সারাদেশ

বিয়ের ৩৪ দিন পর কিশোরীর মৃত্যু, স্বামী-শাশুড়ির বিরুদ্ধে মামলা

টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলায় বিয়ের ৩৪ দিন পর নুর নাহার (১৪) নামে সেই কিশোরী বধূর মৃত্যুর ঘটনায় অবশেষে স্বামী ও শাশুড়ির বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।

রোববার নিহত নুর নাহারের বাবা নুরু মিয়া বাদী হয়ে বাসাইল থানায় মামলা করেন, যার মামলা নং-০১, তারিখ ০১.১১.২০২০ইং। মামলাটি ৩০৪-ক/৩৪ পেনাল কোড-১৮৬০ ধারামতে রুজু করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। তবে মঙ্গলবার পর্যন্ত স্বামী রাজিব খান ও শাশুড়ি বিলকিস বেগম গ্রেফতার হয়নি।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, গত মাসের ১১ তারিখ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় কিশোরীর মৃত্যু হয়। এ খবর জানাজানি হলে ওই কিশোরীর স্বামীর বাড়ির কেউ মৃতদেহটি দেখতেও যায়নি।

উল্লেখ, দরিদ্র পরিবারে জন্ম নুর নাহারের (১৪)। অভাব অনটনের কারণে বাবা-মা গার্মেন্টসে চাকরি করেন। এ জন্য ছোটবেলা থেকেই বাবা-মা তাকে নানার বাড়িতে রেখে পড়াশোনা করাচ্ছিলেন। এ বছর নুর-নাহার অষ্টম শ্রেণিতে ছিল। মেধাবী ছাত্রী হিসেবে স্কুলে সুনামও ছিল। তার চোখে-মুখে কৈশোরের দুরন্তপনা। এখনও বোঝা হয়নি বিয়ে কি? হঠাৎ করেই গত ২০ সেপ্টেম্বর প্রবাস ফেরত ৩৫ বছর বয়সী রাজিব খান নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে এই অপ্রাপ্ত বয়সে তাকে বিয়ে দেওয়া হয়। ছেলে প্রবাসী হওয়ায় নুর-নাহারের পরিবার লোভ সামলাতে না পেয়ে তার হাতে তুলে দেয় মেয়েকে।

অপ্রাপ্ত বয়সে বিয়ে হওয়ায় শারীরিক সম্পর্কের কারণে নুর নাহারের রক্তক্ষরণ হয়। তারপরও থামেনি স্বামী রাজিবের পাষন্ডতা। এরপর গত শনিবার (২৪ অক্টোবর) নুর নাহার ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। ঘটনাটি ঘটেছে টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার ফুলকি পশ্চিমপাড়া গ্রামে।

নুর নাহার ও তার প্রবাসী স্বামী রাজিব খাননিহতের পরিবার সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ফুলকি পশ্চিমপাড়া গ্রামের আব্দুর রশিদের ছেলে প্রবাস ফেরত রাজিব খানের সঙ্গে একই উপজেলার কাউলজানী ইউনিয়নের কলিয়া গ্রামের বাসিন্দা লাল খানের নাতনি কলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী নুর নাহারের বিয়ে হয়। অপ্রাপ্ত বয়সে বিয়ে হওয়ায় বিয়ের পর থেকেই তার গোপনাঙ্গে রক্তক্ষরণ হয়। এক পর্যায়ে নুর নাহারের শশুরবাড়ির লোকজন তাকে কবিরাজ দিয়ে চিকিৎসা করান। রক্তক্ষরণ হলেও তার স্বামীর পাশবিকতা বিন্দুমাত্র কমেনি। গত ২২ অক্টোবর তাকে টাঙ্গাইলের একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে ভর্তি করানো হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে মির্জাপুর কুমুদিনী হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার (২৪ অক্টোবর) রাতে তার মৃত্যু হয়। পর দিন রবিবার (২৫ অক্টোবর) ময়নাতদন্ত শেষে নানার বাড়ির স্থানীয় কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

এ ব্যাপারে মামলার বাদী মো. নুরু মিয়া বলেন, আমার মেয়ের স্বামী রাজিব খান ও তার মা বিলকিস বেগমের অবহেলায় নুর নাহারের মৃত্যু হয়েছে। আমি তাদের বিচার চাই।

এ ব্যাপারে বাসাইল থানার ওসি হারুনুর রশিদ বলেন, এ ঘটনায় মামলার পর আসামিদের ধরতে পুলিশ অভিযান পরিচালনা করছে। শিগগিরই আসামিদের গ্রেফতার করা হবে বলেও তিনি জানান।

এই বিভাগের অন্য খবর

Back to top button