আন্তর্জাতিক খবরজাতীয়

দেশের করোনাভাইরাস মোকাবেলায় সরকারের ৪৭ নির্দেশনা

দেশে করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় মানুষের জীবনযাপন নিরাপদে সচল করার জন্য নতুন পরিকল্পনা করেছে সরকার। করোনা প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে এরই মধ্যে এই পরিকল্পনায় একটি নির্দেশনা পুস্তক আকারে প্রকাশ করা হয়েছে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাক্তার এম এ ফয়েজ বলেন, দীর্ঘদিনের অচলাবস্থা কাটিয়ে দেশের মানুষের আর্থসামাজিক জীবনযাপনকে সীমিত আকারে সচল করার ক্ষেত্রে সরকারকে যে পরামর্শ দেয়া হয়েছে, তা কার্যকর করা গেলে তুলনামূলকভাবে ভালো কিছু ফল পাওয়া যাবে।

সরকারের নতুন প্রণীত এ পুস্তকে মানুষের জন্য ৪৭টি বিষয়ে পৃথক নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। নির্দেশনায় বলা হয়েছে, বাড়ি বা অ্যাপার্টমেন্টের বসবাসকারীদের নিজ বাসায় অবশ্যই থার্মোমিটার, মাস্ক, জীবাণুনাশক এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী সংরক্ষণ করতে হবে, পরিবারের সদস্যদের স্বাস্থ্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিজেদেরই নজরদারিতে রাখতে হবে, প্রতি সকালে ও সন্ধ্যায় তাপমাত্রা পরিমাপ করতে হবে, ঘরে পর্যাপ্ত বায়ু চলাচলের জন্য দিনে তিন-চারবার করে কমপক্ষে ২০-৩০ মিনিটের জন্য জানালা খুলে রাখতে হবে, জীবাণুনাশক দিয়ে বাড়ির পরিবেশ পরিষ্কার রাখতে হবে, পরিবারের সদস্যরা যাতে একই জিনিসপত্র একাধিকজন ব্যবহার না করে সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে, হাঁচি-কাশির সময় ঘরের মধ্যেও শিষ্টাচারগুলো মেনে চলতে হবে।

অ্যাপার্টমেন্টের ক্ষেত্রে নিরাপত্তারক্ষী ও কেয়ারটেকারকে অধিকতর সতর্ক থাকতে হবে। বারবার সংস্পর্শে আসা দরজার হাতল, লিভ ও টয়লেট, পার্কিং স্পেস জীবাণুমুক্ত করতে হবে। বাইরের অতিথি অন্য কর্মীদের আসার ব্যাপারে নিরুৎসাহ করতে হবে, জরুরি কোনো প্রয়োজনে বাইরে থেকে কেউ এলে তার নাম, ঠিকানা, টেলিফোন নম্বর লিখে রাখতে হবে। অতিথিদের বসার স্থান, ফ্রন্ট ডেস্ক, প্রবেশপথ সব সময় পরিষ্কার রাখতে হবে।

অফিসের ক্ষেত্রে মাস্ক, হাত ধোয়ার সাবান, পানি, জীবাণুনাশক সংরক্ষণ করা, সব কর্মীকে এসব ব্যবহার সম্পর্কে সচেতন থাকা এবং কমপক্ষে তিন ফুট দূরত্বে বসা বা চলাচলের পরামর্শ দিতে হবে। তাপমাত্রা পরিমাপের ব্যবস্থা করতে হবে। আসবাব ও ঘন ঘন স্পর্শ করার স্থানগুলো বারবার জীবাণুমুক্ত রাখতে হবে, নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় কর্মীদের স্বাস্থ্য নিরীক্ষার ব্যবস্থা রাখতে হবে। অফিসে একে অন্যের সংস্পর্শে আসার সময় মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। অফিসে মিটিং সংখ্যা ও সময় ছোট করে মিটিং রুমের তাপমাত্রা সহনশীল ও বাতাস চলাচল হয় এমন রুম বেছে নেওয়া যেতে পারে।

ব্যাংকের ক্ষেত্রেও প্রায় একই ধরনের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। রেস্টুরেন্টের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা উপকরণগুলোর পাশাপাশি বিজনেস সময় কমিয়ে আনা, ক্রেতাদের ভিড়ের সুযোগ না রাখা, রিজার্ভেশনের মাধ্যমে অনুষ্ঠান নিষিদ্ধ করা, টেবিল ও চেয়ারের সংখ্যা বাড়ানো, এক টেবিলের দূরত্বে আরেকজন বসানো এবং ভিন্ন ভিন্ন খাবার পরিবেশন করতে হবে। কর্মীদের নিরাপত্তায় পরিচ্ছন্নতার ওপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।

স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে সুরক্ষাসামগ্রী জীবাণুমুক্তকরণ, কোয়ারেন্টিন ও আইসোলেশনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। রোগীদের অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন ও ফ্রি রেজিস্ট্রেশন প্রথা চালু করতে হবে। প্রবেশমুখে তাপমাত্রা পরিমাপক যন্ত্র স্থাপন করে সবাইকে মাস্ক ব্যবহার, জরুরি বিভাগ ও আইসোলেশন ওয়ার্ডের মতো জায়গাগুলোতে অতিরিক্ত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও বারবার জীবাণুমুক্তকরণের ব্যবস্থা করতে হবে। সেবাগ্রহীতাদের অবশ্যই এক মিটার দূরত্ব বজায় রেখে দাঁড়ানো নিশ্চিত করতে হবে। যথাসম্ভব সিট কভার, ব্যাক কভারের কাপড়সামগ্রী নিয়মিত ধোয়া, জীবাণুমুক্তকরণ নিশ্চিত করতে হবে। কর্মীদের মাস্ক, ডিস্পোজাল ক্যাপ, গ্লাভস পরতে হবে। সব সময় শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের তাপমাত্রা স্বাভাবিক রাখতে হবে। ওয়ার্ডে গরমের মধ্যে বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা করা গেলে ভালো হবে।

