু বসন্তের প্রথম দিনকে বাঙালি পালন করে ‘পহেলা ফাল্গুন’ কিংবা ‘বসন্ত উৎসব’ হিসেবে। আর এ পহেলা ফাল্গুন দিনটিতে বেশীরভাগ কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে বসন্ত বরণ উৎসব। বাসন্তী রঙে রঙিন হয়ে ওঠে অসংখ্য বাঙালি রমণী, সেই সাথে তরুণরাও পরবে বাসন্তী রঙের পোশাক। বাঙালির নিজস্ব সর্বজনীন প্রাণের এ উৎসব এখন গোটা বাঙালির কাছে ব্যাপক সমাদৃত হয়েছে।
এই বসন্তেই হয়েছিল বায়ান্নোর ভাষা আন্দোলন, বসন্তেই বাঙালি পেয়েছে বিজয়। পেয়েছে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র। শুধু প্রকৃতি কিংবা নিজ মনে নয় বাঙালির ইতিহাসেও এই বসন্ত এসেছিল বিজয় উচ্ছ্বাস নিয়ে।
বসন্ত মানেই পূর্ণতা, বসন্ত মানেই নতুন প্রাণের কলরব। বসন্ত হোক সকল হৃদয়ের আনন্দ আর উচ্ছ্বাস তার কারণ। মুখরতায় ভরিয়ে তুলুক প্রতিটি মন-প্রাণ।
লিখেছেন: ফাহিম আহম্মেদ রিয়াদ