১৫৯ বছর পর ৮ ঘণ্টা ডিউটিতে বাংলাদেশ রেলওয়ের সিগন্যাল কর্মীরা

১৫৯ বছর পর ৮ ঘণ্টা ডিউটি পেল বাংলাদেশ রেলওয়ের সিগন্যাল (রেলওয়ে সংকেত ও টেলিযোগাযোগ প্রকৌশল বিভাগের মাঠ পর্যায়ে কর্মচারী) কর্মীরা।
গতকাল শুক্রবার থেকে রেলওয়েতে কর্মরত ৫৫২ সদস্য (সিগন্যাল কর্মী) সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত উচ্চ আদালতের নির্দেশ মতো দায়িত্ব পালন শুরু করেছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ রেলওয়ে সিগন্যাল অ্যাসোসিয়েশন (কেন্দ্রীয় কমিটি) সভাপতি প্রভাস কুমার মল্লিক।
রেলসূত্র জানায়, বাংলাদেশে রেলওয়ের কার্যক্রম শুরু হয় ব্রিটিশ শাসনামলে, ১৮৬২ সালে। ঊনবিংশ শতাব্দীতে ইংল্যান্ডের বিভিন্ন রেল কোম্পানি ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রদেশে ছোট ছোট রেলপথ সেকশন চালু করতে থাকে। প্রথমদিকে শুধু অর্থনৈতিক কাজের জন্য রেলপথ চালু করা হয়। ইস্টার্ন বেঙ্গল রেলওয়ে নামক কোম্পানি প্রথম বাংলাদেশে রেলপথ স্থাপন করে। ১৮৬২ সালের ১৫ নভেম্বর যশোরের দর্শনা থেকে কুষ্টিয়ার জগতি পর্যন্ত রেলপথ স্থাপনের মাধ্যমে বাংলাদেশ রেল যুগে প্রবেশ করে। কিন্তু রেলওয়ে যাত্রা শুরু থেকে সিগন্যাল কর্মীদের নির্ধারিত কোনো কর্মঘণ্টা ছিল না। তাদের বলতে গেলে ২৪ ঘণ্টাই দায়িত্বে নিয়োজিত থাকতে হতো, ছিল না কোনো সাপ্তাহিক ও গেজেটেট ছুটি। এ নিয়ে সিগন্যাল কর্মীরা বহুবার কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন-নিবেদন করেন। এদিকে প্রতিবেশী দেশ ভারতে তাদের কর্মঘণ্টা বাস্তবায়ন হয় ১৯৫১ সালে। কিন্তু তত্কালীন পাকিস্তান ও বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরও রেলওয়ে সিগন্যাল কর্মীদের কর্মঘণ্টা নির্ধারিত হয়নি। তারা রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে বহুবার আবেদন জানিয়েছেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষ বিষয়টি আমলে নেয়নি। এ প্রেক্ষাপটে দাবি আদায়ের লক্ষ্যে সিগন্যাল কর্মীরা ২০১৪ সালে উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হন। শেষটায় আদালতের নির্দেশেই রেলওয়ের সিগন্যাল কর্মীরা ৮ ঘণ্টা ডিউটি করার অধিকার পেলেন।
বাংলাদেশ রেলওয়ে সিগন্যাল অ্যাসোসিয়েশন (কেন্দ্রীয় কমিটি) প্রভাস কুমার মল্লিক বলেন, বাংলাদেশ রেলওয়ের সংকেত ও টেলিযোগাযোগ প্রকৌশল বিভাগের মাঠ পর্যায়ের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা দিনে ২৪ ঘণ্টা, সপ্তাহে সাত দিন, বছরে ৩৬৫ দিন কোনো প্রকার সুবিধা ব্যতিরেকে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।
প্রতিকারের জন্য হাইকোর্টে রিট পিটিশন করলে ২০১৪ সালের ১০ মার্চ-এর আদালত উক্ত কর্ম ব্যবস্থাকে অবৈধ, অনৈতিক ও মানবাধিকার পরিপন্থি বলে এবং কর্মঘণ্টা নির্ধারণ করে তদানুযায়ী সুযোগ-সুবিধা দিতে নির্দেশ দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে রেলওয়ে প্রশাসন আপিল পিটিশন করলে তা ২০১৭ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি এবং রিভিউ পিটিশন করলে তা ২০১৮ সালের ২২ নভেম্বর খারিজ হয়ে যায়।
অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি প্রভাস বলেন, ‘আদালতের নির্দেশ মোতাবেক আমরা আজ (গতকাল) থেকে সারা দেশে সিগন্যাল কর্মীরা দায়িত্ব পালন শুরু করি।’ কিন্তু দায়িত্ব শুরুর পরপরই রেল কর্তৃপক্ষের টনক নড়ে। গতকাল রাজধানীর শাহজানপুরের রেলওয়ে অফিসার রেস্টহাউজে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমাদের বৈঠক হয়। প্রায় দুই ঘণ্টা বৈঠক চলে। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় সিগন্যাল কর্মীর রবিবার থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবেন। শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ও গেজেটেট ছুটি ভোগ করবেন। তবে আগামী দুই মাস রেলওয়ে ডিউটির বাইরে ট্রেন চলাচলে কোনো জটিলতা তৈরি হলে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রাখার স্বার্থে সিগন্যাল কর্মীরা সহায়তা করবেন। এ জন্য অতিরিক্ত শ্রমের জন্য ওভারটাইম ভাতা প্রদান করা হবে বলেও রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ আমাদের আশ্বস্ত করেছে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সারা দেশে চলাচল করে তিন শতাধিক ( যাত্রী ও মালবাহী) ট্রেন। রয়েছে ৫৫৪টি রেল স্টেশন। রেল ও স্টেশন আমাদের (সিগন্যাল কর্মী) নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। এ সেক্টরে রয়েছে জনবল সংকট। কর্তৃপক্ষ এ প্রেক্ষাপটে জনবল বৃদ্ধি করবে বলে জানিয়েছে। বাংলাদেশে বর্তমানে মোট রেলপথ ২ হাজার ৯৫৫ দশমিক ৫৩ কিলোমিটার। আর মোট জনবল ২৫ হাজার ৮৩ জন। কিন্তু এ জনবলের মধ্যে একমাত্র সিগন্যাল কর্মীদের জন্য ছিল না নির্ধারিত কোনো কর্মঘণ্টা।