‘তেঁতুলতত্ত্ব’ প্রয়োগে ধর্ষণ রোধের পরামর্শ দিলেন সাংসদ বাবলু
বগুড়া-৭ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য মো. রেজাউল করিম বাবলু জাতীয় সংসদে বলেছেন, দেশজুড়ে ধর্ষণের ঘটনা বৃদ্ধির জন্য নারীবাদীরা দায়ী।
এমনকি, হেফাজতে ইসলামের সাবেক আমির শাহ আহমদ শফীর কথার সঙ্গে একমত পোষণ করে তিনি নারীদের তেঁতুলের সঙ্গে তুলনা করেছেন।
বগুড়া-৭ আসনের সংসদ সদস্য নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ (সংশোধন) বিল, ২০২০ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে এমন মন্তব্য করেছেন।
মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা বিলটি উত্থাপন করেন, যা কণ্ঠ ভোটে পাস হয়। এতে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডের বিধান নিশ্চিত করা হয়।
সংসদ সদস্য মো. রেজাউল করিম বাবলুর মতে, নারী মুক্তির নামে নারীবাদীরা নারীদের স্বাধীন হতে উত্সাহিত করছে। এতে ধর্ষণকারীরা ধর্ষণে উত্সাহিত হচ্ছে।
তিনি হেফাজতে ইসলামের প্রয়াত আমিরের ‘তেঁতুল তত্ত্ব’ প্রয়োগ করার পরামর্শও দেন। হেফাজতে ইসলামের প্রয়াত আমির ২০১৩ সালে নারীদের তেঁতুলের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন।
রেজাউল করিম বাবলু বলেন, ‘মাননীয় স্পিকার, আল্লামা শফীর তেঁতুল তত্ত্ব যদি ব্যবহার করা হয়, তাহলে ধর্ষকরা নিরুৎসাহিত হবে… এবং তাদের মধ্যে ধর্মীয় অনুভূতি বাড়বে।’
২০১৮ সালে সংসদ নির্বাচনে বিএনপির সমর্থন নিয়ে বগুড়া-৭ (গাবতলী- শাজাহানপুর) থেকে নির্বাচিত হন মো. রেজাউল করিম বাবলু।
সংশোধিত এই বিলটিকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবেও উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা অনেক আইন প্রণয়ন করেছি, তবে যথাযথ প্রয়োগের অভাবে আইনগুলো অকার্যকর হয়ে থাকে।’
সাংসদ হওয়ার দুই মাসের মধ্যেই দুর্নীতির বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন বাবলু। হলফনামায় তিনি বলেছেন, তার বার্ষিক আয় ৫ হাজার টাকা। ভোটে দাঁড়ানোর আগে জমা টাকা ছিল ৩০ হাজার। চলাফেরা করতেন একটি পুরোনো মোটরসাইকেলে। তবে সংসদ সদস্য হওয়ার দুই মাসের মধ্যেই ভাগ্য খুলেছে তার। চড়ছেন ৩৪ লাখ টাকার গাড়িতে। তার দাবি, গাড়ি কেনার টাকা ‘উপহার’ হিসেবে পেয়েছেন। তবে এলাকায় প্রচার আছে, শাজাহানপুর উপজেলার অবৈধ ইটভাটা মালিকদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তিনি এই গাড়ি কিনেছেন।
কিছুদিন আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অগ্নেয়াস্ত্র প্রকাশ্যে দিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মধ্যে পড়েন বাবলু।
ভাগ্যের ফেরে সাংসদ
রেজাউল করিম সাংসদও হয়েছেন ভাগ্যের ফেরে। বগুড়া-৭ আসনটি ‘জিয়া পরিবারের আসন’ হিসেবে পরিচিত। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের জন্মস্থান গাবতলী ও পাশের উপজেলা শাজাহানপুর নিয়ে এ আসন গঠিত। ১৯৯১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত সব জাতীয় নির্বাচনেই এ আসনে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। সাজাপ্রাপ্ত আসামি হওয়ায় গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি তিনি।
এখানে বিএনপির মনোনয়ন পান দলের গাবতলী উপজেলা শাখার মোরশেদ মিলটন। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগপত্র গৃহীত না হওয়ায় তাঁর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে যায়। আসনটি বিএনপিশূন্য হয়ে যায়। এখানে আওয়ামী লীগেরও প্রার্থী ছিল না। মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টিকে আসনটি ছেড়ে দেয় আওয়ামী লীগ। তবে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বড় অংশ ছিল স্বতন্ত্র প্রার্থী ফেরদৌস আরা খানের পক্ষে। তিনি গাবতলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির আজম খানের স্ত্রী এবং শহর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক রফি নেওয়াজ খানের শাশুড়ি।
এই অবস্থায় ভোটের এক দিন আগে স্বতন্ত্র প্রার্থী রেজাউল করিমকে সমর্থন দেয় স্থানীয় বিএনপি। ট্রাক প্রতীক নিয়ে তিনি ১ লাখ ৯০ হাজার ২৯৯ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। আর সাংসদ হওয়ার দুই মাসের মাথায় বদলে যায় আর্থিক অবস্থাও।