লাইফস্টাইল

নারীদের ওপর লকডাউনের প্রভাব এবং আপনি কীভাবে ভালো থাকবেন

রিসার্চাররা সতর্ক করেছেন, কোভিড ১৯ মহামারী বিশ্বজুড়ে নারী ও অল্পবয়স্ক মেয়েদের ওপর বিস্তর প্রভাব ফেলতে পারে। মানুষের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উপর লকডাউনের খারাপ প্রভাব পড়েছে। যেভাবে আপনি এই প্রভাব থেকে মুক্ত থাকতে পারেন:

#১. নারীদের ওপর করোনা মহামারীর প্রভাব
ওয়েবএমডি ওয়েবসাইট কিছুদিন আগে একটি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা করে। গবেষণায় ৪৭% নারী জানান, করোনায় ঘরে থাকার কারণে তাদের ওজন বেড়েছে।

২২ % পুরুষ আইসোলেশনে থেকে খানিকটা স্বাস্থ্যবান হয়েছেন। জুন মাসে প্রকাশিত ক্লিনিক্যাল ওবিসিটি জার্নাল জানায়, লকডাউনের কারণে যারা স্থূলকায় এমন আমেরিকানদের অবস্থা আরো খারাপ হচ্ছে।

৭০ শতাংশ স্থূলকায় রোগী রিপোর্ট করেছেন, তাদের জন্য ওজন কমানোর লক্ষ্য পূরণ এখন যথেষ্ট কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। ১০ জনের মধ্যে ৬ জনই বলেছেন, স্ট্রেস থেকে বেশি খাওয়ার ব্যাপারটা তাদের ক্ষেত্রে অনেক বেড়ে গেছে।

অনেকে অবশ্য আগেই মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে ভুগছিলেন। ৭২ শতাংশেরও বেশি মানুষ করোনার সময়টাতে উদ্বেগ আরো বাড়ার কথা জানিয়েছেন। ৮৩ শতাংশের বেশি মানুষ বলছেন তারা স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে অনেক বেশি হতাশাগ্রস্থ। অনেকে জানিয়েছেন, লকডাউনে থাকতে থাকতে তাদের খাওয়া দাওয়া, ব্যায়াম এসবে অনেক বদল এসেছ। ভালো অভ্যাসগুলির নিয়মিত চর্চাও আর হচ্ছে না।

#২. নিজের যত্ন নিতে আপনি যা করতে পারেন
এইরকম পরিস্থিতিতে প্রতিটি নারীকে বাড়ির কাজকর্ম, রান্নাবান্না, বাচ্চাদের যত্ন নেওয়া থেকে শুরু করে বাড়িতে বসে অফিসের কাজ সবকিছুই দেখাশোনা করতে হয়। নিউট্র্যাসি লাইফস্টাইলের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী ড. রোহিনী সোমনাথ পাতিল বলেন, এটি শারীরিক ও মানসিক উভয়ভাবেই তাদের স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। তবে, নারীরা চাইলে নিজেদের যত্ন নিতে অনেক কিছুই করতে পারেন।

#৩. আগে নিজের যত্ন নিন
এটা ঠিক যে নারীরা সব মনোযোগ নিজেদের বাচ্চা আর ফ্যামিলিকেই দেন। কিন্তু এই করতে গিয়ে নিজের কথা ভুলে গেলে চলবে না। সবার জন্য ভাবতে হলে নারীকে নিজেকেই সুস্থ থাকতে হবে আগে। সবার চাইতে বেশি ভালো থাকতে হবে। আপনারা নিজেদের জন্য ডায়েট তৈরি করুন। প্রচুর পানি পান করুন। প্রতিদিন সাত থেকে নয় ঘণ্টা ঘুমানোর চেষ্টা করুন।

#৪. ফ্রাই করা খাবারকে ‘না’
কোনো খাবারকে উচ্চ তাপমাত্রায় তেলে ভাজলে সেটাকে ভাজা বা ফ্রায়েড ফুড বলে। এ ক্ষেত্রে তেলের তাপমাত্রা প্রায় ১১০-১৮০° সেলসিয়াসে পৌঁছে যায়। তেলে যে বুদবুদ দেখা যায় সেগুলি আসলে তেলের বুদবুদ নয়, খাবার থেকে বেরিয়ে আসা জলীয় বাষ্প। খাবার ভাজা হলে সেটার ফ্লেভার বৃদ্ধি পায়, তাতে একধরনের সোনালি আভা আসে এবং শাইনি বা উজ্জ্বল টেক্সচার দেখা যায়। এরকম চমৎকার দেখতে হলেও এই ধরনের খাবারে পুষ্টিগুণ সাধারণ রান্নার চেয়ে অনেক কম থাকে। আর এ ধরনের খাবারে থাকা অতিরিক্ত তেল আপনার শরীর, ত্বক দুইয়ের ওপর খারাপ প্রভাব ফেলবে।

