নব্যদীপ্তি_শুদ্ধ চিন্তায় তারুণ্য

অটো সিস্টেমে অটোরিকশা!

আমি.. আমরা বাঙ্গালীরা স্বভাবতই অনেকটা আরামপ্রিয়। একটু খুলে বলতে গেলে বলা যায় অলস, উদাসীন, স্বার্থে স্বাধীন, shortcut way তে বিশ্বাসী তাই আমাদের পুরো দেশের আমলাতান্ত্রিক নীতি কিংবা সামাজিক দ্বায়বদ্ধতা সবকিছুই যেনো একটি বিশেষ সিস্টেমে চলে এসেছে, চলছে এবং এটা যেনো স্বাভাবিক ব্যাপার । আমার কাছে লাগে চিরস্থায়ী বৈষম্যনীতি…
এই বৈষম্যের শিকার বরাবরই অপেক্ষাকৃত দূর্বল শ্রেণীর প্রাণী থেকে মানুষ সকলেই । যেমন, আমরা রাস্তায় চুপ করে থাকা কুকুরকে দাবড়ানি দেই, গায়ে গরমপানি ঢেলে দিতে পারি কিন্তু বাঘের থেকে ১ কিলোমিটার দূর থেকে নিজেই দৌড়াই ভয়ে…
এভাবেই সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে এমনটি ঘটে আসছে । বয়স্ক রিক্সাওয়ালাকেও যেমন তুই করে ডাকি কিংবা তুচ্ছতাচ্ছিল্যের চোখে দেখি অপরদিকে অল্পবয়সী পুলিশের হুংকারে সেকেন্ডে ১০ বার স্যার বলে সম্মোধন করে থাকি ।
সাম্প্রতিক সময়ে বগুড়া শহরে অটোরিকশা নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং বিশেষ এলাকাগুলোতে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে । আবার এই নিয়ম বজায় রাখার জন্য পুলিশ সদস্য দ্বায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে আসছে । এই পুরো বিষয়টি নিয়ে পক্ষে বিপক্ষে নানানরকম কথা ভেসে বেড়াচ্ছে এই ভার্চুয়্যাল মিডিয়ায় । এমতাবস্থায় আমার ব্যক্তিগত সীমাবদ্ধ তরুণ ভাবনা থেকে কিছু বলতে চাই…

