নব্যদীপ্তি_শুদ্ধ চিন্তায় তারুণ্য

বিজয় এবং প্রজন্মের উদাসীনতা

একটা গল্প বলতে চাই… একটু কাল্পনিক দৃশ্যপটের আশ্রয়ে যেতে চাই একটু ১ বছর আগের প্রেক্ষাপটে ।

Someone – কি নিয়ে আবার তোমরা justice চাচ্ছো?
আমি – জানেন না? আমাদের দেশের গর্ব, বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার, আমাদের ক্রিকেটের প্রাণ সাকিব আল হাসান ভাইকে ১ বছরের জন্য নিষিদ্ধ করেছে, তাই আমরা আন্দোলন করছি ।
Someone – ওহ! 😄 এই ব্যাপার…
আমি – 😠 আপনি হাসছেন কেনো? এত খারাপ খবরে আপনি হাসছেন? তো দেশপ্রেম বলতে কিছু নাই মনে হয় আপনার ভেতর ।
Someone – কি যে বাবা..! তোমাদের কাছে দেশপ্রেম বলতে কি বুঝায় তা তো জানি না । তবে আমার দেশের কি যেন একটা হয়েছিলো, সেই ১৯৫২ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত সময় লেগেছে আমার দেশটাকে ঠিক করতে । এরপর একটু বিশ্রামে গিয়েছিলাম । কিন্তু ঘুমটা ভাঙ্গার পর দেখি জায়গাটা আমার অচেনা!!
আমি – কি আবোল তাবোল বকছেন? পাগল নাকি সরুন তো আমার অনেক কিছু লিখতে হবে, Justice চাইতে হবে….
Someone – তা আমাকেও একটু নিয়ে চলো, আমিও তোমাদের আন্দোলনে যোগ দিবো । এত হাহাকার করছো, তা নিশ্চয় তোমরা ন্যায়ের জন্যই লড়ছো ।
আমি – 😂😂😂😂 এই রোদের মধ্যে কোথায় নিবো আপনারে? বাড়ির সামনেই বসে চা খাচ্ছি আর ভালো আছি৷ আর শোনেন এই যুগে মোবাইলেই সব হয়…
Someone – মোবাইলে??? তোমরা রাস্তায় নামো না? সবাই একত্র হও না?? তোমাদের তীব্র, বলিষ্ঠ কন্ঠের হুংকারে কি শহর বন্দর গ্রাম কেঁপে উঠে না?? ন্যায়ের তেজস্বী স্লোগানের ভয়ে অন্যায়কারীর বুক প্রকম্পিত হয় না???
আমি – আচ্ছা চাচা?? কি বাল ছালের আলাপ শুরু করছেন আপনি?? সরেন তো এমনি তে মন খারাপ, হায় দেশের ক্রিকেটের যে কি হবে!! আর শোনেন,আমাদের অধিকার আদায় আমরা করতে জানি । আপনি এখন রাস্তা মাপেন!!
অতঃপর ক্রাচে ভর করে পঙ্গু পা নিয়ে “Someone” তার দেশকে খুঁজতে লাগলো, সে খুঁজতে লাগলো ৫২ এর রক্তমাখা রাস্তা, সে নতুন করে দেখতে চাইলো ৭ মার্চের উত্তাল রেসকোর্স ময়দানের জনতার ঢল…. খুঁজতে চাইলো ১৬ ডিসেম্বরের বিকালের সেই উল্লাসিত জনতার বিজয় মিছিল….
আজও আছে কি তেমনই?? 😔🙃

