নেতিবাচকতা থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখার ১০টি উপায়
নেতিবাচক মানুষদের আশেপাশে থাকাটাই আপনাকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে তুলতে পারে। কারণ দীর্ঘকাল স্থায়ী হয়, অসন্তুষ্টি ও অশান্তি তৈরি করে। এভাবে জীবনে অনেক অনেক অর্জন, শান্তি আর প্রাপ্তি থাকলেও সুখী হওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। এই অবস্থা থেকে নিজেকে রক্ষা করবেন কীভাবে?
#১. অন্যের নেতিবাচক চিন্তাকে ব্যক্তিগতভাবে নেবেন না
নেতিবাচক মানুষরা শুধু আপনার সাথেই না, বরং সবার সাথেই নেতিবাচক আচরণ করেন সচরাচর। তাদের কথাবার্তা ও কাজকর্ম মানে তাদের চিন্তাভাবনা ও মনোভাবেরই বহিঃপ্রকাশ। মনে রাখবেন, অন্যদের কাজকর্ম, কথাবার্তা ও মতামত পৃথিবীকে তারা কীভাবে দেখে তার ওপর ভিত্তি করেই গড়ে ওঠে। তা দ্বারা প্রভাবিত হলে আপনিই বিপদে পড়বেন।
#২. আশাবাদী ও ইতিবাচক মানুষদের সাথে থাকুন
আপনার ব্যক্তিত্ব অনেকটাই নির্ভর করে আপনি কাদের সাথে সময় কাটাচ্ছেন তার ওপর। আপনি যদি রূঢ়, হতাশ কিংবা নেতিবাচক মানুষের সাথে বেশি সময় কাটান, তাহলে আপনার মধ্যেও সেই আচরণগুলি প্রকাশ পাবে। তাই, আপনি যেমন মানুষ হতে চান, তেমন মানুষদের সাথে মেশার চেষ্টা করুন। যাদের নিয়ে গর্ববোধ করেন, পছন্দ করেন, যারা আপনাকে ভালোবাসে ও সম্মান করে, যারা সাথে থাকলে আপনার সময় বেশ ভালো কাটে এমন মানুষের সাথে বন্ধুত্ব করুন।
#৩. পৃথিবীটা যেমন দেখতে চান, নিজেকে তেমন করে গড়ে তুলুন
পৃথিবীর সব সমস্যা আপনি দূর করতে পারবেন না। তবে নিজের মূল্যবোধ, সচেতনতা, সহানুভূতি ও আশাবাদ দিয়ে পৃথিবীর একটা ছোট অংশকেও সুন্দর জায়গায় পরিণত করতে পারবেন। হতাশ বা নেতিবাচক মানুষের সাথে কথা বলার সময় জীবনের ইতিবাচক দিক যেমন দৈনন্দিন ঘটা কোনো ভালো ঘটনা, কমন ফ্রেন্ড, আপনার পছন্দের কাজ ও মানুষ, ভালো খবর ইত্যাদি বিষয়ে কথা বলুন। এরকম ব্যক্তিদের সাথে কথা বলার সময় জীবনের ভালো দিকগুলিতে ফোকাস করুন যাতে আপনারা দুইজনই কথা বলার জন্য কমন টপিক খুঁজে পান। এই পদ্ধতিতে অপর ব্যক্তি তার নেগেটিভিটি প্রকাশ করতে কম সুযোগ পাবে।
#৪. চিন্তাভাবনার ধরন বদলে ফেলুন
জীবনে ঘটে যাওয়া বাজে ঘটনাগুলি সমস্যার না, এই ঘটনাগুলির প্রতি আপনি কীরকম প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন আর তা আপনার ওপর কী প্রভাব ফেলছে, সমস্যাটা সেখানেই। অভিযোগ, দোষারোপ ও সমালোচনা করলে পরিস্থিতি বদলে যাবে না। নেতিবাচক মনোভাব নিয়ে ইতিবাচক জীবনযাপন করা যাবে না―এটা মনে রাখবেন। বরং নেতিবাচক চিন্তাভাবনা শুরু হয়ে গেলে জীবনের ভালো সুযোগগুলি কমে আসবে।
