হত্যার ২ বছর পর মামলার রহস্য উদঘাটন,গ্রেফতার ৫
বগুড়ার চাঞ্চল্যকর বিপ্লব সরকার হত্যাকান্ডের রহস্য এবং এর সাথে জড়িত পাঁচ আসামীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
প্রধান হত্যাকারী রাজিব হোসেন রাজুকে যশোর থেকে গ্রেফতারের পর তার দেয়া তথ্য নিয়ে রোববার বিকেলে আরও চারজনকে বগুড়া শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে গ্রেফতার করা হয়। আভ্যন্তরীণ দ্বদ্বের জেরেই বিপ্লবকে হত্যা করা হয় বলে সোমবার বিকেল ৪টায় জেলা পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভূঞাঁ সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।
খুনের সাথে জড়িত গ্রেফতারকৃত অন্য আসামীরা হলেন শহরের খান্দার এলাকার রমজান আলীর ছেলে বেলাল হোসেন ও তার ভাই হাসান আলী, একই এলাকার আব্দুস সামাদের ছেলে আব্দুর রহমান ওরফে শুটকু, সোনাতলা উপজেলার লক্ষী নারায়ণপাড়ার মৃত রামনাত মন্ডলের ছেলে শ্রী সঞ্জয় কুমার মন্ডল।
পুলিশ সুপার বলেন, ২০১৮ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি বগুড়ার সোনাতলা উপজেলর নগরপাড়া মহিশাপাড়া গ্রামে গনিজান কালভার্টের নিচ থেকে অজ্ঞাত যুবকের বস্তাবন্দি ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করা হয়। এরপর লাশের কোন পরিচয় না পেয়ে পুলিশ বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ে করে। পরে লাশের ছবি বিভিন্ন পত্রিকা এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করার পর যুবকের বাবা বগুড়া সদরের ঠনঠনিয়া পশ্চিমপাড়ার হযরত আলী থানায় গিয়ে লাশটি সনাক্ত করেন। পরে তাকে লাশ বুঝে দেয়া হয়। এই মামলার তদন্ত ভার প্রথমে দেয়া হয় সোনাতলা থানার এসআই শরিফুল ইসলামকে। এর মাঝে তার অন্যত্র বদলি হওয়ায় দ্বিতীয় তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে এসআই আব্দুল মান্নানকে দায়িত্ব দেয়া হয়।
মামলার কোন অগ্রগতি না হওয়ায় পরে পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভূঞা’র নির্দেশে মামলাটির তদন্তভার সোনাতলার থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) জাহিদ হোসেন গ্রহণ করেন। পরে নিহত বিপ্লবের সাথে সম্পর্কিত সকলকে নজরদারিতে রেখে তদন্ত কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হয়। এর মাঝে পুলিশের ট্রেডিশনাল এবং প্রযুক্তিগত তদন্ত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া যায় প্রধান হত্যাকারী রাজিব হোসেন (২৮) আড়াই বছর ধরে যশোরে পালিয়ে আছেন। সেখানে রাজিব তার মামার বাসায় দুই বছর ধরে অবস্থান করে। এরপর সে প্রেম করে বিয়ে করে গত ছয় মাস যাবৎ একটি ভাড়া বাসায় গোপনে অবস্থান করছে। তার অবস্থান নিশ্চিত হয়ে পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভূঞা’র নির্দেশে সহকারী পুলিশ সুপার (শিবগঞ্জ-সোনাতলা সার্কেল) কুদরত ই খুদা শুভ’র নেতৃত্বে সোনাতলা থানা পুলিশ যশোর থেকে রাজিবকে গ্রেফতার করে। পরে তার দেয়া স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে খুনের সাথে জড়িত শহরের খান্দার এলাকার রমজান আলীর ছেলে বেলাল হোসেন ও তার ভাই হাসান আলী, একই এলাকার আব্দুস সামাদের ছেলে আব্দুর রহমান ওরফে শুটকু, সোনাতলা উপজেলার লক্ষী নারায়ণপাড়ার মৃত রামনাত মন্ডলের ছেলে শ্রী সঞ্জয় কুমার মন্ডলকে বিভিন্ন জায়গা থেকে গ্রেফতার করা হয়।
পুলিশ সুপার বলেন, আসামীরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে জানিয়েছে তারা সকলে একই গ্রুপের ছিলো। নিহত বিপ্লবও বখাটে ছিলো। হত্যাকান্ডের কয়েক মাস আগে থেকে রাজীবের সাথে আভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে বিপ্লবের দ্বন্দ্ব হয়। রাজীবের সাথে দ্বন্দ্বের কারণে অপর আসামী বেলাল হোসেনও বিপ্লবের সাথে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে। এর জের ধরেই বিপ্লব বেলালকে ছুরিকাঘাত করে। এ ঘটনার পর রাজীব বিপ্লবকে হত্যার পরিকল্পনা করে। রাজীবের পরিকল্পনায় গ্রেফতারকৃত অন্য আসামীরা সায় দেয়। এরপর বিপ্লবকে হত্যার উদ্দেশ্যে বগুড়া থেকে একটি ভাড়া করা প্রাইভেট কারে সোনাতলার কর্পুর বাজারের একটি চাতালে নিয়ে যায়। সেখানে আগে থেকেই অবস্থান করছিল চাতালের কর্মচারী সঞ্জয়সহ অন্যান্য আসামী রাজিব, বেলাল, হাসান, শুটকুসহ আরো কয়েকজন। সেখানে বিপ্লবকে তারা উপর্যুপরী ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে। এরপর বিপ্লবের লাশ বস্তায় ভরে সোনাতলার নগরপাড়া মহিশাপাড়া গ্রামের গনিজান কালভার্টের নিচে ফেলে পালিয়ে যায়।
প্রধান হত্যাকারী রাজিব হোসেন রাজু কে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদানের জন্য বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে এবং অন্য চার আসামীকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতের কাছে সাত দিনের রিমান্ডের জন্য আবেদন করা হয়েছে।