আইন ও অপরাধবগুড়া সদর উপজেলা

বগুড়ায় সময় টিভির সংবাদকর্মীর উপর হামলা

মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ প্রকল্প গৃহহীনদের জন্য গৃহ নির্মাণ প্রকল্পের দূর্নীতির চিত্র সংগ্রহ করতে গিয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য লুৎফর রহমান লাল মিয়ার সহযোগীদের হামলায় কর্মরত দু’জন সাংবাদিক আহত হয়েছেন। ঘটনাটি বুধবার (৩০ ডিসেম্বর) বেলা দেড়টার দিকে বগুড়া সদরের নিশিন্দারা ইউনিয়নের দশটিকা এলাকায়।

আহত সাংবাদিকরা হলেন সময় টিভি বগুড়া অফিসের স্টাফ রিপোর্টার মাজেদুর রহমান মাজেদ ও ক্যামেরাপার্সন রবিউল ইসলাম রবি। এসময় তাদের কাছ থেকে সংবাদ সংগ্রহের ক্যামেরা ও মোবাইল ফোনসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র হামলাকারীরা ছিনিয়ে নেয়।

বগুড়া সদর উপজেলা ভ‚মি অফিস সুত্রে জানা যায়, বগুড়া সদর এলাকার বিভিন্ন স্থানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ প্রকল্পের আওতায় সদর উপজেলায় ২৫০টি গৃহনির্মাণ করা হবে। এগুলো ফাঁপোর, নুনগোলা, এরুলিয়া, শেখেরকোলা ও নিশিন্দারা ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে সরকারি ‘ক’ তালিকা ভ‚ক্ত গৃহহীনদের জন্য বাড়ি নির্মাণ করা হচ্ছে।

প্রতিটি বাড়ির ব্যয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা। এতে সদর উপজেলায় ২৫০টি গৃহ নির্মাণে সরকারের ব্যয় হবে প্রায় ৪ কোটি ২৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা। সদরের নিশিন্দারা ইউনিয়নের দশটিকা এলাকায় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ প্রকল্পের আওতায় ৬০টি গৃহ নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের ‘১নং খাস’ খতিয়ান ভূক্ত জায়গায় এই বাড়ি গুলো নির্মাণ করা হচ্ছে।

প্রতিটি বাড়ির জন্য ২ শতক করে জায়গা বরাদ্দ করা হয়েছে। দশটিকা এলাকায় এই ৬০টি গৃহ নির্মাণে ১ একর ২০ শতক জায়গা বরাদ্দ করা হয়েছে এবং প্রতিটি পরিবারকে ওই গৃহ তাদের নামে দেয়া হবে। প্রতিটি বাড়িতে দুটি শোবারঘর, একটি রান্নাঘর, একটি বাথরুম ও বারান্দা রয়েছে।

বগুড়া সদর উপজেলা কর্মকর্তা ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি আজিজুর রহমান বলেন, দশটিকা এলাকায় সরকারের নির্মাণাধীণ প্রকল্পে সাংবাদিকরা সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছে এমন খবর পেয়ে এসেছি। ঘটনাস্থলে এসে দেখি দুজন সাংবাদিক আহত হয়েছেন। নির্মাণাধিন বাড়িগুলোর পিলারগুলো ভাঙা। ইউপি সদস্য জানিয়েছেন সাংবাদিকরা পিলার ভেঙেছে। কারা হামলা করেছে তা জানা যায়।

স্থানীয় বেশ কয়েজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুকরা জানান, বাজেট থাকলেও নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে ঘরগুলো নির্মাণ করা হচ্ছে। নির্মাণে ব্যবহৃত সকল নির্মাণ সামগ্রী নিম্নমানের। এই নির্মিত ঘরগুলো যারা থাকবেন তাদের প্রাণ সংসয় রয়েছে বলেও তারা জানিয়েছেন।