#৫. সমাধান খোঁজায় মনোযোগ দিন
অনেকেই পৃথিবীর রূঢ়তা ও জটিলতা থেকে নিজেকে বাঁচাতে নেতিবাচকতাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেন। তাতে জীবনকে উন্নত করার অনেক সুযোগ থেকে বঞ্চিত হন। সমস্যা নিয়ে দুশ্চিন্তা না করে সমাধান খুঁজুন। ইতিবাচক সমাধান খোঁজার পেছনে সময় ব্যয় করুন।
#৬. চারপাশের মানুষদের ভালোবাসুন
উদার হওয়ার চেষ্টা করুন। ভালোবাসা ও উদারতার মাঝে থাকলে নেতিবাচক চিন্তাভাবনা সহজে মনে স্থান পায় না। কারো সাথে কথা বলার সময় তার প্রশংসা করুন। নিজেকে নিজের মতো সবচেয়ে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করুন, এবং মানুষকে আপনার সাথে মেশার ও জানার সুযোগ দিন। মাঝে মাঝে নেতিবাচক চিন্তা মাথায় আসলেও তা দূরে ঠেলে দিতে বন্ধুদের সদয় কথাবার্তা ও যত্নই যথেষ্ট।
#৭. প্রয়োজনের সময় সাহায্য করুন
অনেকে অভিযোগ করার মাধ্যমে সাহায্য চেয়ে থাকেন। তারা হয়তো নিজের অজান্তেই কাজটা করেন, তাই তাদের কথাবার্তাকে নেতিবাচক অভিযোগ মনে হয়, অনুরোধ না। এ বিষয়টা আলাদা করে বুঝতে চেষ্টা করুন যখন কেউ এরকম আচরণ করছে। “সব ঠিক আছে”র মতো ছোটখাটো প্রশ্ন দিয়েই আপনি তাদের সমস্যা সম্পর্কে জানতে পারবেন। সমালোচনা ও মনগড়া ব্যাখ্যা দাঁড় করানো থেকে বিরত থাকুন। সবসময় সহানুভূতির জন্য জায়গা রাখুন মনে। মানুষকে আপনার আচরণ ও কথাবার্তা দিয়ে জানান দিন যে আপনি তাদের সাথে আছেন, তারা একা না।
#৮. জীবনে উত্থান পতন আছে
নেতিবাচক ঘটনাকে মেনে নিন, এর থেকে শিক্ষা নিন এবং জিনিসটা মাথা থেকে একেবারে ঝেড়ে ফেলুন। নেতিবাচকতাকে আঁকড়ে ধরে রেখে সময় নষ্ট করবেন না। জীবন উত্থানপতনে ভরা। মেনে নিয়ে তার থেকে শিক্ষা গ্রহণ করলেই আগাতে পারবেন।
#৯. বর্তমানের দিকে মনোযোগ দিন
প্রায়ই দেখা যায় আমরা অতীতের ঘটনা বয়ে বেড়াই। অনুশোচনা, লজ্জা, রাগ, দুঃখ এগুলো থেকে বের হতে পারি না। অতীতের এসব নেতিবাচকতাকে আপনার বর্তমান জীবনের আনন্দ নষ্ট করতে দেবেন না। অতীতে আপনাকে কোনো সমস্যায় পড়তে হয়েছে কিংবা আপনার সাথে কোনো খারাপ ঘটনা ঘটেছে, এই ঘটে যাওয়া জিনিসগুলি আপনি পরিবর্তন করতে পারবেন না। কিন্তু এই সময়টায় আপনি চাইলে ভালো থাকতে পারেন। জীবনের সম্ভাবনাগুলির দিকে তাকাতে পারেন। নতুন কিছু করতে পারেন।
#১০. এগিয়ে যাওয়া শিখুন
সবকিছু ব্যর্থ হলেও, নিজেকে ভুল পরিস্থিতি ও সম্পর্ক থেকে সরিয়ে ফেলুন। নেতিবাচক পরিস্থিতি থেকে নিজেকে কখন সরিয়ে আনতে হবে তা বুঝতে শিখুন। নেতিবাচক ব্যক্তিদের সংস্পর্শ থেকে সরে আসার মানেই যে তাদেরকে আপনার ঘৃণা করতে হবে এমন না। এর অর্থ হচ্ছে আপনি নিজের ভালো থাকার দিকে মনোযোগ দিচ্ছেন।