আধুনিকতা নাকি ধাপ্পাবাজি

আধুনিকতা শব্দটির সাথে আমরা প্রায় সবাই ই কম বেশি পরিচিত। আজকাল সবাই ই মনে আকাঙ্খা রাখে আধুনিক হবার। আধুনিক বা modern হওয়া এখন মানুষের মৌলিক প্রয়োজনের মধ্যে গণ্য হতে শুরু করেছে। যদিও বর্তমান প্রযুক্তি নির্ভর বিশ্বে আধুনিকতাকে মৌলিক প্রয়োজন মনে করাটা একদম উদ্ভট কিছু নয়। তবুও আমি কিছুটা বিস্মিত এবং ঠিক অনেকটাই অবাক হয়েছি। বর্তমান বিশ্বে টিকে থাকার জন্য একজন মানুষকে আধুনিক হতে হবে একথা আমিও মানি। কিন্ত বর্তমানে যে আধুনিকতার প্রচলন হয়েছে এবং এর রূপ বৈচিত্র্য দেখা যাচ্ছে তা আমাকে যথেষ্ট অবাক করেছে।
আধুনিকতা নিয়ে বিশিষ্ট মনিষীদের যা ধারণা তারা ব্যক্ত করেছেন তার কিছুই বর্তমান সমাজে আমি দেখতে পাই না। এখানে আধুনিকতার নামে অন্য কোনো খেলা চলছে। একজন মানুষকে আধুনিক মনে করার যে শর্ত এরা দিয়েছে তা আদৌও মানুষ কতৃক তৈরি কিনা সে বিষয়ে আমার যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।
বড় শহরে থাকা, দামী জিনিস ব্যবহার করা, বড়লোকী দেখানো, সবসময় অতিরিক্ত সাজ দিয়ে থাকাটা যেন এখনকার ঝোকে পরিণত হয়েছে। এগুলো যদি কেউ না করতে চায় তবে তাকে এই সভ্য সমাজে কেমন একটা খাপছাড়া লাগে। সে মানুষটাকে তখন খ্যাত, গাইয়া, আনস্মার্ট বলতে ইচ্ছা করে। হাজারটা স্মার্ট, ফ্যাশনেবল মানুষের মাঝে একটা সাদা-মাটা পোশাকের সরল মনের মানুষকে বড্ড বেমানান লাগে। তাকে ঠিক এই সমাজে বাসযোগ্য মনে হয় না। মনে হয় এই মানুষটা কেন এই সমাজের পরিবেশ নষ্ট করছে।
বর্তমানের এই অতি আধুনিক সমাজে এই পরিস্থিতিতে অনেককেই যেতে হয়েছে বলে আমার বিশ্বাস। কিন্তু এটা কি সত্যিই আধুনিকতা?? একটা মানুষকে তার পোশাক, চেহারা বা ভাষা দিয়ে যাচাই করাটা আসলেই যৌক্তিক কিনা সেটা আজও আমার প্রশ্ন থেকে গেল। আজ সকলেই অন্যতে মগ্ন। নিজের দেশ, নিজস্ব সংস্কৃতিকে তুচ্ছ করে আজ সবাই সর্বক্ষেত্রে পশ্চিমাকে বুকে লালন করেছি। আধুনিকতার নাম দিয়ে নিজেদের নৈতিকতা, সামাজিক মূল্যবোধ ভূলে যে রঙ্গ খেলায় সকলে মেতেছে তার চূড়ান্ত পরিণতি যে কোথায় গিয়ে পৌছবে তা আমার সত্যিই জানা নেই।
আজ আধুনিকতা শব্দের অর্থটাই যেন পাল্টে গেছে। নিশ্চয়ই ঈশ্বরচন্দ্র,রাজা রামমোহন, বেগম রোকেয়ার মতো মহিয়ান-মহীয়সীরা এই আধুনিকতা চাননি?? তারা কি আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন এই আধুনিকতা প্রতিষ্ঠার জন্য???
বলতে গেলে তারাই প্রকৃত অর্থে আধুনিক হতে চেয়েছিলেন। যাদের মতে আধুনিকতার মাপকাঠি ছিল একটি মানুষের সুস্থ চিন্তাধারা। সত্যের সাধনা ও সেই সত্য উপলব্ধি করে তাকে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা। তারা একটি আধুনিক, শোষণহীন সমাজের সপ্ন দেখেছিলেন।
কিন্তু তাদের দেখা সে স্বপ্ন যে এখনও স্বপ্নই রয়েছে তা আমি স্পষ্ট বুঝতে পারছি। সমাজের এই অবস্থায় আমার ঠিক কি প্রতিক্রিয়া হওয়া উচিত তা আমার বোধগম্য হচ্ছে না। এখানে বায়স্কোপিক রংতামাশা, নীত বাক্যে ভন্ডামি সব কিছুর যেন আসর বসেছে। এ তথাকথিত আধুনিক সমাজে সবাই স্বার্থপরের খাতায় নাম লিখিয়েছে এবং নিজ স্বার্থে ঘা পড়লেই তাদের নীতি কথার বান্ডিল বানিয়ে মূহুর্তেই পশু হয়ে যাচ্ছে। আমি শুধু নির্বাক দর্শকের মতো এই চলমান সভ্যতার নাটকীয় সার্কাস দেখছি।
এবং প্রতীক্ষা করছি যে কবে এই পুতুল নাচ শেষ হবে ও সঠিক উপলব্ধির সাথে প্রকৃত অর্থেই একটি আধুনিক, প্রগতিশীল সমাজ প্রতিষ্ঠা পাবে।
মাহিন হাদী প্রথম
নব্যদিপ্তিঃ শুদ্ধ চিন্তায় তারুণ্য