জাতীয়

বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ৫০ চিন্তকের একজন বাংলাদেশের স্থপতি মেরিনা তাবাসসুম

বিশ্বের সেরা ৫০ চিন্তাবিদের তালিকায় ঠাঁই করে নিয়েছেন বাংলাদেশের স্থপতি মেরিনা তাবাসসুম। ২০২০ সালের প্রকাশিত তালিকায় উঠে এসেছে তার নাম।

মেরিনা তাবাসসুম প্রাকৃতিক পরিবেশের সঙ্গে মিল রেখে ভবন নির্মাণ এবং পরিবেশের দ্বারা উদ্ভূত চ্যালেঞ্জগুলো গ্রহণ করে নকশা তৈরি করে দারুণ অবদান রেখেছেন। তারই স্বীকৃতি হিসেবে এই তালিকায় জাইগা পেয়েছেন বলে জানিয়েছে ম্যাগাজিনটি। এ প্রসঙ্গে প্রসপেক্ট ম্যাগাজিন তাদের এক প্রতিবেদনে লিখেছে, স্থপতি মেরিনা তাবাসসুমের নকশা করা স্থানীয় উপকরণের হালকা ওজনের বাড়িগুলো স্টিলের ওপর দাঁড়িয়ে থাকতে সক্ষম এবং পানির মাত্রা বেড়ে গেলে সেগুলো সরানো যায়। বিষয়গুলো আন্তর্জাতিকভাবে ভূয়সী প্রশংসা কুড়িয়েছে।

১৯৮৮ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) এর ভর্তি পরীক্ষায় প্রায় সাড়ে তিন হাজার ছাত্রছাত্রীর মধ্যে প্রথম হন মেরিনা তাবাসসুম।

বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থাপত্যে পড়াশুনা শেষ করে দেশে নতুন ধরনের বেশ কিছু কাজ করেন। তার অন্যতম জনপ্রিয় দুটি কাজ হলো সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের স্বাধীনতা স্তম্ভ এবং স্বাধীনতা জাদুঘর। বাংলাদেশের প্রথম ভূগর্ভস্থ জাদুঘর ‘স্বাধীনতা জাদুঘর’ এর দুজন স্থপতির একজন মেরিনা তাবাসসুম।

প্রকল্পের আরেকজন স্থপতি ছিলেন কাশেফ মাহবুব চৌধুরী। ১৯৯৭ সালে জাতীয় পর্যায়ের একটি প্রতিযোগিতায় জয়ী হয়ে তারা দুইজন যৌথভাবে এই প্রকল্পের দায়িত্ব পান।

মেরিনা তাবাসসুম স্থাপত্যকে পেশার চাইতেও বেশি কিছু ভাবেন। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন স্থাপত্য তার কাছে নেশার মতো। তার করা প্রত্যেকটা কাজেই নিজস্বতার ছাপ আছে। যার অন্যতম উদাহরণ বায়তুর রউফ মসজিদ।

ঢাকার দক্ষিণখান এলাকার ফায়দাবাদে তার নানি সুফিয়া খাতুনের জমি ছিল। নানির অনুরোধেই মূলত মেরিনা মসজিদের ডিজাইন করেন। ৭৫৪ বর্গমিটার জুড়ে থাকা এই মসজিদে আলো প্রবেশ করার জন্য চারটি বড় পথ ছাড়াও ছাদে ছোট ছোট ছিদ্র আছে। ফলে দিনের বেলায় ভেতরে কোনো কৃত্রিম আলোর প্রয়োজন হয় না।

মসজিদে ছাপ আছে সুলতানি আমলের স্থাপত্যকলার। পুরো মসজিদ ইটের তৈরি। এতে কোনো ধরনের রঙ বা প্লাস্টারের কাজ করা হয়নি। সাধারণ সময়ে প্রায় ৪০০ জন মুসল্লি নামাজ পড়তে পারলেও ঈদের নামাজে প্রায় ৬০০ জনেরও বেশি মানুষ এই মসজিদে নামাজ পড়েন।

এই মসজিদের জন্যই মেরিনা ২০১৬ সালে ‘আগা খান অ্যাওয়ার্ড ফর আর্কিটেকচার’-এ ভূষিত হন। প্রতি ৩ বছর পর পর দেয়া হয় এই পুরস্কার, যেটা স্থাপত্য দুনিয়ায় অনেক বড় অর্জন। মেরিনা তাবাসসুমের আগে অন্য কোনো বাংলাদেশী এই পুরস্কার পাননি।

তাকে এই পুরস্কার দেয়া হয় পরিবেশবান্ধব উপায়ে নকশা করার জন্য। তার নিজস্ব ধারার চিন্তাভাবনা ফুটে উঠেছে মসজিদের নকশায়। এই মসজিদ নিয়ে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, “আমি প্রকৃতি দেখি অন্যভাবে। ভবনের গায়ে গাছ দেবো, এভাবে প্রকৃতি দেখি না। প্রকৃতি যদি দিতে হয়, তাহলে ভবনটাই প্রাকৃতিক হতে হবে। এয়ারকন্ডিশন ও বৈদ্যুতিক বাতি লাগিয়ে একটা ভবন হাইফাই করলাম, তারপর সেখানে গাছপালা লাগালাম এটাতে বিশ্বাস করি না। প্রাকৃতিক মানে শুধুই প্রাকৃতিক হবে।”

এখন দেশের অনেক প্রান্তেই বন্যা হচ্ছে। প্রকৃতি নিয়ে মেরিনার নিজস্ব চিন্তাভাবনা থেকেই তিনি দেশের বন্যার কথা ভেবে কিছু বাড়ির নকশা করেছেন। এই বাড়িগুলি পানি বাড়ার সাথে সাথেই এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় সরিয়ে নেয়া যায়। এছাড়াও বর্তমানে তিনি বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে থাকা ভবন নিয়ে গবেষণা করে যাচ্ছেন।

সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের প্রসপেক্ট ম্যাগাজিনে বিশ্বের শীর্ষ ৫০ জন চিন্তকের তালিকায় তার নাম উঠে এসেছে। নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ এস্থার ডুফলো, বিখ্যাত কোরিয়ান সিনেমা নির্মাতা বং জুন হো’র পাশাপশি সেখানে মেরিনা তাবাসসুমকে স্থাপত্যকলায় তার অবদানের স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে।

স্থাপত্য নিয়ে কাজ করার পাশাপাশি মেরিনা দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় আর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করেছেন। ২০০৫ সাল থেকে তিনি ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিজিটিং প্রফেসরের দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া বেশ কয়েকটা জার্নালেও তিনি নিয়মিত লেখালেখি করেন।

তার এই অর্জনে বগুড়ালাইভের পক্ষ থেকে স্থপতি মেরিনা তাবাসসুমকে আন্তরিক অভিনন্দন।



এই বিভাগের অন্য খবর

Back to top button