করোনা আক্রান্ত চিকিৎসককে বাচাঁলেন আরেক চিকিৎসকের সন্তান
করোনা আক্রান্ত এক চিকিৎসককে প্লাজমা প্রদান করলেন বগুড়ার আরেক চিকিৎসকের দুই সন্তান
বগুড়া জেলার কৃতি সন্তান ডা. মশিউর রহমান মল্লিক এর দুই সন্তান প্লাজমা প্রদান করলেন ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি হওয়া একজন করোনা আক্রান্ত চিকিৎসককে।
ডা. মশিউর রহমান মল্লিক এর মেয়ে ইপ্সিতা (২২) ও ছেলে অর্জন (১৮) ঢাকা মেডিকেলে করোনায় আক্রান্ত এক চিকিৎসককে গত দুদিন আগে প্লাজমা প্রদান করেছেন। ঐ চিকিৎসক করোনায় আক্রান্ত হয়ে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিলেন। জানা যায়, বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজের নিউরোসার্জন বিভাগের চিকিৎসক তিনি। কয়দিন আগে তিনি করোনায় আক্রান্ত হন। প্লাজমা থেরাপির পর আগের তুলনায় অনেকটা সুস্থ হয়েছেন বলে জানা যায়।
ইপ্সিতা ও অর্জনের বাবা ডা. মশিউর রহমান মল্লিক ও মা ডা. হেলেনা আফরিন লাজ পেশায় তারা দুজনই চিকিৎসক। ডা. মশিউর শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ, হবিগঞ্জে (সহকারী অধ্যাপক) অর্থপেডিক সার্জন হিসেবে কর্মরত এবং ডা. হেলেনা শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজে (মেডিকেল অফিসার) হিসাবে কর্মরত। জন্মসুত্রে ডা. মশিউর এর বাড়ি বগুড়া সদরের চকসুত্রাপুরে। তিনি বগুড়া জিলা স্কুল ও আজিজুল হক কলেজে পড়েছেন। এরপর এমবিবিএস শেষ করে শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ, হবিগঞ্জে (সহকারী অধ্যাপক) অর্থপেডিক সার্জন হিসেবে কর্মরত হন।
ইপ্সিতা ও অর্জনের বাবা ডা. মশিউর রহমান মল্লিক বগুড়া লাইভকে জানান, “গত মাসে আমার স্ত্রী ডা. হেলেনা ও আমাদের দুই সন্তান কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের ফলে করোনায় আক্রান্ত হয়। আমি পেশাগত কারণে হবিগঞ্জে ছিলাম। করোনা আক্রান্ত হওয়ার ফলে আমি বাড়িতে প্রায় দেড় মাস যাইনি। আমার স্ত্রী ও দুই সন্তান বাড়িতেই আইসোলেশন ও ঘরোয়া চিকিৎসার পর তাদের নমুনা ২ সপ্তাহ পর ঢাকা মেডিকেলে পরপর ৪ বার পরীক্ষার পর করোনার রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। বর্তমানে তারা সবাই সুস্থ হয়েছেন।”
ঠিক সেই সময়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজেই আইসিইউতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন ছিলেন আক্রান্ত ঐ চিকিৎসক। ঢাকা মেডিকেলের হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ডা. মশিউরের দুই সন্তানের ব্লাড গ্রুপ আক্রান্ত চিকিৎসকের সাথে মিলে যাওয়ার কারণে তার সাথে যোগাযোগ করেন এবং প্লাজমা ডোনেট করার জন্য অনুরোধ করেন। এমতাবস্থায় ডা. মশিউর তার ছেলে এবং মেয়েকে বিষয়টি জানালে তার তারা ডোনেট করার জন্য রাজী হন।
ডা. মশিউর মুঠোফোনে বগুড়া লাইভকে জানান, ”করোনার এই মহামারীতে প্লাজমা থেরাপি চিকিৎসায় বিভিন্ন দেশ সাফল্য লাভ করেছেন। আমাদের দেশেও এটির চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। আমি মনে করি করোনাকে ভয় নয় জয় করাটাই বড় চ্যালেঞ্জ। আমার ছেলেমেয়ের মতো অনেকেই নির্ভয়ে এখন প্লাজমা ডোনেট করতে পারেন করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিকে বাঁচাতে। আমি খুশি আমার ছেলেমেয়ে এই সংকটকালীন সময়ে চিকিৎসককে প্লাজমা ডোনেট করেছে এবং আক্রান্ত চিকিৎসক এখন উন্নতির দিকে।” আমার ছেলে মেয়ে দুজনেই সুস্থ রয়েছে।
বিশ্ব জুড়েই করোনার টিকা ও ওষুধ বের করার চেষ্টা চলছে। বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করে করোনার চিকিৎসা করার প্রয়াসও চলছে।
সংবাদমাধ্যম ডয়েচেভেলে’র একটি প্রতিবেদনে বলা হয় যে, দিল্লিতে সরকারি চিকিৎসকরা সেরকমই একটি পদ্ধতি ব্যবহার করে করোনার চিকিৎসায় প্রাথমিক সাফল্য পেয়েছেন। ডাক্তারি ভাষায়, এই পদ্ধতির নাম হলো প্লাজমা থেরাপি। সহজে ব্যাখ্যা করা যাক। যাঁদের করোনা হয়েছিল এবং সেরে উঠেছেন, তাঁদের শরীরে করোনার অ্যান্টিবডি তৈরি হয় বা রক্তে প্রোটিন জাতীয় পদার্থ তৈরি হয়, যা ওই ভাইরাস প্রতিরোধের ক্ষমতা রাখে। প্লাজমা পদ্ধতির অর্থ হল, ওই ব্যক্তিদের রক্ত থেকে প্লাজমা সংগ্রহ করে করোনা আক্রান্তের শরীরে দেওয়া। যাতে রোগীর শরীরেও অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। প্রাথমিকভাবে দিল্লিতে চারজনের প্লাজমা থেরাপি হয়েছিল। তার মধ্যে যে দুইজন রোগীর দেহে আগে প্লাজমা দেওয়া হয়েছিল, তাঁরা এখন প্রায় সুস্থ।