বিশ্বের ‘শীর্ষ তথ্য-মহাদেশ’ হচ্ছে ইউরোপ!
তথ্যের দৌড়ে এগিয়ে যেতে বেশ কয়েকটি নতুন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন। তথ্যপ্রযুক্তির ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের একছত্র আধিপত্যকে টক্কর দিতেই ইইউ এই নতুন প্রকল্পগুলো নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করছে।
ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের অভ্যন্তরীণ বাজার বিষয়ক কমিশনার থিয়েরি ব্রেটন ও ইইউ এর ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্গরেট ভেস্টাজের বুধবার ব্রাসেলসের একটি সংবাদসম্মেলনে জানান যে, শিগগিরই তথ্য নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে কয়েকটি নতুন পরিকল্পনা নিয়ে আসছেন তারা। কীভাবে ইউরোপের নাগরিক, ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন সরকারি সংস্থারা তাদের তথ্য আরো ভালোভাবে ব্যবহার করতে পারবেন, তা-ই নিশ্চিত করবে ইইউ’র প্রস্তাবিত পরিকল্পনাগুলি।
সংবাদমাধ্যমকে ব্রেটন বলেন যে, এই নীতিগুলির বাস্তবায়ন ইইউকে বিশ্বের ‘এক নম্বর তথ্য-মহাদেশ’ বানাতে সাহায্য করবে। এতে করে ২০১৬ সালে চালু হওয়া কঠোর তথ্যপ্রযুক্তি আইনে কোনো বদল না আসলেও ইউরোপের বিভিন্ন ব্যবসায়ী ও গবেষণা সংস্থার কাছে তথ্য আরো সহজলভ্য করে তোলা হবে। এই পদক্ষেপগুলি ইউরোপের ডিজিটাল অর্থনীতিতে মার্কিন ও চীনা আধিপত্য কমিয়ে নিজস্ব প্রযুক্তিব্যবস্থাকে বাড়তি সুযোগ দেবে বলে মনে করছেন ব্রেটন ও ভেস্টাজের।
স্বনির্ভর ‘তথ্য মহাদেশ ইউরোপ’ গড়তে একটি ‘ডাটা হাব’ বা তথ্যভাণ্ডার চালু করার কথা রয়েছে এই নতুন পরিকল্পনায়, যা ইউরোপের অভ্যন্তরীণ তথ্যকে সহজলভ্য করবে স্থানীয় সংস্থাদের কাছে। কিন্তু এবিষয়ে উঠছে তথ্যসুরক্ষার প্রশ্ন, যা ইউরোপের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও সংবেদনশীল বিষয়। এর উত্তরে, নতুন পরিকল্পনার ভূমিকা নিয়ে ভেস্টাজের বলেন, ‘ইউরোপের ভেতরে ইউরোপীয় সংস্থাদের ব্যবহারের জন্য মুক্ত তথ্য যতটা গুরুত্বপূর্ণ, ঠিক ততটাই গুরুত্বপূর্ণ আইন, যা মানুষের মধ্যে আস্থা ও ভরসা জোগাবে। তবে সব তথ্যই যে মুক্তভাবে ছেড়ে দিতে হবে, এমনটা নয়। কিন্তু যদি তা করা হয় এবং দেখা যায় যে সেই তথ্য কিছুটা ঝুঁকিপূর্ণ, সেক্ষেত্রে এই ধরনের তথ্যের পূর্ণ সুরক্ষা নিশ্চিত করা হবে।’
গুগল ও ফেসবুকের মতো বড় প্রযুক্তি প্লাটফর্মের বর্তমান মডেলের সামনে ইউরোপের এই ‘নিয়ন্ত্রিত অথচ মুক্ত’ ধাঁচের মডেল নতুনত্ব বয়ে আনবে, বলে মত ভেস্টাজেরের। এইসব বিশেষ তথ্যের ভাণ্ডারকে তিনি বিদ্বেষী মনোভাব, ভুয়া খবর ও জাল পণ্যের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণেও কাজে লাগাতে চান। শুধু তাই নয়, নতুন পরিকল্পনা চালু হলে গুগল ও ফেসবুক যে অ্যালগোরিদম ব্যবহার করে বিজ্ঞাপন প্রচার করে, তা-ও এই তথ্যভাণ্ডারের কাছে জমা দিতে হতে পারে।
ব্রেটনের মত, এই ব্যবস্থার বাস্তবায়ন হলে লাভবান হবেন ইউরোপের ছোট ব্যবসায়ী ও তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থারা। সাথে, লাভবান হতে পারে চিকিৎসা পরিষেবা, জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ন্ত্রণ থেকে উন্নত কৃষিপ্রযুক্তিও, বলছে ইইউ। এই প্রকল্পের বাস্তবায়নে খরচ হতে পারে মোট সাত থেকে এগারো বিলিয়ন ইউরো (বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রায় ৭০ হাজার কোটি থেকে ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা)।
সূত্র: এপি, এফপি, রয়টার্স।