নব্যদীপ্তি_শুদ্ধ চিন্তায় তারুণ্য

বিজয় আনন্দ কোথায়?ব্যয়বহুল আলোকসজ্জায় নাকি…

কোথা থেকে যেন গান ভেসে এলো
“আমি গাইব গাইব বিজয়ের গান,ওরা আসবে চুপি চুপি
যারা এই দেশ টাকে ভালবেসে দিয়ে গেছে প্রাণ”

ঘড়িতে তখন রাত ১২ টা,মানে বিজয়ের প্রহর শুরু হয়ে গেছে।বিজয় মানে তো উল্লাস,বিজয় মানে শান্তি,বিজয় মানে মুক্তি!
আসলেও কি তাই?শীতের রাতের হাড় কাঁপানো ঠান্ডায় ফুটপাতে শুয়ে ফানুশ উড়ানো দেখার মাঝে কি উল্লাস অথবা মুক্তির কোন চিহ্ন পরিলক্ষিত হয়?
রাতের নিস্তব্ধতায় দূর থেকে কানে আসা এই দেশপ্রেমের গানগুলোর একেকটা শব্দ যেন নতুন এক অনুভূতি জাগাচ্ছে,গায়ে কাঁটা দেওয়া একেকটা গান যেন মনে করিয়ে দিচ্ছে,বিজয় কি শুধু আমাদের উচ্চ কিংবা মধ্যবিত্তদের জন্যই ছিনিয়ে আনা হয়েছিল?গায়ে লেপ জড়িয়ে নরম বিছানায় শুয়ে আমি যেখানে এই পটকা আতশবাজি অথবা গানের আওয়াজ উপভোগ করছি,আনন্দ অনুভব করছি বিজয়ের,রাস্তার কিনারে শুয়ে থাকা অসহায় কোন এক মা ও তার সন্তানের অনুভূতিও কি আজ আমার ই মত?
৩০ লাখ শহীদ কি আত্মত্যাগ করেছিলেন শুধু বিত্তশালীদের বিজয়ের সুখ এনে দিতে?

বাংলাদেশের এক অঘোষিত কালচারে পরিণত হয়েছে বোধহয় এই নিষ্ঠুর বিলাসবহুল উদযাপন।একদিকে যে দিনগুলোতে স্বাধীনতা কিংবা বিজয়উল্লাস পালিত হয় কোটি কোটি টাকার খরচে,অপরদিকে সেই দিনগুলোতেই হাজার হাজার মানুষ থাকে অনাহারে,অর্ধাহারে।আমরা কি এই আনন্দাদি তাদের সাথে ভাগ করে নিতে পারিনা?

লাখো শহীদের তাজা রক্তে যে মাটি রাঙানো আছে,সে মাটি থেকে যেদিন ক্ষুধা,নিপীড়ন মুছে যাবে,সেদিন ই তাদের উৎসর্গ সার্থক হবে।
যেদিন কিছু খালিমুখে অন্নের ব্যবস্থা করার আনন্দ ফানুশ উড়িয়ে বিজয় উদযাপনের আনন্দকে ছাড়িয়ে যাবে,সেদিন ই তাদের উৎসর্গ সার্থক হবে।
যেদিন যাযাবর কিছু শিশুর হাসিমুখের আলো বড় বড় বিল্ডিং এর লাইটিং করা আলোকসজ্জার চেয়েও উজ্জ্বল দেখাবে,সেদিন ই তাদের কষ্ট সার্থক হবে।

আসুন বিজয়ের এ মাসে বিজয়ের আনন্দ সবার মাঝে বিলানোর ব্যবস্থা করি।শীতকাল তো চলেই এসেছে,কিছু শীতার্তকে বস্ত্র দিয়ে বিজয় শুভেচ্ছা জানিয়ে আসি।একবেলা দুটো মানুষকে খাইয়ে আসি ফেসবুকে বিজয় নিয়ে স্ট্যাটাস আপলোডের পরিবর্তে।
আনন্দের এ দিবসগুলো যে শুধু সমাজের উচ্চশ্রেণীর মানুষের মাঝেই উদযাপিত হচ্ছেনা,তা উপলব্ধি করি এবং করাই।

আমরা যেই রাস্তার একপাশে বিলাসিতা দেখিয়ে আলপনা এঁকে বিজয় আনন্দ উপভোগ করছি,সেই রাস্তার অপরপাশে যেন কেউ অনাহারে শীতে কাঁপতে কাঁপতে নির্ঘুম রাত পার না করে।এটিই হোক এই বিজয় দিবসে দেশমাতার কাছে করা অঙ্গীকার।
স্বাধীনতা হোক সবার উপভোগ্য!
বিজয় আনন্দ আসুক খুপড়ি ঘর অথবা ইট পাথরের দালানে বসবাসরত সকলের দ্বারে!

এই বিভাগের অন্য খবর

Back to top button