প্রথমত বগুড়া শহরের অন্যতম ব্যস্ত একটি এলাকা হলো জ্বলেশ্বরীতলা । এখানে নিত্য নতুন রেস্টুরেন্ট শো-রুম সহ নানান ব্যাণিজ্যিক সমাহারে সারাদিন তথা বিকাল থেকে রাত ১০/১১টা পর্যন্ত কোলাহলপূর্ণ, ট্রাফিকজ্যামে আবদ্ধ থাকে । ইয়াকুবিয়া থেকে কালিমন্দির হয়ে জেলখানা মোড়, নূর মসজিদ থেকে কালিমন্দির হয়ে রানারপ্লাজা এই এলাকাটুকুতে রাস্তার পাশে দাঁড়াতে পারবেন না বখাটে কিশোরদের উৎপাত এবং অসভ্য কিশোরীদের বেহায়াপনায়, ফুটপাত তো দখল হয়েই আছে তাই রাস্তা দিয়ে হাঁটারও সুযোগ নেই অসংখ্য প্রাইভেট কারের চলাচল এবং ট্রাফিক জ্যামের জন্য । এখানে সব মিলিয়ে একটা অসহনীয় আধুনিকতার ছোঁয়ায় ব্যস্ত একটি সময় পার করে এলাকায় অবস্থানরত লোকজন । কিন্তু দিনশেষে এসবের কোনো শৃঙ্খলা নেই, প্রাইভেট কার কিংবা ওভারস্পীডে বাইক চালকদের কোনো শাস্তি নেই, আইনের প্রয়োগ পুরোপুরি নেই । তবে প্রয়োগ দেখা গেলো অটো রিকশাওয়ালাদের ওপর, অটোরিকশা চলাচল অবৈধ ।
কেনো অবৈধ?
অটোরিকশার কন্ট্রোল ভালো না, এক্সিডেন্ট বেশি হয়, রাস্তায় ভীড় করে থাকে ।
অবাক করার বিষয় হলো সারি সারি রাস্তার পাশে পার্ক করা প্রাইভেট করা,ফুটপাত দখল করা রেস্টুরেন্ট-শো-রুম কিংবা বাইক রেখে অসভ্যতামি করা এসব কিছু অবৈধ হলেও চোখে পড়ে না দ্বায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষের । কারন এখানে একটা অভিজাত শ্রেণির ব্যাপার আছে । কোনো প্রাইভেট কার, রেস্টুরেন্টের মালিক অবশ্যই বিত্তশালী কিংবা প্রভাবশালী কারো হতে পারে, নিয়ম ফলানো হলে অজস্র অজানা জায়গা থেকে ফোন কল, চাপ সহ বিভিন্ন ব্যাপার চলে আসে । এত ঝামেলার দরকার কি? সুতরাং ঝামেলাবিহীন ব্যাপারে একটু নিয়ম দেখায়ে নিজেদের পরিষ্কার রাখা যাক.. শহরের সৌন্দর্য বাড়াতে হবে এমন ভাবনা থেকে দ্বায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষের নজরে আসে যে শহরে জ্যাম সৃষ্টি করার একমাত্র কারন এসব অটোরিকশা, কোনো পায়ে চালিত রিকশা নয় কোনো প্রাইভেট কার পার্কিং নয়, কোনো ফুটপাত দখল করা দোকান/রেস্টুরেন্ট নয়!!
বৈষম্য সৃষ্টি করার মনোভাব এবং এসব সিস্টেমেটিক শো অফ নিষেধাজ্ঞা দিয়ে সমাজের কি এমন অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা যায় বলুন? বাহিরের সৌন্দর্য পরে আগে সমাজের সকল মানুষের মানসিকতার পরিবর্তন দরকার, সৎ থাকা দরকার নিজেদের দ্বায়িত্বের ওপর ।
অটোরিকশার জন্য সমস্যা হলে সেটার জন্য সুষ্ঠু সমাধান বের করা যেতো, কিংবা এসব রিকশার আর্বিভাব কোথা থেকে হলো সেই উৎসটা উৎখাত করা যেতো কিংবা শুধুমাত্র বয়স্ক রিকশাওয়ালাদের জন্য শুধুমাত্র অটোরিকশা ব্যবহার করার অনুমোদন দেয়া যেতো ।
এখন আমরাই এই অটো আমদানি করেছি, আমরায় সহজ রাস্তা দেখিয়েছি, আমরাই কিস্তি নিয়ে রিকশা কেনার সুযোগ করেছি, আমরাই সাময়িক লাইসেন্স প্রদানের নাম করে রাজস্ব বিহীন অর্থ আদায় করেছি, আমরাই ট্রাফিক পুলিশ হয়ে লাঠির আঘাতে অটোরিকশার কন্ট্রোল বক্স ভেঙে দিয়েছি সামান্য ক’টা টাকা ঘুষের জন্য, আমরাই নিশ্চুপ দর্শক হয়ে অসহায় রিকশাচালকদের কান্না দেখেছি, আমরাই উগ্র হয়ে ভাড়া বেশি চাওয়ার দায়ে রিকশাচালকদের গায়ে হাত দিয়েছি..
আবার আমরাই হাহাকার করছি অনলাইনে এসব অন্যায়ের বিরুদ্ধে ৷
মোটকথা আমাদের সমাজের সকল শ্রেণির মানুষের মানসিকতার পরিবর্তন দরকার ।
দরকার একটি সৎ, পরিশ্রমী, ভালো মানসিকতার মানুষদের । তাহলে আমাদের শহর তথা দেশের এসব অসুস্থ নিয়মনীতির পরিবর্তন হবে, সৎ মানুষের সংখ্যা বেশি হবে , অনিয়মের সংখ্যা কমে আসবে…..।
তখন আর আচমকা অমানবিক নীতির সম্মুখীন হতে হবে না আমাদের ।

মেহেদী হাসান রাজ
নব্যদীপ্তিশুদ্ধচিন্তায়_তারুণ্য

এই বিভাগের অন্য খবর

Back to top button