বিশ্বের সবচেয়ে বড় আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত হয়েছে কক্সবাজারে
দেশতো বটেই জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাবে উদ্বাস্তু হওয়া মানুষের জন্য, বিশ্বের সবচেয়ে বড় আশ্রয়ণকেন্দ্র প্রস্তুত হয়েছে কক্সবাজারে। শুধু আবাস নয়, এখানে আশ্রয় নেয়া পরিবারগুলোর স্থায়ী পুনর্বাসন ও আর্থিক সচ্ছলতা আনতেও, কর্মসূচি হাতে নিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়।
বৃহস্পতিবার (২৩ জুলাই) প্রকল্পটি উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনের পর উদ্বাস্তু ৬শ পরিবার পাবে এসব ভবনে মাথা গোঁজার ঠাঁই।
প্রাথমিকভাবে ৬শ’ পরিবার ঠাঁই পাবেন সুদৃশ্য অ্যাপার্টমেন্ট ভবনে।
প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকারভিত্তিক আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় এ প্রকল্পে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে ২০টি বহুতলভবনের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। আধুনিক মানের আশ্রায়ণ প্রকল্পে সকল সুবিধা নিশ্চিত করে তালিকাভুক্ত সকল পরিবারকে নিয়ে যাওয়া হবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসন জানান, ২০১৮ সালে কক্সবাজার বিমানবন্দর সম্প্রসারণের কাজ শুরু হয়। বিমানবন্দর লাগোয়া কুতুবদিয়াপাড়া, নাজিরারটেক ও সমিতিপাড়ার জমি অধিগ্রহণের মাধ্যমে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এ জন্য প্রথম পর্যায়ে কুতুবদিয়াপাড়ার ৬শ পরিবারকে পুনর্বাসন করা হচ্ছে।
কক্সবাজার বিমানবন্দর থেকে কয়েক কিলোমিটার পূর্বে অধিগ্রহণ করা হয় ২৫৩ দশমিক ৩৫০ একর জমি। এ প্রকল্পে ১৩৯টি পাঁচতলা ভবন ছাড়া ১০ তলার আরেকটি দৃষ্টিনন্দন ভবন হচ্ছে। ভবনটির নামকরণ হয়েছে ‘শেখ হাসিনা টাওয়ার’। এ পর্যন্ত পাঁচ তলা বিশিষ্ট ২০টি ভবনের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। প্রতিটি ভবনে ফ্ল্যাট রয়েছে ৩২টি করে। ২০টি ভবনের নামকরণও করা হয়েছে। যা হল: ১) দোঁলনচাপা, ২) কেওড়া, ৩) রজনীগন্ধা, ৪) গন্ধরাজ, ৫) হাসনাহেনা, ৬) কামিনী, ৭) গুলমোহর, ৮) গোলাপ, ৯) সোনালী, ১০) নীলাম্বরী, ১১) ঝিনুক, ১২) কোরাল, ১৩) মুক্তা, ১৪) প্রবাল, ১৫) সোপান, ১৬) মনখালী, ১৭) শনখালী, ১৮) বাকখালী, ১৯) ইনানী ও ২০) সাম্পান।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. আশরাফুল আফসার বলেন, উদ্বাস্তু পরিবারগুলোর তালিকা থেকে লটারির মাধ্যমে ১৯টি ভবনের জন্য ৬শ জনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর ফ্ল্যাট হস্তান্তর করা হবে।
এদিকে কক্সবাজার শহর থেকে সাত কিলোমিটার উত্তরে খুরুশকুল আশ্রয়ণ প্রকল্পে যাতায়াতের জন্য বাঁকখালী নদীর ওপর তৈরি হচ্ছে প্রায় ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫৯৫ মিটার দীর্ঘ সেতু ও সংযোগ সড়ক।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, খুরুশকুল আশ্রয়ণ প্রকল্প এটি প্রধানমন্ত্রীর চিন্তাপ্রসূত একটা প্রকল্প। ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ে জলবায়ু উদ্বাস্তু হয়ে উপকূলীয় এলাকা থেকে কক্সবাজার শহরের বিমান বন্দরের আশপাশে যারা মানবেতর জীবনযাপন করছিল, তাদের জন্যই মূলত প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগ।
জেলা প্রশাসক কামাল হোসেন বলেন, খুরুশকুল আশ্রয়ণ প্রকল্পে মোট সাড়ে ৪ হাজারের অধিক পরিবারকে নিয়ে যাওয়া হবে। দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রকল্প একনেকে বিবেচনাধীন রয়েছে। এটা অনুমোদন হলে দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শুরু হবে। এরপর অবশিষ্ট উদ্বাস্তু পরিবারগুলোকেও সেখানে নিয়ে যাওয়া হবে।