মোবাইল ফোন তৈরির ইতিহাস – ডঃ মার্টিন কুপার
কে আবিষ্কার করেছিলো মোবাইলফোন? কার মনে জেগেছিলো মোবাইল ফোনের প্রয়োজনীয়তা অথবা কে প্রথম কথা বলেছিলো মোবাইল ফোনে? এসব প্রশ্নের উত্তর জানতে আমরা ঘুরে আসবো মোবাইল ফোনের আবিষ্কারের সেই ইতিহাস থেকে।
মোবাইল ফোনে কথা বলার বিষয়টি বর্তমানে খুবি সহজ লভ্য মোনে হলেও বিগত ২০ বছর পূর্বেও কিন্তু সকলের জন্য এটি ছিল এক প্রকারের সপ্ন। সে সময়ে তারবিহীন কোন ডিভাইস থেকে কথা বলা যাবে এই বিষয়টি হয়তো অনেকে ভাবতে পারেনি ।
এ যেন রুপকথার মতন, পৃথিবীর একপ্রান্তে বসে অপর প্রান্তে তারবিহীন যন্ত্রের সাহায্যে কথা বলার কথা কেউ এর আগের হয়তো ভাবেনি। তবে এ রুপকথাকে বাস্তবে তুলে এনেছেন মার্টিন কুপার এবং তার ২০জন কর্মীর তিন মাসের অক্লান্ত পরিশ্রমে এ প্রযুক্তি আজ মানুষের হাতে হাতে।
মোবাইর ফোনের আবিষ্কারক:-
মোটোরোলা কোম্পানিতে কর্মরত ডঃ মার্টিন কুপার এবং জন ফ্রান্সিস মিচেলক প্রথম মোবাইল ফোন আবিস্কার করেন। ১৯৭৩ সালের এপ্রিলে প্রথম সফলভাবে একটি প্রায় ১ কেজি (২।২ )পাউন্ড) ওজনের হাতে ধরা ফোনের মাধ্যমে কল করতে সক্ষম হন তাঁরা।
মোবাইলফোনের নামকরণ:-
মোবাইল অর্থ ভ্রাম্যমান বা “স্থানান্তরযোগ্য” এই ফোন সহজে যেকোনও স্থানে বহন করা এবং ব্যবহার করা যায় বলে এর নাম মোবাইল ফোন নামকরণ করা হয়েছে। এছাড়া মোবাইল ফোনকে সেলুলার ফোন,হ্যান্ড ফোন ও বলা হয়। কেননা এটি একটি তারবিহীন টেলিফোন বিশেষ।
প্রথম মোবাইলফোন:-
মার্টিন কুপার এবং তার দল প্রথম হাতে-ধরা ফোনের প্রোটোটাইপটি উপস্থাপন করেছিলেন ১৯৭৩ সালের এপ্রিল মাসে, নিউইয়র্কের হিলটন হোটেলে । সেটা কিন্তু দেখতে ছিল একেবারেই অন্যরকম । সায়েন্স ফিকশনের কমিউনিকেটর বা এ যুগের মোবাইলের সাথে তার কোন মিলই ছিল না।
সেই প্রথম মোবাইল ফোন ছিল ১০ ইঞ্চি লম্বা, দু ইঞ্চি চওড়া, এবং ৪ ইঞ্চি উঁচু। জিনিসটা ছিল অনেক ভারি। ওজন এক কিলোরও বেশি। মাত্র ২০ মিনিট কথা বললেই তার ব্যাটারির চার্জ শেষ হয়ে যেতো। কিন্তু তখনকার দিনে এর চেয়ে ভালো কিছু তৈরি করার বিষয়টিও ছিল অসম্ভব । আর সেই ফোনটি ছিল মটোরোলা কম্পানির।
মোবাইল ফোনে কথোপকথন:-
১৯৭৩ সালে এপ্রিল মাসের ৩ তারিখ নিউ ইয়র্কের সিক্সথ এভিনিউ থেকে মার্টিন কুপার সেল ফোনে প্রথম কলটি করেছিলেন এটিএন্ড কোম্পানির পরিচিত একজন ইঞ্জিনিয়ার জোয়েল ইঙ্গেলকে। তখন এটিএন্ডটি ছিলো যাকিনা বিশ্বের সবচেয়ে বড় টেলিকম কোম্পানির একটি। সেখানে মোটোরোলা নিতান্তই ছোট ছিলো।
প্রথম সেলুলার ফোন যেভাবে ব্যবহার করা হতো:-
