কাহালু’র চাঞ্চল্যকর গোলা বারুদ উদ্ধারে সাক্ষ্য গ্রহণ হয়নি ১৬ বছরেও
বগুড়ার কাহালু উপজেলায় এক ট্রাক গুলি ও বিস্ফোরক উদ্ধারের ঘটনায় দায়ের করা চারটি মামলার বিচারকাজ চলছে ১৬ বছর ধরে। এটির অভিযোগপত্র দাখিলকারী তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির সাবেক সহকারি পুলিশ সুপার মুন্সি আতিকুর রহমান সাক্ষী দিতে গরহাজির থাকার কারণে শুনানি পিছিয়ে যাচ্ছে।
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার তদন্তে সাজানো আসামি দেওয়ার অভিযোগে মুন্সি আতিককে ওই মামলার আসামি করা হয়। তিনি গ্রেপ্তার হন। ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ে মুন্সি আতিককে তিন বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। পরে তিনি আপিল করে জামিন নিয়ে বেরিয়ে আসেন।
বগুড়ার গোলাবারুদ উদ্ধার মামলায় তাকে সাক্ষী হিসেবে বার বার তলব করা হলেও তিনি এখনো হাজির হননি।
২০০৩ সালের ২৭ জুন রাতে কাহালু উপজেলার যোগারপাড়া গ্রামে আনারস ভর্তি ট্রাক থেকে আনা ৯৯ হাজার ৯৮৯টি চাইনিজ রাইফেলের গুলি ও উচ্চ মতাসম্পন্ন ১৭৪ কেজি বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়। তখন মামলাগুলো দায়ের করেন কাহালু থানার তখনকার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ওয়াহিদুর ইসলাম ও এ এফ এম জাবিদ হাসান।
অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, এসব গুলি ও বিস্ফোরক আনা হয় হবিগঞ্জের চুনারুঘাট থেকে। তখন ১৫৮ জনকে সাী করে মামলা হয় ট্রাকচালক আলতু মিয়া, আশিষ দেব বর্মা, আখলাকুর রহমান পিন্টু, তার স্ত্রী আনোয়ারা বেগম বিথি, হারুন অর রশিদ এবং আতিকুর রহমান দুলুর বিরুদ্ধে। আখলাকুর রহমান ঘটনার পর থেকে নিখোঁজ। তবে ট্রাকচালক আলতু মিয়া, আয়োয়ারা বেগম বিথি, আতিকুর রহমান দুলু, হারুন অর রশিদ গ্রেপ্তার হন। অনেক পরে ধরা পড়েন আশিষ দেব বর্মা।
পরে উচ্চ আদালতের নির্দেশে মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয় অতিকুর রহমান দুলু ও হারুন অর রশিদকে। জামিনে আছেন আনোয়ারা বেগম বিথি, ট্রাক চালক আলতু মিয়া ও আশিষ দেব বর্মা।
অতিরিক্ত সরকারি কৌসুলি (পিপি) উৎপল কুমার বাগচি এসব তথ্য দিয়ে জানান, ইতিমধ্যে চার মামলায় স্যা দিয়েছেন ৮৪ জন। তবে এখনও ৬৪ জনের স্যাগ্রহণ বাকি। এসব মামলার তারিখ পড়েছে ১৪৪ বার।
উৎপল বাগচি জানান, তদন্ত কর্মকর্তা মুন্সি আতিককে এ মামলার স্যা দিতে এ পর্যন্ত ২১ বার তলব করা হয়েছে। কিন্তু তিনি হাজির হননি। তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা পাঠানো হয়েছে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) অফিসের মাধ্যমে। তাতেও কোনো কাজ হয়নি। তাকে হাজির করা সম্ভব হয়নি। আসামি আখলাকুর রহমান পিন্টুর মতোই তার অবস্থানও জানা যাচ্ছে না।
মামলার কার্যক্রমে বিলম্বের আরেকটি কারণ বগুড়ার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে অনেক দিন ধরে বিচারক ছিলেন না।
মামলায় অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, ২০০৩ সালে হবিগঞ্জের চুনারুঘাট থেকে ট্রাকে করে গুলি ও বিস্ফোরক নেয়া হচ্ছিল বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে। আসামীদের একজন আইন-শৃংখলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের জানান, আনারসে-ঢাকা ট্রাকভর্তি গুলি ও বিস্ফোরক বগুড়ার বনানী এলাকায় আসার পর মামলা থেকে অব্যাহতি পাওয়া একজন তা নিয়ে যান কাহালুর জোগারপড়া গ্রামে।
হরতাল থাকায় ট্রাকটি সীমান্তে নিয়ে যেতে না পারায় আখলাকুর রহমানের বাড়ি ভাড়া করা হয়। এক পর্যায়ে স্থানীয় জনগণ কৌতুহলী হয়ে পড়ে থাকা ট্রাকটিতে উঠে পড়ে। আনারস নিতে গিয়ে বেরিয়ে পড়ে গুলির বাক্স ও বিস্ফোরক। এরপর পুলিশ স্থানীয় পুকুর, ডোবা আর নদীর পাশাপাশি আখলাকুর রহমান পিন্টু ও তার স্বজনদের বাড়ি থেকে উদ্ধার করে আরও গুলির বাক্স ও বিস্ফোরকের বস্তা।
ঘটনার দিন ট্রাকে যারা গুলি ও বিস্ফোরক দেখেছেন, তাদের একজন কাহালু উপজেলার লয়াপাড়া গ্রামের ফুলচান। তিনি জানান, ঘটনাস্থলে হাজার হাজার মানুষের ভিড় জমে গিয়েছিল।
একই উপজেলার জোগারপাড়া গ্রামের আব্দুল হামিদ খান জানান, ইটের ভাটায় রাখা ট্রাকের আনারসের নিচ থেকে বেরিয়ে আসা বাক্সে গুলি আর বস্তায় যে বিস্ফোরক ছিল, তা জানতেন স্থানীয়রা।
বগুড়ার সরকারি কৌসুলি (পিপি) আব্দুল মতিন বলেন, ‘বিচার কাজ দ্রুত শেষ করতে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট আদালতে বিচারকও নিয়োগ করা হয়েছে।’