নব্যদীপ্তি_শুদ্ধ চিন্তায় তারুণ্য

বাঙ্গালির বাঙ্গালিয়ানা

বাংলার ইতিহাস-ঐতিহ্য, মনোরম স্নিগ্ধতার ছোয়া
পেতেই মনে হয় বিশ্বজগতের সমস্ত সৌন্দর্য, বাসনা
কামনা নিয়ে সে জাতি গঠিত হয়েছে। এখানে কি নেই?
প্রকৃতির মন মাতানো রূপ, পল্লিগান ভাটিয়ালি গানের
অতুলনীয় সুর, চাষীর কষ্টের পর ঘর ভরা ফসলে সকলের
মুখে হাসি— সবকিছু নিয়ে একটা পদ্মপাতার নীরের মত
বঙ্গোপসাগরে ভাসছে আমাদের এই দেশ মাতৃকা। জাতির
কঠোর পরিশ্রম আর সম্পদের সুষ্ঠু ব্যাবস্থাপনা আমাদের
স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরের মধ্যেই বেশ কিছু ক্ষেত্রে উন্নয়নের
শিখরে পৌছে গেছি। ভবিষ্যতে আরো উন্নতি হবে আমাদের
এই সোনার দেশের এই লক্ষ্যে সবাই এখন কাজ করে যাচ্ছে।

কিন্তু আমাদের একটা কথা মনে রাখতে হবে রাজ্য স্থাপন করা
অপেক্ষা রাজা উপাধি লাভ করা সহজ। আমাদের জাতির জনক
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, যার অবিসংবাদিত নেতৃত্বে তেইশ
বছরের পাকিস্তানি শাসন থেকে আমরা স্বাধীনতা লাভ করেছি। তার
কারনেই বাংলাদেশ গঠন করা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু বর্তমানকালে
বিভিন্ন স্বার্থান্বেষীমহলের কারনে আর্থ-সামাজিকভাবে পিছিয়ে পড়ছে
সোনার দেশ। তথাকথিত রাজারা এদেশের উন্নয়ন না করে পরোক্ষভাবে
শোষন করে আসছে দেশের নিম্নবিত্তদের। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা
অর্জনে যা একটি বড় সমস্যা।

বাঙ্গালী জাতি এখন শুধু বড় বড় ডিগ্রি অর্জনের পেছনে ছুটছে। কিন্তু
সরকারি বেসরকারি কর্মসংস্থান সংকট এর কারনে এই B.Sc, D.Sc ডিগ্রিধারী
সমাজকে বেকার জীবনযাপন করতে হচ্ছে। আমরা যদি এসব ডিগ্রির পেছনে

না ছুটে নিজে নিজের কর্মসংস্থান এর সৃষ্টি করতে পারি, তবেই আমরা টেকসই
উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার দিকে এগুতে পারব। মনে রাখতে হবে, স্বশিক্ষিত হতে পারলেই
সেই শিক্ষা জীবনে কাজে লাগানো যায়।

আমাদের আরো একটি পিছুটান আছে। তা হলো আমরা সুবিধাবঞ্চিত মানুষের
জন্য টাকা ব্যয় না করে নিজের অপ্রয়োজনীয় কাজে টাকা নষ্ট করতে বেশী
স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। সেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো যখন এদের নিয়ে কাজ করতে যায়,
তখন দুই তিনটে ছবি তুলে খবরের হেডলাইনে আসার মাধ্যমে এই স্বার্থান্বেষীমহল
জনসাধারণের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। অর্থাৎ, তারা জনসেবা করে লোকের সম্মুখে
নিজের ইমেজ তৈরি করার জন্য। এতে করে জনগনের উন্নয়ন হলো কি না সেদিকে
দৃষ্টি দেওয়ার সময় কারো নেই।

আরো একটি কথা না বললেই না। আমাদের আশেপাশে কোনো দরিদ্র প্রতিবেশি
যদি মারা যায়, দেখা যায় অনেকে সেখানে উপস্থিত হওয়ার সময় পর্যন্ত পায় না।
কিন্তু যদি কোনো ধনী প্রভাবশালী ব্যাক্তির প্রয়ান ঘটে, তখন তার শোকসভা পর্যন্ত
এসব মানুষদের পদচারনা চলতে থাকে। অর্থাৎ, কেবল আত্মসম্মানের ভয়ে তারা
মৃত মানুষকে পর্যন্ত হেয় করতে দ্বিধাবোধ করে না।

কোনো স্থানে যদি খাদ্য উৎপাদন সংকট দেখা দেয়, তখন আমরা খাদ্যের যোগান
পুরনের জন্য নিজেরা উৎপাদন চেষ্টা না করে অন্য দেশ বা গোষ্ঠীর নিকট হাত
পাততে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। একবার যদি ভেবে দেখি, নিজেদের খাদ্য চাহিদা
তো আমরা নিজেরাই মেটাতে পারি, কেননা সে সামর্থ্য আমাদের আছে। শুধু একটু
বুদ্ধিবৃত্তির ব্যাবহার করে আমরা অনেক এগিয়ে গিয়ে লাভবান হতে পারি। আসলে
আমাদের একটি সমস্যা হলো স্বাস্থ্যরক্ষায় যত্ন নেওয়া অপেক্ষা স্বাস্থ্য হারানোর পর
চিকিৎসকের নিকট দৌড়ানোতে বেশি আগ্রহী। আগে থেকে যদি সচেতন থেকে আমরা
দেশের জন্য কাজ এর ব্রতী হই, তাহলে আশা করা যায় দেশ সব ধরনের সংকট
মোকাবিলা করতে পারবে। অন্য দেশের কাছে হাত পেতে আমাদের উন্নতি চেয়ে
নিতে হবে না।

আগেই বলেছি, হাজার বছরের সমৃদ্ধ ইতিহাস নিয়ে সমৃদ্ধ আমাদের বাঙ্গালী জাতি।
সেই সমৃদ্ধি ধরে রেখে নতুন সমৃদ্ধ অর্জন করা আমাদের সবার লক্ষ্য। সামাজিক
সমস্যায় জর্জরিত জাতি হিসেবে আমাদের বেশ যশ খ্যাতি আছে। এসব চড়াই-উতরাই
পেরিয়ে আমরা যদি দেশের জন্য সামান্য চিন্তা করে দেশের কাজে এগিয়ে আসি, আশা করা
যায় খুব শীঘ্রই আমরা উন্নত জাতি হিসেবে বিশ্বজগতে আত্নপ্রকাশ করব। উন্নিত হবে বাঙ্গালির
বাঙ্গালিয়ানা!!

আবিদ হামজা
নব্যদীপ্তি_শুদ্ধ চিন্তায় তারুণ্য

এই বিভাগের অন্য খবর

Back to top button