সেলুলার ফোন প্রারম্ভিকভাবে পূর্বসুরীরা জাহাজ এবং ট্রেন থেকে এনালগ রেডিও কমিউনিকেশনের সাহায্যে ব্যবহার করত। মার্টিন কুপাররা যে ফোন তৈরি করেছিলেন সেটাতে ৩০টি সার্কিট বোর্ড ব্যবহৃত হয়েছিল। তার ওজন ছিল একটা বড় চিনির প্যাকেটের মতো।
মোবাইল ফোনের বৈশিষ্ট্য:-
কালের বিবর্তনে নানা সময় উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে মোবাইল ফোনে। তাই বলা যায় প্রযুক্তিগত বিবর্তনে মোবাইল ফোনের বৈশিষ্ট্যও পরিবর্তন হয়। তবে কিছু প্রধান বৈশিষ্ট্য রয়েছে ।
যেমন:- তড়িৎ কোষ বা ব্যাটারী – ফোনের শক্তির উৎস হিসেবে কাজ করে।
কোন ইনপুট পদ্ধতি যার সাহায্যে ফোন ব্যবহারকারীর সাথে ফোনের মিথস্ক্রিয়া বা দ্বি-পাক্ষিক যোগাযোগ সম্ভব হয়। সবচেয়ে বহুল ব্যবহৃত ইনপুট পদ্ধতি হচ্ছে কী প্যাড তবে ইদানীং স্পর্কাতর পর্দা বা টাচ স্ক্রীন তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
সাধারন মোবাইল ফোন সেবা যার দ্বারা ব্যবহারকারী কথা বলতে বা খুদে বার্তা পাঠাতে পারেন। জিএসএম ফোনগুলোয় সিম কার্ড থাকে। কিছু কিছু সিডিএমএ ফোনে রিম কার্ড থাকে।
প্রতিটি স্বতন্ত্র ফোনের জন্য একটি করে স্বতন্ত্র আইএমইআই (IMEI) নাম্বার যার সাহায্যে ওই ফোনটিকে সনাক্ত করা যায়।
নিম্নস্তরের মোবাইল ফোনকে প্রায়ই ফিচার ফোন বলে ডাকা হয় এবং এগুলো শুধুমাত্র প্রাথমিক টেলিফোন যোগাযোগ সুবিধা দেয়। আর কিছু মোবাইল ফোন আরও অগ্রসর সুবিধা এবং কম্পিউটারের মত সেবা প্রদান করে, তাদেরকে স্মার্ট ফোন বলে।
মোবাইল ফোনের বাণিজ্যিক ব্যবহার:-
মোবাইল ফোনের প্রথম বাণিজ্যিক সংস্করণ বাজারে আসে ১৯৮৩ সালে, ফোনটির নাম ছিল মোটোরোলা ডায়না টিএসি ৮০০০এক্স (DynaTAC 8000x)। ১৯৯০ সাল থেকে ২০১১ সালের মধ্যে পৃথিবীব্যাপী মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১২.৪ মিলিয়ন থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৬ বিলিয়নের বেশি হয়ে গেছে। পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার প্রায় ৮৭% মানুষ মোবাইল ফোন ব্যবহার করে থাকে।
মোবাইল ফোনের প্রসার:-
মোবাইল ফোনের প্রসার দিনদিন বেড়েই চলছে। মোবাইল ফোন যে এতদ্রুত মানুষ গ্রহন করবে তা হয়তো কুপার নিজেও ভাবেনি। প্রতিটি মানুষের হাতে এখন মোবাইল ফোন। তারবিহীন এ মোবাইল ফোনের এত সফলতার দেখে মার্টিনকুপার বলছেন ‘আমার মনে হচ্ছে আমরা ঠিক কাজটাই করেছিলাম’
৯০ বছর বয়সী মার্টিন কুপার এখনো নিত্যনতুন আবিষ্কার করছেন।ক্যালিফোর্নিয়ায় বাস করেন তিনি। তিনি এখন ভাবছেন কিভাবে স্বাস্থ্য বিধি মেনে কানে লাগিয়ে রাখার মতন ছোট মোবাইল ফোন তৈরি করা যায়।