নব্যদীপ্তি_শুদ্ধ চিন্তায় তারুণ্য

তৃতীয় লিঙ্গ হতে কি পারে না লিঙ্গ বৈষম্যের নতুন রূপ

লিঙ্গ বৈষম্য বলতে সবার প্রথমেই আমাদের মাথায় যা আসে তা হচ্ছে নারীর সাথে পুরুষের অধিকার কিংবা সুযোগ সুবিধার বৈষম্যের কথা। একটা সময় ছিল যখন প্রকৃতপক্ষেই নারীদের অধিকার বলতে কিচ্ছু ছিলো না। পরবর্তীতে নারী শিক্ষা এবং কর্মক্ষেত্রে নারীদের বাড়তি সুযোগ প্রদানের মাধ্যমে এই অবস্থা থেকে অনেকটা উত্তরণ ঘটেছে। এখনো কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও মোটামুটি সকল ক্ষেত্রেই নারীরা এখন পুরুষদের সাথে সমানভাবে পাল্লা দিচ্ছে।

কিন্তু একটা গোষ্ঠী সত্যিকার অর্থেই আমাদের চেয়ে বেশ অনেকটা পিছিয়ে আছে তারা হচ্ছেন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ বা যাদের আমরা বলি “হিজড়া” অথবা “বৃহন্নলা”!

বাসে,ট্রেনে, লঞ্চে চাদাবাজি কিংবা নতুন বাচ্চা জন্ম নিলে সেই বাচ্চাকে ঘিরে টাকা আদায়ের জন্যই মূলত কুখ্যাতি রয়েছে তাদের। তাদের দেখলেই এড়িয়ে যায় মানুষ। ” হিজড়া” শব্দটিও ব্যবহার করা হয় গালি বা খারাপ কোনো অর্থে। কিন্তু তারা কেন এই পেশায় এই নিয়ে চিন্তা করার যেন কেউ নেই।
সাধারণত দেখা যায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তৃতীয় লিঙ্গের এই মানুষেরা ছোটোবেলাতেই পরিবার থেকে নিগৃহীত হয়। এরপর যেখানে আশ্রয় পায় সেখানে থাকেনা কোনো শিক্ষার ব্যবস্থা। কিংবা স্বাভাবিক জীবনধারাতেও তারা চাইলেও এক অদৃশ্য বাধার কারণে মিশতে পারেনা। এর প্রভাব পড়ে তাদের কর্মজীবনেও। কেউ কোনভাবে কস্ট করে পড়াশোনা করতে পারলেও চাকরিক্ষেত্রে তাদের ব্যাপকভাবে অবহেলা করা হয়। যার ফলশ্রুতিতে বাধ্য হয়েই তাদের পেটের তাগিদে সেই চিরচেনা পথই ধরতে হয়৷

অথচ চাইলেই এই জনগোষ্ঠীকে আমরা আমাদের স্বাভাবিক জীবনের অংশ ভাবতে পারি৷ এক্ষেত্রে সরকার রাখতে পারে ব্যাপক ভূমিকা। শিক্ষাক্ষেত্রে তাদের আগ্রহী করার জন্য বিনা বেতনে শিক্ষার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। চাকরিক্ষেত্রে কোটা কিংবা নতুন চাকরিক্ষেত্র তৈরি করে সুযোগ দেওয়া যেতে পারে তাদের নিজের পায়ে দাঁড়ানোর। বিজ্ঞাপন এবং স্থানীয় প্রচারণার মাধ্যমে মানুষকে বুঝাতে হবে তারাও আলাদা নয়৷

তবে সব শুধু সরকারের ঘাড়ে চাপিয়ে দিলেই এই সমস্যা থেকে উত্তরণ সম্ভব নয়। একই সাথে পাল্টাতে হবে আমাদের মানসিকতা এবং দৃষ্টিভঙ্গিও। নারী পুরুষের মতো তাদেরও আমাদের স্বাভাবিক জনগোষ্ঠী হিসেবেই গ্রহণ করতে হবে। কাউকে পিছিয়ে রেখে কখনোই উন্নয়ন সম্ভব নয় এই সত্যকে মেনে নিয়ে সেই পরিবেশ সৃষ্টি করে তাদের আহবান জানাতে হবে সামনে এগিয়ে আসার। গালি হিসেবে না ব্যবহার করে নারী পুরুষের মতো “হিজড়া” কিংবা “বৃহন্নলা” শব্দটিও গ্রহণ করতে হবে স্বাভাবিক ভাবে। দেশের নাগরিক হিসেবে তাদেরও সমান অধিকার নিশ্চিতের মাধ্যমেই দূর করা যাবে সকল প্রকার লিঙ্গ বৈষম্য।

আবু জুবায়ের
নব্যদীপ্তিশুদ্ধচিন্তায়_তারুণ্য

এই বিভাগের অন্য খবর

Back to top button