করোনার মাঝেও বগুড়া জেলা পুলিশের একটি সাফল্য
মহামারি আকার ধারণ করা কোভিড-১৯ করোনা ভাইরাসের মধ্যেও থেমে নেই অপরাধীদের অপরাধ কার্যক্রম। একদিকে করোনা প্রতিরোধে জনগণকে ঘরে রাখতে হিমশিম খেতে হচ্ছে পুলিশকে অন্যদিকে অপরাধ জগতের অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় নিয়ে আসতে সক্রিয় আছে বগুড়া জেলা পুলিশ।
এমনই এক চাঞ্চল্যকর ধর্ষণ এবং পরবর্তীতে খুনের রহস্য উদঘাটন করা বগুড়া জেলা পুলিশের সফলতা লাভ করেছে।
নিচে বগুড়া জেলা পুলিশের ফেসবুক ওয়ালে প্রকাশ করা চাঞ্চল্যকর ধর্ষণ ও খুনের খুনিকে গ্রেফতারের বর্ণনা বগুড়া লাইভের পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো।
গত ২৮/৪/২০২০ তারিখে বগুড়ার শাজাহানপুর থানার পশ্চিম আশেকপুরের ধানক্ষেত থেকে সালমা(৩০) এর লাশ উদ্ধার করেছিল পুলিশ। ঘটনাস্থল থেকে মাত্র ২০০ গজ দূরে সড়ক বিভাগের জায়গায় ঘর বানিয়ে সে তার দুই সন্তানসহ থাকত। পাশ্ববর্তী একটা ব্যাগ ফ্যাক্টরীতে কাজ করে সে জীবিকা নির্বাহ করত। তার পিতার নাম ছাইদুজ্জামান খাঁ। কিছুদিন আগে তার স্বামীর সাথে তার বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে।
একটা নারীর উলঙ্গ মৃতদেহ পড়ে আছে এমন সংবাদ পেয়ে প্রথমে শাজাহানপুর থানায় জরুরি ডিউটিতে থাকা এসআই সুশান্ত যান। এরপর সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এবং অফিসার ইনচার্জ যান। সেখানে গিয়ে তারা দেখতে পান মেয়েটিকে গলায় ফাঁস লাগা অবস্থায় দেখেন এবং তার নিজের পায়জামা দিয়ে তার দুইহাত বাঁধা ছিল এবং স্তন ক্ষতবিক্ষত ছিল। প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছিল যে তাকে জোরপূর্বক ধর্ষণের পর ওড়না পেচিয়ে খুন করা হয়ে থাকতে পারে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর সার্কেল তখনই বিষয়টি পুলিশ সুপার মহোদয়কে জানালে তিনি দ্রুত সেখানে চলে আসেন এবং ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ভিক্টিমের পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলেন এবং তদন্ত টিমকে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা প্রদান করেন।
এরপর পুলিশ সুপার মহোদয়ের নির্দেশনায় সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের তত্ত্বাবধানে মামলার নিবিড় তদন্ত শুরু করা হয়। এ ব্যাপারে ভিক্টিমের পরিবারের সাথে কথা বলে জানা যায় সালমার ডিভোর্সি স্বামী সোহেল সাকিদার(৩০) পিতা মৃত জাহার আলি সাকিদার গ্রাম বালিয়াডাঙ্গা থানা গাবতলী তাকে উত্যক্ত করত এবং বিভিন্ন সময়ে মেরে ফেলার হুমকি দিত। সম্ভাব্য সকল দিক মাথায় রেখে তদন্ত শুরু করা হয়। এ ব্যাপারে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তা নেয়া হয়। বিশ্লেষন করে দেখা যায় সাম্প্রতিক সময়ে সালমার সাথে শহরের কলোনি এলাকার এক ব্যক্তির সাথে অনেক কথা হয়েছিল। সে ব্যক্তিকে শনাক্ত করে আটক করার পর সে জানায় তার মোবাইলটি কয়েকদিন আগে হারিয়ে গেছে। তখন তদন্তকারী দল উচ্চতর তদন্ত কৌশল ব্যবহার করে সেই মোবাইল ব্যবহারকারীকে শনাক্ত করে গ্রেফতার করলে দেখা যায় সে সালমার স্বামী সোহেল।
সোহেলকে প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদে সে নিজেকে ঘটনার সাথে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করলেও পরবর্তীতে নিবিড় জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায় নতুন সিম দিয়ে নিজের পরিচয় গোপন করে সে সালমার সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলে ২৭ তারিখ রাত দশটার দিকে বাড়ির বাইরে ডেকে আনে। চিনতে পেরে ফিরে যাবার চেষ্টা করলে সোহেল গামছা দিয়ে তার মুখ বেঁধে ফেলে এবং পরবর্তীতে পাজামা খুলে সেই পাজামা দিয়ে হাত বেঁধে ধর্ষণ করে এবং পরিশেষে সালমার ওড়না গলায় পেঁচিয়ে খুন করে সেখান থেকে চলে যায়।
আজ(৩০/৪/২০২০) বিকেলে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আসমাউল হুসনা এঁর আদালতে সে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় নিজের দোষ স্বীকার করে জবানবন্দী প্রদান করেছে।ছবিতে সোহেল এবং উদ্ধার হওয়া মৃতদেহ।