আন্তর্জাতিক খবর

ইউরোপে নিয়ন্ত্রণের বাইরে নতুন করোনা

যুক্তরাজ্যে ছড়িয়ে পড়া করোনার পরিবর্তিত রূপটির বিস্তার ঠেকাতে ইউরোপের অন্য দেশগুলোকে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। রোববার সংস্থার ইউরোপীয় শাখা এ আহ্বান জানিয়েছে। যুক্তরাজ্যের বাইরে করোনার পরিবর্তিত রূপ বা স্ট্রেনের শিকার হওয়ার বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ডেনমার্কে ৯টি, একটি নেদারল্যান্ডসে এবং আরেকটি অস্ট্রেলিয়ায় ঘটেছে। এদিকে, করোনার এই নতুন স্ট্রেন থেকে বাঁচতে বিশ্ব থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করেছে সউদী আরব।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ইউরোপ শাখার মুখপাত্র বলেছেন, ‘ইউরোপজুড়ে যেখানে সংক্রমণ অনেক বেশি ও বিস্তৃত, সেখানে দেশগুলোকে তাদের নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা দ্বিগুণ জোরদার করা প্রয়োজন।’ রোববার ব্রিটিশ স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দক্ষিণ ইংল্যান্ডের বেশ কয়েকটি এলাকায় করোনাভাইরাসের একটি নতুন স্ট্রেন পাওয়া গেছে। এটি আগের থেকে ৭০ শতাংশ বেশি গতিতে সংক্রমিত হচ্ছে। অপরদিকে, যুক্তরাজ্যে করোনাভাইরাস নতুন যে ধরন শনাক্ত হয়েছে তা মোটেই ‘নিয়ন্ত্রণে নেই’ বলে সতর্ক করে দিয়ে সবাইকে নতুন কঠোর বিধিনিষেধ মেনে চলার অনুরোধ জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ম্যাট হ্যানকক। তিনি বলেন, লন্ডনসহ যেসব জায়গায় চার-স্তরের বিধিনিষেধ জারি রয়েছে তা না মানাটা ‘পুরোপুরি দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ হবে।’

লন্ডন এবং দক্ষিণ-পূর্ব ইংল্যান্ডে কিছু সময়ের জন্য কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ থাকবে জানিয়ে রোববার হ্যানকক বলেন, দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে থাকা করোনাভাইরাসের নতুন স্ট্রেইনের কারণে সরকারকে বড়দিনে বিধিনিষেধ শিথিলের পরিকল্পনা বাদ দিতে হয়েছে। বড়দিনের মাত্র দিন কয়েক আগেও লকডাউন বলবৎ রাখার জন্য ব্রিটিশ সরকার সমালোচনার শিকার হয়েছে। তবে হ্যানকক বলছেন, নতুন স্ট্রেইনের কারণে কোভিড সংক্রমণ লাফিয়ে বেড়ে যাওয়ার আলামত পেয়ে শনিবার দ্রুতই বিধিনিষেধ জারি রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। করোনাভাইরাসের নতুন রূপটি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করতে দেশটির কর্মকর্তাদের সঙ্গে ‘ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ’ রাখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। বিবিসি জানায়, করোনাভাইরাসের নতুন যে ধরন শনাক্ত হয়েছে সেটি মূল ভাইরাসের তুলনায় ৭০ শতাংশ বেশি দ্রুত ছড়ায়। যদিও ভাইরাসের নতুন ‘স্ট্রেইন’ দ্রুত ছড়ালেও সেটি বেশি প্রাণঘাতী নয় বলেই এখনও বিশ্বাস করেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। যুক্তরাজ্যে করোনাভাইরাস যেভাবে রূপ পরিবর্তন করেছে ঠিক একইভাবে নেদারল্যান্ডস, ডেনমার্ক এবং অস্ট্রেলিয়ায় ভাইরাসটি রূপ বদল করেছে বলে বিবিসি’কে জানিয়েছে ডব্লিউএইচও।

কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিনের বেলায় নতুন এই ধরনটির ভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে কিনা তার প্রমাণ এখনও পাওয়া যায়নি। ভাইরাসের নতুন ওই ধরন ছড়িয়ে পড়া আটকাতে যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনসহ দক্ষিণপ‚র্ব ইংল্যান্ডের বড় অংশজুড়ে এখন নতুন করে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা আছে। নানা দেশও যুক্তরাজ্যে শনাক্ত করোনাভাইরাসের নতুন ‘স্ট্রেইন’ ছড়িয়ে পড়া আটকাতে নানা ব্যবস্থা নিচ্ছে। নেদারল্যান্ডস রোববার থেকে আগামী ১ জানুয়ারি পর্যন্ত যুক্তরাজ্যের সঙ্গে যাত্রীবাহী ফ্লাইট পরিচালনা বন্ধ ঘোষণা করেছে। কারণ, এ মাসের শুরুতে নেদারল্যান্ডসেও পরীক্ষায় ঠিক একই ধরনের ভাইরাসের স্ট্রেইন পাওয়া গেছে। ডব্লিউএইচও-র এপিডেমিওলজিস্ট মারিয়া ফন কেরখোভ বলেন, ‘মহামারীর শুরু থেকে বিশেষজ্ঞরা বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের রূপ পরিবর্তনের দিকে নজর রাখছে।’ যুক্তরাজ্যও সেখানে পাওয়া ভাইরাসের নতুন ধরনটি নিয়ে তাদের গবেষণা তথ্য ডব্লিউএইচওকে জানাচ্ছে। ডব্লিউএইচও জানায়, ‘আমরা নতুন ধরনের ভাইরাসটির বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আরও তথ্য পাওয়ার পর সেটার বিরুদ্ধে কী কী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে সেটি সম্পর্কে সদস্য রাষ্ট্র এবং সাধারণ মানুষকে জানাব।’

নতুন ভাইরাস সম্পর্কে ইংল্যান্ডের প্রধান মেডিকেল কর্মকর্তা অধ্যাপক ক্রিস হুইটি বলেন, ‘আমার মনে হয় আমরা এখন যেখানে দাঁড়িয়ে আছি সেখান থেকে পরিস্থিতি অনেক বেশি খারাপ হতে পারে। আবার একদিক দিয়ে দেখতে গেলে, এখন আমাদের হাতে সত্যিই আশাবাদী হওয়ার মত কিছু জিনিসও আছে। আমাদের হাতে এখন টিকা আছে এবং আশা করি সেটি ভাইরাসের বিরুদ্ধে কার্যকর হবে।’ টিকা হাতে পাওয়ার পর যুক্তরাজ্য সরকার সামাজিক দ‚রত্ব বজায় রাখার কিছু বিধিনিষেধ শিথিল করতে চেয়েছিল। যাতে বড়দিনে জনগণ এক বাড়ি থেকে আরেক বাড়ি যেতে পারে। কিন্তু ভাইরাসের নতুন ধরন শনাক্তের কারণে এখন দক্ষিণ-পূর্ব ইংল্যান্ডের বেশিরভাগ অংশেই নতুন করে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী জনসন এইসব বিধিনিষেধ আরোপের ঘোষণা দিয়ে বলেন, ‘চার স্তরের বিধিনিষেধের আওতায় বাসিন্দাদের অবশ্যই বাড়িতে অবস্থান করতে হবে।’

এদিকে, বিশ্বের একাধিক দেশে নতুন ধরনের করোনাভাইরাসের সংক্রমণের খবরে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে সাময়িকভাবে এক সপ্তাহের জন্য সব আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক ফ্লাইট বাতিল করেছে সউদী আরব। একই সঙ্গে স্থল ও সমুদ্র পথের সীমানাও বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে দেশটি। যুক্তরাজ্যসহ বেশ কয়েকটি দেশে নতুন ধরনের করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে সউদী গেজেটের খবরে বলা হয়। একই সাথে বিদেশিদের জন্য আবারও সাময়িকভাবে পবিত্র ওমরাহ পালন স্থগিত ঘোষণা করেছে দেশটি। এ বিষয়ে দেয়া ঘোষণায় বলা হয়, ‘যুক্তরাজ্য এবং অন্যান্য ইউরোপীয় দেশে নতুন করে কোভিড-১৯ এর প্রাদূর্ভাব দেখা যাওয়ায়, করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে আপাতত এক সপ্তাহের জন্য ওমরাহ পালন স্থগিত ঘোষণা করা হলো।’ রোববার সউদী আরবের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্রের বরাত দিয়ে রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ‘সউদী প্রেস এজেন্সি’ এসব তথ্য জানায়। সূত্র : বিবিসি

এই বিভাগের অন্য খবর

Back to top button