বগুড়ায় বিদেশ নয়, শঙ্কা ঢাকা ফেরত ব্যক্তিদের নিয়ে
বগুড়ায় করোনা ভাইরাস সংক্রমণের উদ্বেগ বিদেশ ফেরতদের নিয়ে নয় বরং ঢাকা থেকে যারা ফিরেছেন, তাদের নিয়েই চিন্তিত স্থানীয় জনগণ, প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা।
তাদের দাবি, বিদেশ ফেরত যারা এ জেলায় এসেছেন, সরকারি নির্দেশনা মেনে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকায় তাদের মধ্যে কেউ করোনা সংক্রমিত হয়নি। বরং সম্প্রতি গার্মেন্টস শ্রমিকদের ঢাকায় নিয়ে যাওয়া এবং ফেরত পাঠানোয় রোগের সংক্রমণ নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন তারা। তাছড়া বিদেশ ফেরতদের হালনাগাদ কোনো তথ্যও নেই জেলা প্রশাসনের কাছে।
ধুনট উপজেলার এক গ্রামপুলিশ সদস্য জানান, স্থানীয় প্রশাসনের নির্দেশ মতো তারা তাদের এলাকায় বিদেশফেরতদের তালিকা করে হোম কোয়ারেন্টাইনে রেখে একটি সুন্দর পরিবেশ তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু পরে ঢাকায় যাওয়া গার্মেন্টস কর্মীরা ফেরত আসায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পরিস্থিতি সামলাতে কষ্ট করতে হচ্ছে তাদের।
একই কথা বলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা ও মথুরাপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদ সেলিম। প্রশাসনের দেওয়া হিসাব অনুযায়ী তার এলাকায় বিদেশফেরত ১৪ জনের সবাইকে খুঁজে বের করে নির্দেশনা মতো কাজ করা হয়েছে। তিনি দাবি করেন, সরকারের একজন মন্ত্রীর বিতর্কিত সিদ্ধান্তের কারণে বিশৃঙ্খলভাবে এ অঞ্চলে ফেরত এসেছেন গার্মেন্টস কর্মীরা। এখন আমাদের কিছু হয়ে গেলে এর দায় কে নেবে?
বগুড়া-৫ আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ হাবিবর রহমান বিষয়টি নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, এ রোগের সংক্রমণের ভয়াবহতা সম্পর্কে অনুভব করলে গার্মেন্টস কর্মীদের ঢাকায় নিয়ে যাওয়া বা আসার এমন ঘটনা ঘটতো না।
তিনি জানান, জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগের প্রচেষ্টায় বগুড়া জেলার করোনা পরিস্থিতি অন্য অনেক জেলার থেকে ভালো ছিল। সম্প্রতি গার্মেন্টস খোলার বিষয়ে বিতর্কিত সিদ্ধান্তে ঢাকার পথে যাতায়াতকারীদের নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়তে হচ্ছে। তবুও সবার আন্তরিকভাবে চেষ্টা করতে হবে এ মহামারি রোগ থেকে পরিত্রাণের জন্য স্থানীয় প্রশাসনের নির্দেশনা মেনে অযথা বাইরে ঘোরাঘুরি না করে বাসায় অবস্থান করা।
বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রাগেবুল আহসান রিপু জানান, আতঙ্কিত না হয়ে সবার উচিত নিজ নিজ অবস্থান থেকে কাজ করা। তাছাড়া স্থানীয় প্রশাসনের যে জনবল রয়েছে, ঢাকার পথে যাওয়া এসব গার্মেন্টকর্মীকে খুঁজে বের করে সরকারি নির্দেশনা মতো হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা অসম্ভব কিছু নয়।
এদিকে বগুড়া জেলায় বিদেশফেরত ১ হাজার ২৯০ জনকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না মর্মে গত ২ এপ্রিল আনুষ্ঠানিকভাবে জেলা প্রশাসক ফয়েজ আহাম্মদ যে তথ্য জানিয়েছিলেন, এ সম্পর্কে কোনো হালনাগাদ তথ্য নেই জেলা প্রশাসন কার্যালয়ে। যদিও জেলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) মাধ্যমে ইউনিয়ন পরিষদ সদস্যদের এ বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে তা অবগত করতে বলা হয়েছিল। সে সময় বলা হয় বগুড়ায় চলতি বছর ১ মার্চ থেকে ১ এপ্রিল পর্যন্ত বিদেশ থেকে ২ হাজার ২৬৬ জন দেশে ফিরেছেন। তাদের মধ্যে ৯৭৬ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে নেওয়া হয় এবং পরবর্তীতে ১৪ দিন বাড়িতে অবস্থানের মেয়াদ শেষ হওয়ায় ৩১৩ জনের তাদের ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছিল।
এ প্রসঙ্গে বগুড়ার জেলা প্রশাসক ফয়েজ আহাম্মদ জানান, এ সম্পর্কে কোনো হালনাগাদ তথ্য নেই জেলা প্রশাসন কার্যালয়ে। তবে পুলিশ বিভাগ ও মাঠ পর্যায়ে ইউনিয়ন পরিষদ সদস্যসহ স্বাস্থ্যকর্মীরা কাজ করে যাচ্ছেন। অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া সবাইকে বাসায় অবস্থান করতেও অনুরোধ করেন জেলা প্রশাসনের শীর্ষ এ কর্মকর্তা।
করোনার ভয়াবহতা নিয়ে দিনভর সচেতনতামূলক নানা রকম কাজ চালিয়ে যাওয়া বগুড়ার পুলিশ সুপার মো. আলী আশরাফ ভূঞা বিপিএম-বার জানিয়েছেন, বিশেষ শাখায় তাদের কাছে যতগুলো বিদেশফেরতের তালিকা ছিল, এ পর্যন্ত তার প্রায় ৭৫ শতাংশ মানুষকে খুঁজে বের করে সরকারি বিধি ও নির্দেশমতো ঘরে রাখা সম্ভব হয়েছে। জনসাধারণ পুলিশ বিভাগকে সহযোগিতা করলে ও নির্দেশ মেনে চললে এ জেলায় করোনা পরিস্থিতির ভয়াবহতা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব বলেও আশাবাদ জেলার শীর্ষ এ পুলিশ কর্মকর্তার।
অপরদিকে প্রশাসনের নির্দেশনা মেনে বিদেশফেরতদের নিয়ে কাজ করা হচ্ছে দাবি করে ধুনট উপজেলার ভাণ্ডারবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আতিকুল করিম আপেল জানান, প্রশাসনের দেওয়া হিসাব অনুযায়ী তার এলাকায় বিদেশফেরত নয়জনের মধ্যে ৯ জনকেই খুঁজে বের করা হয়েছে।
ধুনট উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাজিয়া সুলতানা জানান, জেলা প্রশাসনের দেওয়া তালিকা অনুযায়ী ধুনট উপজেলায় বিদেশফেরত ৪৮ জনের মধ্যে এ পর্যন্ত ৩৮ জনকে খুঁজে বের করা সম্ভব হয়েছে এবং নির্দেশনা মেনেই তাদের জন্য করণীয় সবকিছুই করা হয়েছে। বাকিদের খুঁজে বের করতে করোনা সংক্রান্ত ওয়ার্ড কমিটি কাজ অব্যাহত রেখেছেন। যার সভাপতি হিসেবে কাজ করছেন সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য। তার সঙ্গে রয়েছেন ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও গ্রাম পুলিশসহ অন্যরা।