তাই প্রতিদিন পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। ফ্রেশ, পরিমিত রান্না হওয়া, মোটামুটি মশলাযুক্ত।

#৫. উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ ডায়েট গ্রহণ
৩৫ এর পরে নারীদের শরীরে খুব দ্রুতই নানান পরিবর্তন আসে। তাই ডায়েটে প্রচুর প্রোটিন রাখুন। যা শরীরের রিজেনারেটিভ মেটাবলিক প্রসেসের উন্নতিতে সহায়তা করবে। ডায়েটে পর্যাপ্ত ফাইবার ও প্রচুর শাকসবজি থাকা দরকার। অন্তত ৬ রকমের শাকসবজি, ২/৩ রকমের ফল, যা থেকে পর্যাপ্ত প্রোটিন সংগ্রহ করতে পারবেন।

#৬. ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট
তিরিশের মাঝামাঝি সময়ে হাড়ের ঘনত্ব, ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি উল্লেখযোগ্যভাবে কমতে শুরু করে। তাই, সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে এই সময়ে ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করে আপনার শরীরে কোন কোন জিনিসের ঘাটতি আছে তা জেনে নিয়ে খাওয়া-দাওয়া করুন। ডাক্তার কোনো সাপ্লিমেন্ট দিলে খান। বিশেষ করে আপনার বয়স যদি ৪০ এর বেশি হয়।

#৭. আ্যন্টিঅক্সিডেন্ট
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার যেমন হলুদ, রসুন, বেরি, গ্রিন টি, দারুচিনি, আমলা, বাদাম এবং নানা রকম বীজ শরীরের অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমাতে সহায়তা করে। তখন শরীরে বার্ধক্যের প্রক্রিয়াটি ধীর গতিতে হয়। পরিশোধিত চিনি, প্রক্রিয়াজাত খাবার, দুধ এড়িয়ে চলুন। ডায়েটে সব ধরনের মৌসুমী শাকসবজি, ফল, ভুট্টা , ডাল, ডিম, মাছ, বাদাম এবং বীজ জাতীয় খাবার রাখুন।

#৮. যেসব খাবার এবং স্ন্যাকস স্ট্রেস কমায়, ডায়েটে সেগুলি রাখুন
প্রচুর ফলমূল ও সবুজ শাকসবজি খান। কমলালেবু, আঙুরের মতো ভিটামিন সি-সমৃদ্ধ ফল খান। ফোকাস করুন এমন খাবারগুলির ওপর যা স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করবে। স্ন্যাক্সের জন্য হালকা ভাজা কাঠবাদাম খেতে পারেন। শসা, কলা, বিভিন্ন বীজ খেতে পারেন।

#৯. শরীরচর্চা
ব্যায়াম খুবই দরকারি সুস্বাস্থ্যের জন্য। অনেক কিছুই করতে পারেন এজন্য। দৈনিক ৪০ মিনিট ঘরের মধ্যে হাঁটা থেকে শুরু করে অনলাইন দেখে জুম্বা, পাইলেট, যোগব্যায়াম, অ্যারোবিক অনুশীলন দিয়ে দিন শুরু করলে সারা দিন আপনার সতেজ অনুভব হবে, অ্যানার্জি থাকবে এবং দেখবেন পজিটিভ লাগছে, আনন্দ বোধ হচ্ছে।

#১০. মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে যা করতে পারেন
•দৈনিক ২০ মিনিট করে মেডিটেশন বা ধ্যান করুন
• প্রতিদিন সকালে ও বিকালে প্রাণায়াম ও শ্বাস নেওয়ার কৌশল অনুশীলন করতে পারেন
• রোজকার রুটিনে ভালো লাগার যেকোনো শখ যোগ করুন। যেমন, গান গাওয়া ও শোনা, নাচ প্র্যাক্টিস করা, ছবি আঁকা, ছবি দেখা ইত্যাদি
• সময় বের করে এমন কাজ করুন যা আপনাকে আনন্দ দেয়

এই বিভাগের অন্য খবর

Back to top button