জন্মের পরেই শিশু পাবে ‘ইউনিক’ আইডি নম্বর
জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম বলেছেন, নতুন প্রকল্পে ২০২২ সালের মধ্যে দেশের সব ভোটারের হাতে স্মার্ট কার্ড দেয়া হবে। ভোটার নয় এমন ১০ বছর বয়স থেকে ১৭ বছর বয়সীদেরকে দেয়া হবে পেপার লেমিনিটেড কার্ড। এছাড়া জন্মের পরপরই প্রত্যেক শিশুকে দেয়া হবে ইউনিক আইডি নম্বর। আর জাতীয় পরিচয়পত্র সার্ভিস দেবে দেশের সকল সেবা সংস্থাকে। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর নির্বাচন কমিশন ভবনে ‘আইডিইএ দ্বিতীয় পর্যায় প্রকল্প’ একনেক সভায় অনুমোদন এবং প্রকল্পের সার্বিক বিষয়বস্তু নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এ কথা বলেন তিনি।
সাইদুল ইসলাম বলেন, জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ১০ হাজার ৭০২ কোটি ২৩ লাখ টাকা খরচে ৭টি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। একনেক সভায় নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের ‘আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর এনহ্যান্সিং একসেস টু সার্ভিসেস (আইডিইএ) (২য় পর্যায়)’ প্রকল্পে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুমোদন দিয়েছেন। যার খরচ ধরা হয়েছে ১ হাজার ৮০৫ কোটি ৯ লাখ টাকা। চলতি বছরের জুলাই থেকে ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে।
একসেস টু সার্ভিসেস ২য় পর্যায় প্রকল্পে যেসব কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে তা হলো- ১.নতুন ভোটার নিবন্ধন, স্থানান্তর, কর্তন, তথ্যের ভুল সংশোধন সংক্রান্ত কার্যক্রম বাস্তবায়ন এবং অধিকতর দক্ষতা ও স্বচ্ছতার সঙ্গে নাগরিক সেবা। ২. ভোটার তালিকা প্রস্তুতকরণ এবং অনুর্ধ্ব ১৮ (১০+) নাগরিকদের নিবন্ধনের জন্য গাইডলাইন প্রস্তুতকরণ ও কর্মপ্রক্রিয়া সুনির্দিষ্টকরণ। ৩. রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক ক্ষেত্রে সকল পরিসেবা যথাযথভাবে নিশ্চিত করার মাধ্যমে শান্তি শৃঙ্খলা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা, সরকারি সেবায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ। ৪. ডাটাসেন্টার (ডিসি) এবং ডিজাস্টার রিকভারি সিস্টেম (ডিআরএস) এর সার্ভার, হার্ডওয়্যার, কম্পিউটার সামগ্রী, ইকুইপমেন্ট ইত্যাদি ২০১১ সাল থেকে ব্যবহৃত হচ্ছে। ফলে এসব যন্ত্রপাতির কার্যক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে। এসব যন্ত্রের প্রতিস্থাপন, আপগ্রেডেশন ও রক্ষণাবেক্ষণ সম্পন্ন না হলে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ডাটাসেন্টার হুমকির সম্মুখীন হবে এবং পরিচিতি সেবা ব্যহত হবে, বিধায় প্রস্তাবিত প্রকল্পের আওতায় সার্ভারের সক্ষমতা বৃদ্ধিসহ নতুন ইকুইপমেন্ট সংগ্রহের পরিকল্পনা করা হয়েছে। ৫. ডাটাবেজে অন্তর্ভুক্ত এবং নিবন্ধনযোগ্য সব নাগরিকের ১০ আঙুলের ছাপ ও আইরিশ সংগ্রহ ও সংরক্ষণ, বায়োমেট্রিক ম্যাচিং সম্পন্ন করার মাধ্যমে দ্বৈততা পরিহারকরণ, খসড়া ও চ‚ড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রস্তুত। ৬. নিবন্ধন, সংশোধন, স্থানান্তরজনিত দলিল স্ক্যান করে সেগুলোর হার্ড ও স্ক্যান কপি সংরক্ষণের জন্য ডাটা ওয়্যারহাউজ প্রস্তুত। ৭. আইডি কার্ডে ১০ ডিজিট-বিশিষ্ট ইউনিক পরিচিতি নম্বর প্রদান করাসহ ইউনিক আইডি নম্বর বিভিন্ন সেবাপ্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংযুক্ত করার কার্যক্রম চলমান। জন্ম নিবন্ধন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে একটি শিশুর জন্মের পরপরই তাকে এই ১০ ডিজিটের ইউনিক আইডি নম্বর দেয়া হবে। ফলে আর্থ সামাজিক প্রেক্ষাপটে শুধুমাত্র পরিচিতিই নয় বরং ব্যক্তির সামগ্রিক অধিকার রক্ষা ও আমৃত্যু সামাজিক সেবাপ্রাপ্তি নিশ্চিত করবেভ। ৮. তিন শতাধিক প্রতিষ্ঠানকে ই-কেওয়াইসি সেবা প্রদান এবং এ কার্যক্রমে নির্ভরযোগ্য তথ্য হিসেবে এনআইডি ডাটাবেজের ব্যবহার অব্যাহত রাখা। ৯. প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকদের দ্রæততম সময়ে নিবন্ধন, পরিচয়পত্র প্রদান এবং প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ সৃষ্টি। ১০. এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে দুর্নীতি হ্রাস পাবে, রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক ক্ষেত্রে সকল পরিসেবা যথাযথভাবে নিশ্চিত হবে এবং সরকারি সেবায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে যা সমাজে শান্তি শৃঙ্খলা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সহায়ক ভূমিকা রাখবে। ১১. প্রকল্পটি যথযথভাবে বাস্তবায়িত হলে তা ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে মূল প্লাটফর্ম হিসেবে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
এছাড়াও আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর এনহ্যান্সিং একসেস টু সার্ভিসেস (আইডিইএ প্রকল্প ) প্রকল্পে যেসব কার্যক্রম চলমান থাকবে।