সরকারি বাজেটে নির্মাণাধীন ঘরগুলোর বাজেট থাকলে কাঠামোগত ঘাটতির বিষয় নিয়ে তিনি বলেন, সরকারি নির্দেশনা অনুসারে ঘর গুলো নির্মাণ করা হচ্ছে অর্থাৎ প্রকল্পে নির্ধারিত পরিকল্পনায় ঘরগুলো নির্মাণ করা হচ্ছে। উপজেলা বাস্তবায়ন কমিটি নির্মাণাধীন ঘরগুলো পর্যবেক্ষণ করছে। নিম্নমানের কাজের অভিযোগ পাওয়া গেলে আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখব।

বগুড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির জানান, কে বা কাহারা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রকল্পের নির্মাণাধীন ঘরগুলোর পিলার ভাঙছে। তারপর দ্রুততার ন্ত সাথে ঘটনা স্থলে পুলিশ সদস্যদের প্রেরণ করা হয়।

দুর্বৃত্তদের হামলায় সময় টিভির স্টাফ রিপোর্টার মাজেদুর রহমান মাজেদ ও ক্যামেরাপার্সন রবিউল ইসলাম রবি আহত হয়েছেন। তারা বর্তমানে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাদের কাছ থেকে হামলাকারীরা ক্যামেরা, মোবাইল ফোন সহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ছিনিয়ে নিয়ে গেছে। আমরা তাদের ক্যামেরা, মোবাইল ফোন সহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র উদ্ধারের চেষ্ঠা চালিয়ে যাচ্ছি। এবং এই হামলার সাথে জড়িতদের আইনগত ব্যবস্থাগ্রহন করা হবে বলেও জানান তিনি।

হামলার শিকার সময় টিভির স্টাফ রিপোর্টার মাজেদুর রহমান মাজেদ বলেন, আমি অফিসে অনুমতি নিয়ে এখানে আসি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ প্রকল্প গৃহহীনদের জন্য গৃহ নির্মাণ প্রকল্পের সংবাদ সংগ্রহ করতে।

সংবাদ সংগ্রহ কালে ঘর বরাদ্দ পাওয়া লোকেরা জানায়, ‘এখানে নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। এখানে থাকলে আমরা মারা পড়ব। আপনারা এটা দেখেন।’ এসময় স্থানীয় ইউপি সদস্য লুৎফর রহমান লাল মিয়া লোকজন নিয়ে হাজির হোন। এসময় নিম্নমানের কাজের কথা বলার সময় একটি পিলারে হাত দিলে সেটি ভেঙে যায় এবং সেখানে থাকা অপর একটি লোক অন্য পিলারে হাত দিলেও সেটিও ভেঙে যায়।

ইউপি সদস্যর সাথে কথা বলার একপর্যায়ে উপস্থিত লোকজন পিছন থেকে মারপিট শুরু করে। মারপিটে তিনি ও ক্যামেরাপার্সন ররিউল ইসলাম রবি আহত হোন এবং হামলাকারীরা ক্যামেরা ও মোবাইল ফোন কাছে থাকা কাগজপত্র ছিনিয়ে নিয়ে যায়। তবে পিলারগুলো পরে কে বা করা ভাঙছে তা তিনি জানেন না। এবং তিনি আরও দাবি করেন ক্যামেরা ও মেমোরি কার্ড উদ্ধার করা গেলে বোঝা যাবে ঘটনা কি ছিল।

এদিকে নিশিন্দারা ৩নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য লুৎফর রহমান লাল মিয়ার সহযোগীরা হামলা করেছে বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, সাংবাদিকরা ঘরগুলোর পিলার ভাঙছে এমন খবর পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে আসেন। এসময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন নিম্নমানের কাজ হলে তা উপর মহলকে জানান। তাদের পিলার ভাঙার ঘটনায় হটাৎ লোকজন ক্ষেপে উঠে তাদের উপর হামলা চালায়। তবে কারা হামলা চালিয়েছে তাদের তিনি চিনেন না বলে দাবি করেন।

শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত পুলিশ ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়া ক্যামেরা ও মোবাইল উদ্ধার করতে পারেনি বলেও জানা গেছে।

এই বিভাগের অন্য খবর

Back to top button