হয়ত তেমন পরিবেশ মন-মানসিকতা এখনকার যুগে নেই৷ সবকিছু আপডেট এবং প্রযুক্তির নিয়ন্ত্রণে এসেছে তাই আমাদের জীবন ধারায় সবকিছুর চিন্তাভাবনাও পাল্টেছে৷ বর্তমান প্রজন্মের কাছে দেশ নিয়ে সম্পর্কিত ব্যাপারটাই অন্যরকম ।
স্বাধীন দেশে আমাদের মূল চাওয়াটা কি হতে পারতো? সুস্থ মানসিকতা নিয়ে ন্যায়ের পথে চলা, দেশের নাগরিক হিসেবে সকল দ্বায়িত্ব পালন করা, নিজের অধিকার আদায় করে নেয়া এবং এসব সকল বিষয়ে অসামঞ্জস্য কিছু হলে নিজের স্বাধীন মত প্রকাশ করা কিংবা একটা পর্যায়ে আন্দোলনের মাধ্যমে আদায় করে নেয়া । আবার সবাই যদি নিজ নিজ অবস্থানে শক্ত থাকতে পারতাম? নিজের গলা উচিয়ে ন্যায়ের কথা প্রতিষ্ঠা করতে পারতাম জীবনের সকল ক্ষেত্রে তাহলে এতকিছুর দরকার হতো না ।
১৯৭১ সালে ফেসবুক ছিলো না, হ্যাশট্যাগ দিয়ে নিজের দেশকে স্বাধীন করার আকুতি ছিলো না,
১৯৭১ সালে গুজব ছিলো না, মিথ্যার কোনো প্রশয় ছিলো না । এজন্যই দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষ একসাথে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো নিজেদের প্রাণের মায়া ত্যাগ করে শুধু না দেখা একটি বলিষ্ঠ আগুন ঝংকার কন্ঠের ডাকে । দেশের জন্য এভাবে সকলের একসাথে একই দিকে কনভার্ট হওয়াকে বলে সত্যের ওপর বিশ্বাস এবং নিজেদের স্বার্থের আত্মত্যাগ ।
এই স্বাধীন দেশে ৪৯ বছর পর এসেও আমরা আমাদের বিজয়ে উদাসীন । প্রতি বছরে দুটি উৎসব আসে মার্চের ২৬ তারিখ এবং ১৬ ই ডিসেম্বর । এই দুটো তারিখকে ঘিরে ভার্চুয়্যাল মিডিয়ায় দেখতে পাবো কোটি কোটি দেশপ্রেমিক কিন্তু এই দেশপ্রেমটা কতজনের মন থেকে আসে? নাকি এসব শুধুই লোকদেখানো হিসাব? আমি অবশ্যই নিজের দেশকে নিয়ে লিখতেই পারি হাজার হাজার অনুপ্রেরণার গল্প কিন্তু সেগুলা মন থেকে আসে না কারন আমরা আসল দেশপ্রেমিক না । নাগরিক হিসেবে, মানুষ হিসেবে আমরা শুধু মুখে মুখে সব মানার কথা বলি, জ্ঞান দেই উপদেশ দেই । বাস্তবে আমার দেশের প্রতি ভালোবাসার কোনো প্রতিফলন নেই ।
আমরা প্রযুক্তির ছোঁয়ায় অবশ্যই আপডেট হবো, সবদিকে দেশের নাম গর্বের অবস্থানে নিয়ে যাবো তবে সবকিছু করতে হবে বাস্তবতাকে স্পর্শ করে । আমার সাজানো নকল মানসিকতা দিয়ে শুধুমাত্র ফেসবুকে দুটো উপদেশ দিয়ে দেশকে উদ্ধার করতে পারবো না । বাস্তবেও কথা বলতে হবে সত্যকে ঘিরে সকল প্রজন্মের সাথে মানসিকতা হতে হবে সৎ এবং সাহসী ।
তাই আমার কাছে বর্তমান সময়ের “বিজয় দিবস” কেমন যেনো বড্ড মলিন, অতি সাধারণ । বিজয় মানেই যে শিউরে উঠা গর্বের অনুভূতি সেটা পাইনা ।
তবে এই প্রজন্ম চাইলেই পরিবর্তন আনতে পারে যেমন নিরাপদ সড়ক আন্দোলন, ধর্ষণ বিরোধী আন্দোলন সহ উল্লেখযোগ্য কিছু… এই আন্দোলনগুলো সফল কারন আমাদের মানসিতা ছিলো শক্ত, ন্যায়ের প্রতি অবিচল এবং অধিকার আদায়ের ক্ষিপ্রতা ।
এজন্য আমাদের মনে শক্ত ভাবে ধারন করতে হবে ২১ শে ফেব্রুয়ারী, ২৬ শে মার্চ এবং বিজয় ।
সময়, প্রযুক্তি, জীবনযাত্রার পরিবর্তন যতই হোক বাস্তবে আমাদের দেশের প্রতি ভালোবাসা সবসময়ই প্রকাশ করে যেতে হবে তাহলে আমাদের বিজয় স্বার্থক, বিজয় দিবস পালন করা স্বার্থক।

মেহেদী হাসান রাজ
নব্যদীপ্তিশুদ্ধচিন্তায়_তারুণ্য

এই বিভাগের অন্য খবর

Back to top button