শপিং মল খোলার আগে মহামারিপ্রতিরোধী সামগ্রী সংরক্ষণ করতে হবে। প্রতিটি শপিং মল কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই আলাদা করে আপৎকালীন পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে। লকার, লিফটের বোতাম, হাতল, বাথরুমের দরজার হাতল—সব কিছু জীবাণুমুক্ত করতে হবে বারবার। ক্রেতাদের লাইন নিশ্চিত করে অবশ্যই কমপক্ষে এক মিটার দূরে অবস্থান করতে হবে। মার্কেটের ভেতরে ঢোকার ক্ষেত্রে চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

সেলুন চালু করার ক্ষেত্রে একইভাবে জীবাণুনাশক ব্যবহার, মাস্ক ব্যবহার অপরিহার্য রাখতে হবে। এসব ক্ষেত্রে কর্মীদের আগেই প্রশিক্ষণ দিতে হবে। সেলুনে ভিড় কমাতে আগে থেকেই বুকিং সিস্টেম করার পরামর্শ মেনে চলার কথা বলা হয়েছে। সেলুনে বহুল ব্যবহৃত সরঞ্জাম কমিয়ে ওয়ান টাইম সিস্টেম কার্যকর করতে হবে।

কৃষিজাত দ্রব্যের বাজার, গ্রাম্য হাট-বাজারের ক্ষেত্রে আপৎকালীন পরিকল্পনা তৈরির পাশাপাশি ছোট এলাকা পরিহার করে বড় কোনো মাঠ বেছে নিতে হবে। প্রতিটি বাজারে প্রবেশের মুখে তাপমাত্রা মাপা এবং বাজার এলাকায় ক্রেতা-বিক্রেতাদের অবশ্যই দূরত্ব নির্দেশিকা বজায় রাখতে হবে। ক্রেতা-বিক্রেতা সবার মাস্ক পরা অপরিহার্য করে দিতে হবে।

কোনো পার্কে প্রবেশের ক্ষেত্রে অনলাইন বুকিং, বাটিকের সিস্টেম করা নিরাপত্তাসামগ্রীর ব্যবহার বাড়ানো, জীবাণুনাশক ব্যবহার, উন্মুক্ত পার্কে বসার স্থান, শরীরচর্চার যন্ত্রপাতি, গণশৌচাগার, দলভিত্তিক কোনো খেলাধুলা বা আয়োজন নিষিদ্ধ থাকবে এবং বেশি মানুষের সমাগম নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

বিমান চলাচলের ক্ষেত্রে তিন স্তরবিশিষ্ট প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। যাত্রীদের পৃথকভাবে বসা বা একটি আসন পর পর বসার ব্যবস্থা করতে হবে। সেই সঙ্গে বিমানে কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থা এবং সন্দেহজনক যাত্রীদের জরুরি নির্গমনের প্রক্রিয়া ঠিক করতে হবে। বিমানবন্দর টার্মিনালে বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা করতে হবে। এ ছাড়া মারাত্মক মহামারি পরিস্থিতিতে আক্রান্ত দেশ থেকে আসা বিমানগুলোর জন্য বিশেষ পার্কিং এলাকা স্থাপনের ব্যবস্থা করতে হবে, এ ক্ষেত্রে বিমানের দূরত্ব বজায় রাখা জরুরি।

গণপরিবহন চালুর ক্ষেত্রে জীবাণুনাশক নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নিতে হবে পরিবহনকর্মী ও যাত্রীদের জন্য। মাক্স অবশ্যই ব্যবহার করতে হবে। এগুলো স্টেশনে মজুদ রাখতে হবে। যাত্রীদের তাপমাত্রা পরিমাপের ব্যবস্থা রাখতে হবে। কোনো যাত্রীর তাপমাত্রা ৩৭.৩ সেন্টিগ্রেডের ওপরে থাকলে তাকে পরিবহনে তোলা যাবে না, বরং অস্থায়ী কোয়ারেন্টিন কেন্দ্রে রাখতে হবে। যাত্রী ওঠানোর আগে বাস, ট্রেন, লঞ্চ, বিমান—সবগুলোর ক্ষেত্রেই ভালোভাবে জীবাণুনাশক দিয়ে জীবাণুমুক্ত করতে হবে। এসব পরিবহনে যাত্রী ধারণক্ষমতা সীমিত করতে হবে। টিকিট ক্রয়ের ক্ষেত্রে অনলাইন ব্যবস্থা ব্যবহার করতে হবে।

ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহারের ক্ষেত্রে গাড়িতে মাস্ক, গ্লাভস, জীবাণুনাশক রাখতে হবে। গাড়ির ভেতর বাতাস চলাচল রাখা ভালো। যদি কেউ বমি করে তবে তাত্ক্ষণিক ক্লোরাইডযুক্ত জীবাণুনাশক ও শোষণক্ষমতাসম্পন্ন কাপড় বা জীবাণুনাশক টিস্যু দিয়ে তা পরিষ্কার করতে হবে।

এই বিভাগের অন্য খবর

Back to top button