শিক্ষা এখন বিলাসিতা _ নব্যদীপ্তি
কোভিড ১৯ এর ভয়াল থাবার বিশ্ব থমকে দাঁড়িয়েছে।অর্থনৈতিক,সামাজিক ভাবে বিপন্ন হয়ে উঠেছে দেশের অবস্থা। গত একবছরে জিডিপি ২২ শতাংশ কমার সম্ভবনার পাশাপাশি বেসরকারি বিনিয়োগ জিডিপির ২৪.৪ শতাংশ থেকে কমে ১২.৭ শতাংশে ধাবিত হয়েছে। এছাড়া করোনার পূর্বে দেশের দ্রারিদের হার ২০.৫ ছিল যা লকডাইনে ৩৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে(সি ডি পি)। ভাইরাসের ভয়ানক সংক্রমন বাংলাদেশের মত মধ্যম আয়ের দেশে চালিয়েছে রীতিমত ধ্বংস যোগ্য,তারই ধারাবাহিকতায় শিক্ষাব্যবস্থার দুর্দশা ভংগুর হয়ে পড়েছে।
ইউনোস্কোর তথ্য অনুযায়ী বিশ্বে একশো বাহাত্তর কোটি শিক্ষার্থী শিখন ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে এবং বাংলাদেশে এর সংখ্যা ৪ কোটি। এছাড়া বিশ্ব বিদ্যালয়ের ১২ লাখ শিক্ষার্থীদের ক্লাস এবং পরীক্ষা পিছিয়েছে। গত ১৭ মার্চ থেকে করোনা সংক্রমন এড়াতে দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয়া হয়। এই ছুটির দিন ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকে,যা হয়ে ওঠে শিক্ষার্থীদের জন্য চরম বির্পযয়।
এমনবস্থায় উন্নত দেশ গুলাকে অনুসরণ করে বাংলাদেশেও চালু করা হয় অনলাইন ক্লাস। বিভিন্ন অ্যাপের মাধ্যমে ভার্চুয়াল ক্লাস রুমে শিক্ষক ছাত্র আবারও ফিরে পায় তাদের ক্লাসরুম। চলতে থাকে পড়াশোনা, বলছিলাম সমাজের উচ্চ বিত্ত এবং উচ্চ মধ্যবিত্ত শিক্ষার্থীদের কথা।
তবে যেখানে করোনা পরিস্থিতিতে একদিকে ভাইরাসের সংক্রমন অপরদিকে ক্ষুদ্র পেশা বা শিল্পের ধসের কারণে কর্মহীন পরিবারের সদস্যরা নিজেদের মৌলিক অধিকার আদায়ে হিমশিম খাচ্ছে সেখানে ইন্টারনেট সংযোগ নিয়ে অনলাইন ক্লাস করা তাদের কাছে যেন দুস্বপ্নের মতো।
চড়া দামে ইন্টারনেট কিনে ক্লাস করা সেই সাথে বন্ধ থাকা বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এর মাসিক বেতন পরিশোধ যেন বোঝা হয়ে দাড়িয়েছে মধ্যবিত্ত পরিবারের।আর গরিব পরিবারের শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষা এখন বিলাসিতা মাত্র। শুধু তাই নয় অধিকাংশ গ্রাম এলাকা আধুনিকতার ছোয়া থেকে অনেকাংশেই পিছিয়ে।
অনলাইন ক্লাসের জন্য প্রয়োজনীয় ডিভাইজ সরবারহ করার সক্ষমতাও নেই তাদের পরিবারের।এছাড়া সবথেকে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে আমাদের শিক্ষক সমাজের। তাদেরও অনেকে আধুনিক হলেও এই শিক্ষাব্যবস্থায় অভ্যস্ত নয়।প্রযুক্তি নির্ভর এই অনলাইন শিক্ষাব্যবস্থার পর্যাপ্ত ট্রেনিং না থাকায় তারাও শ্রেণিকক্ষের যথাযথভাবে মান নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হচ্ছে না।
এরই পাশাপাশি সিম কোম্পানীগুলোর ইন্টারনেট প্যাকের দাম অত্যাধিক বৃদ্ধি হয়ে দাঁড়িয়েছে শিক্ষা লাভের অন্তরায়। এরই পাশাপাশি ২০২০ সালের এস এস সি পরীক্ষা করোনার প্রকোপে পিছিয়ে পড়ে। কোন অবস্থাতেই পরীক্ষা নেয়া সম্ভব হয় নি।
শিক্ষা মন্ত্রনালয় এর এক বিবৃতিতে ২০২০ সালের এইচ এস সি বাতিল ঘোষণা করা হয়,যা নিয়ে চারিদিকে চলতে থাকে আলোচনা সমালোচনা। শিক্ষার্থীদের মাঝেও দেখা গেছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। একদল শিক্ষার্থী যেখানে আনন্দের সাথে সাধুবাদ জানিয়েছে সেখানেই আরেকদল শিক্ষার্থী প্রকাশ করেছে ক্ষোভ।
গত ২১ শে অক্টোবর মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীর ঘোষনায় সকল শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পরবর্তী শ্রেণিতে উন্নীত করার ঘোষণা দিয়েছেন।যদিও এই পরিস্থিতি বিবেচনায় অত্যান্ত কার্যকর সিধান্ত। তবে চিন্তার বিষয় শিক্ষার্থীদের যথাযথ জ্ঞানের অভাব,শিক্ষায় ঘাটতি।প্রতিটি শ্রেণিতে উন্নতিকরণের পূর্বে অবশ্যই পর্যাপ্ত শিক্ষা প্রদান ও যাচাই প্রয়োজন,যার ফলে আমরা পেতে পারি একটি শিক্ষিত প্রজন্ম।
অনলাইন ক্লাস এক্ষেত্রে হতে পারে পাঠদানে যুগোপযোগী মাধ্যম। তবে সে ক্ষেত্রে করোনা পরিস্থিতিতে কখনোই দেশের শতকরা ১০০ ভাগ শিক্ষার্থীদের অনলাইনে শিক্ষা প্রদান সম্ভব নয়। বিশিষ্ট শিক্ষাবিদদের দাবি,খুব দ্রুত ইন্টারনেট সহজলভ্য করতে হবে এরই পাশাপাশি শিক্ষকদের যথাযথ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ করে ভার্চুয়্যাল শ্রেণিকক্ষের মান উন্নত করতে হবে।
এছাড়া ক্লাসের জন্য প্রয়োজনীয় ডিভাইস সমুহ দরিদ্র শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে।সেশনজট এড়াতে শিক্ষামন্ত্রনালয়ের এর সার্বিক মনিটরিং এর পাশাপাশি শিক্ষকদের সচেতন হবে হবে এবং শতভাগ শিক্ষার্থীদের কাছে শিক্ষার অধিকার পৌছে দেয়ার জন্য যাবতীয় বিষয় পর্যবেক্ষন করতে হবে। পরিশেষে সুনিশ্চিত হোক সকলের শিক্ষা,এগিয়ে যাক বাংলাদেশ।