টুরিজম

বিশ্ব পর্যটন দিবসঃ পর্যটন খাতে ঘুরে দাঁড়ানোর আশা

করোনার বিরূপ প্রতিক্রিয়ায় বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের পর্যটন খাতও অস্তিত্বের সংকটে পড়েছে। তবে আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে সবকিছু। নতুন স্বাভাবিকতায় তাই ঘুরে দাঁড়ানোয় চেষ্টায় রয়েছে দেশের পর্যটন খাত সংশ্নিষ্টরা। আবার খুলছে হোটেল, মোটেলসহ পর্যটন স্পট। দর্শনার্থীও দিন দিন বাড়ছে। সংশ্নিষ্টদের আশা, নতুন কোনো সংকট তৈরি না হলে তারা করোনার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারবেন।

পর্যটন খাতকে বাঁচাতে সরকারের পক্ষ থেকেও নেওয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ। এই পরিস্থিতির মধ্যে গত ২৭ সেপ্টেম্বর বিশ্বজুড়ে পালিত হচ্ছে বিশ্ব পর্যটন দিবস। জাতিসংঘের বিশ্ব পর্যটন সংস্থা এ বছর দিবসটির মূল প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছে ‘পর্যটন ও গ্রামীণ উন্নয়ন’।

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী বলেছেন, পর্যটন খাতকে ঘুরে দাঁড় করাতে ‘রিকভারি প্ল্যান’ নেওয়া হয়েছে। এর আওতায় সরকার অনেক পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে প্রণোদনা প্যাকেজের ক্ষেত্রে অবশ্যই এ খাতের ব্যবসায়ীদের যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে হবে।

মহামারিতে পর্যটনের অবস্থা:

ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (টোয়াব) সভাপতি রাফিউজ্জামান রাফি বলেন, এই মহামারিতে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে পর্যটন খাতে। প্রায় ৪০ লাখ মানুষ কর্মহীন হয়েছেন। অনেক ট্যুর অপারেটর অফিস বন্ধ করে দিয়েছেন। এ পরিস্থিতি চলতে থাকলে বেশিরভাগ ট্যুর অপারেটরের ব্যবসা বদলে ফেলতে হবে।

তিনি জানান, অনেক আগেই টোয়াবের পক্ষ থেকে বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয় ও ট্যুরিজম বোর্ডকে ক্ষয়ক্ষতির বিবরণ, কারণ এবং ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা ও কর্মপরিকল্পনার সুপারিশসহ একটি প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জীবিকা নিয়ে সংকটে পড়েছেন ট্যুর অপারেটর, ট্রাভেল এজেন্ট, হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট, রেস্তোরাঁ, এয়ারলাইন্স, পর্যটক পরিবহন, ক্রুজিং, গাইডসহ এ খাত-সংশ্নিষ্ট অন্তত ৪০ লাখ পেশাজীবী।

শুধু টোয়াবের সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলোর দেওয়া হিসাব বিশ্নেষণ করে দেখা যায়, ভাইরাসের কারণে বাংলাদেশের পর্যটনশিল্পে প্রায় পাঁচ হাজার ৭০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। সার্বিকভাবে এই খাতে মোট ক্ষতির পরিমাণ কমপক্ষে ১২ হাজার কোটি টাকা। এ কারণে মহামারি কেটে গেলেও এর ধকল সামলে উঠতে পর্যটন খাতের অন্তত দুই বছর লেগে যেতে পারে। লড়াইয়ে টিকে থাকার জন্য সরকারের পক্ষ থেকেও সুরক্ষা সহযোগিতা জরুরি।

এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে প্রতিবেদনে দেশের পর্যটন খাত বাঁচাতে ১৬ দফা স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি সুপারিশ করা হয়েছে। এসব সুপারিশের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- সরকারের পক্ষ থেকে টোয়াব সদস্যদের আপৎকালীন আর্থিক সহায়তা দেওয়া; প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত আর্থিক সহায়তা প্যাকেজ-১-এর অন্তর্ভুক্ত ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প ও সার্ভিস সেক্টরের প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল সুবিধা দিতে ব্যাংক ব্যবস্থার মাধ্যমে স্বল্পসুদে ৩০ হাজার কোটি টাকার ঋণ সুবিধা রাখা হয়েছে।

রিকভারি প্ল্যান:

প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী বলেন, বর্তমানে আন্তর্জাতিক পর্যটন সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। তাই অভ্যন্তরীণ পর্যটন বিকাশের বড় সুযোগ এসেছে। এ ক্ষেত্রেই এখন বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

তিনি জানান, রিকভারি প্ল্যানের অংশ হিসেবে ৬৪টি জেলার কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়মিত অনলাইন বৈঠক শুরু হয়েছে। বৈঠকে তিনি নিজেও যুক্ত থাকছেন। বৈঠকগুলোতে অভ্যন্তরীণ পর্যটনের সম্ভাবনা কীভাবে কাজে লাগানো যায়, তা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।

এ জন্য প্রতি জেলায় ট্যুরিজম ইনফরমেশন সেন্টার স্থাপন, যেসব স্থানে পর্যটকরা যান সেগুলোকে আরও আকর্ষণীয় ও নিরাপদ করার ব্যবস্থা নেওয়া, নতুন ট্যুরিজম আকর্ষণ তৈরি করার কথা বলা হচ্ছে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, রিকভারি প্ল্যানের পাশাপাশি পর্যটন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোকে মহামারি সংকট মোকাবিলায় প্রধামনমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট কর্তৃপক্ষ, ট্যুর অপারেটর, ট্রাভেল এজেন্সিসহ পর্যটন ব্যবসা-সংশ্নিষ্টরা সরকার ঘোষিত নিয়ম মেনে প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে পারবেন।

সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজের সুবিধা অন্যান্য খাতের ব্যবসায়ীরা যেভাবে নিচ্ছেন, পর্যটন খাতের ব্যবসায়ীদেরও একই প্রক্রিয়ায় সেই সুবিধা নিতে হবে। এক্ষেত্রে তারা সহায়তা চাইলে অবশ্যই দেওয়া হবে।

সুত্রঃ সমকাল

এই বিভাগের অন্য খবর

Back to top button