বগুড়ায় শিক্ষা ব্যবস্থার নোংরা দিক

শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। এই শিক্ষাই একটি জাতিকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে আনতে পারে। একটি শিক্ষিত জাতি কখনো কারো কাছে মাথা নত করতে পারে না। কোন অপশক্তি তাঁকে মাথা নত করে রাখতে পারে না। শিক্ষক হলো আমাদের অভিভাবক। পিতামাতার পরেই শিক্ষকদের স্থান। পরিবার থেকে মৌলিক শিক্ষা লাভের পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত আমরা জ্ঞান অর্জন করে থাকি।
একজন মানুষের জ্ঞান অর্জনের সময় হলো দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত। কিন্ত দুঃখের বিষয় হলো শিক্ষকদের মতো মহান পেশাতেও কিছু নিচুস্তরের মানুষ নিয়োজিত। শিক্ষিত হলেই একজন মানুষ হওয়া যায় না। তার মাঝে সততা, নিষ্ঠাবান, ন্যায় পরায়নতা, কঠোর পরিশ্রমী ইত্যাদি গুণাবলি বিদ্যমান থাকতে হয়। তবেই সে একজন শিক্ষিত মানুষ হিসেবে পরিণত হয়।
বর্তমানে আমরা শিক্ষিত হওয়া বলতে শুধু সার্টিফিকেট অর্জন করাকেই মনে করি। কে কত ভালো ডিগ্রী অর্জন করেছে সে তত বড় শিক্ষিত মানুষ এই চিন্তা ভাবনাকে বদলাতে হবে।
স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান থেকে উচ্চ পর্যায়ের ডিগ্রী অর্জন করার পাশাপাশি আমাদের এটাও খেয়াল রাখতে হবে যে, মানুষ হিসেবে আমরা কতটুকু পরিপূর্ণ। জ্ঞান অর্জন শুধু কিতাবের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। তবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে আমরা প্রতিনিয়ত দেখছি যে, একজন শিক্ষক আরেকজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কথা বলে, “এই স্যার ভালো পড়ায় না, ঐ স্যার এর থেকে আমি ভালো, এরকম আরো অনেক কিছু “। যা এই মহান পেশার নীতি নৈতিকতার বাইরে। বগুড়ার শিক্ষা নগরী নামে খ্যাত জলেশ্বরীতলা। এখানে বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, কোচিং, প্রাইভেট এর শিক্ষকমন্ডলী বগুড়ার প্রায় সকল স্কুলের শিক্ষার্থী দের পাঠদান দিয়ে থাকে। প্রায় হাজার হাজার শিক্ষার্থীর আনাগোনা এই জলেশ্বরীতলায়। এখানকার পরিবেশ একসময় শিক্ষানুরাগী ছিলো কিন্তু এখন তা হয়ে উঠেছে ব্যবসাকেন্দ্রিক। আমরা ছোট থেকেই এই এলাকায় বিভিন্ন স্যার ম্যাডামদের কাছে পড়েছি। তখনকার পরিবেশ আর এখনকার পরিবেশ এর মধ্যে পার্থক্য আকাশ-পাতাল। রাস্তার মোড়ে, চায়ের দোকানে, কোচিং এর সামনে একাধিক স্যারের হাস্যোজ্জল আড্ডার মাঝেই তাদের সাম্প্রদায়িকতার চিত্র ফুটে উঠতো। কিন্তু এখন শত চেষ্টার পরেও তা দেখা মেলা ভার। এর কারণ কিছু শিক্ষক নিজেই। তারা শিক্ষা ব্যবস্থাকে ব্যবহার করছে ব্যবসার মতো করে, শিক্ষাদান তাদের মূল মন্ত্র নয়। তাদের মূল মন্ত্র কীভাবে ব্যবসা সম্প্রসারণ করা যায়, কীভাবে আরেকজনের নামে দুইটা কথা বলে নিজের পজিশন শক্ত করা যায়, রাজনীতির মতো বিভিন্ন গ্রুপিং করেও ক্ষমতা প্রদর্শনের খেলা চলে এখন এসব শিক্ষকদের মাঝে। যে যত ক্ষমতাধর সে তত বড় শিক্ষক। এই হলো বর্তমান প্রেক্ষাপট। গুটিকয়েক এরকম শিক্ষকের জন্যই আজ তাদের মাঝে অসাম্প্রদায়িক চেতনা জেগে উঠেছে। একজন শিক্ষক হয়েও আরেকজন শিক্ষকের ব্যাপারে গুজব ছড়াতেও তারা পিছ পা হয় না। বর্তমান এই শিক্ষা ব্যবস্থার ফলে আমাদের দেশের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ কতটা সম্ভাবনাময়, এদের হাতে পরবর্তী প্রজন্ম কী শিক্ষা পাবে তা সত্যি চিন্তার বিষয়। একটি শিক্ষিত জাতি গঠন করতে এগুলো বাধার দেয়াল স্বরুপ। এ দেয়ালগুলো গুড়িয়ে দিয়ে আমাদেরকে দেশের উন্নয়নের স্বার্থে শিক্ষা ব্যবস্থাকে কলঙ্ক মুক্ত করতে হবে। নিজেদেরকেই সচেতন হতে হবে। শিক্ষার্থীদের মাঝে নৈতিকতার বীজ বপন করতে হবে। আর এই দায়িত্ব নিতে হবে শিক্ষকদেরকেই। এই মহান পেশায় যেনো কোন কলঙ্কের দাগ না পড়ে সেই দায়িত্ব শিক্ষক সমাজকেই নিতে হবে। পাশাপাশি পরিবারের অভিভাবকদেরও উচিত নিজের সন্তানকে সঠিক রাস্তায় পরিচালনা করা। ছোট থেকেই তাদের মাঝে পরস্পরের প্রতি সহানুভূতিশীল আচরণ প্রতিষ্ঠা করা।
আজিজুল হাকিম অনিক
নব্যদীপ্তি-শুদ্ধচিন্তায়তারুণ্য