কবে রেহাই পাবো আমরা…
বহুল আলোচিত ঘটনার মধ্য দিয়ে বিগত বছর মহাকালের গর্ভে বিলীন হয়ে গেল। নতুন বছরে আমরা প্রত্যাশা করি একটি মাদকমুক্ত সমাজ। কেননা, বর্তমান বাংলাদেশে যে কয়েকটি সমস্যা রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে মাদক।
মাদকের নীল ছোবলে তরুণদের একাংশ আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। অথচ তরুণরা একটি দেশের প্রাণশক্তি। তরুণরা একটি দেশের ভবিষ্যৎ স্বপ্নদ্রষ্টা।তাদের মাঝে যে শক্তি সাহস উদ্দীপনা রয়েছে তা যদি দেশের কল্যানে মানুষের কল্যানে নিবেদিত হয় তাহলে তা হবে একটি জাতির জন্য অবশ্যই আশির্বাদস্বরুপ। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় তাদের একাংশ আজ বিপথগামী।
বিগত বছরে সেনাবাহিনীর এক অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান অত্যন্ত নির্মম ভাবে হত্যাকান্ডের শিকার হন চট্টগ্রামের টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার সাহার নেতৃত্বে কয়েকজন পুলিশ সদস্যের হাতে। এ হত্যাকান্ডের পেছনের কারণ হলো মাদক। পুলিশের প্রধান কাজ সমাজের শান্তি শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা, দুষ্টের দমন ও শিষ্টের লালন, মানুষের জান মাল রক্ষা করা। বিনাশ বা ধ্বংস নয়।
বর্তমান সামাজিক প্রেক্ষাপটে তরুণদের উদ্দীপনাময় শক্তি স্বপ্ন আজ থেমে গেছে মাদকের ভয়াল গ্রাসে। আমরা হয়তোবা অনেকে ভুলেই গিয়েছি ঐশীর কথা। ২০১৩ সালে এক পুলিশ কর্মকর্তার মেয়ে ঐশী একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পড়তে গিয়ে মাদকের প্রতি আসক্ত হয়ে নিজ পিতা মাতাকেই খুন করে। কোন পরিবারে মাদকাসক্ত কোন সন্তানাদি থাকলে পরিবারে যেমন অশান্তি নেমে আসে তেমনি ভয়ভীতিও থাকে।
শিক্ষিত, অশিক্ষিত হতাশাগ্রস্ত এক শ্রেণির বেকার তরুণরা এই সর্বনাশা পথে পা বাড়িয়েছে। নিম্নবিত্ত মধ্যবিত্ত এমনকি সমাজের ধনাঢ্য পরিবারের সন্তানরাও মাদকে আসক্ত। মাদকাসক্ত ভাইয়ের হাতে ভাই, স্বামীর হাতে স্ত্রী, এমনকি ছাত্রের হাতে শিক্ষক ও খুন হচ্ছে। প্রায় ১৮ কোটি মানুষের এদেশে প্রায় ১ কোটি মানুষ মাদকের প্রতি আসক্ত রয়েছে। দেশের অন্যতম সমস্যার মধ্যে আরেকটি হলো ধর্ষন। এই ধর্ষনের পেছনেও মাদকের অবদান রয়েছে। মাদকাসক্ত লোক তার স্বাভাবিক জীবনকে বিপন্ন করে হয়ে ওঠে পশুর ন্যায়।
আমাদের দেশের এক শ্রেণির কোমলমতি শিক্ষার্থীরাও মাদকে আসক্ত হয়েছে। অসৎ ও খারাপ বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে এসমস্ত শিক্ষার্থীরা কখন যে অভিভাবকের মনের আড়ালে, চোখের আড়ালে বিভিন্ন মাদকদ্রব্যে আসক্ত হয়ে যায় তারা তা জানতেও পারে না। মদ,গাঁজা, আফিম, ঘুমের ঔষধ, হেরোইন, ফেনসিডিল এগুলো মাদকদ্রব্য সবগুলোই আমাদের দেশে নিষিদ্ধ। তবু এগুলোর প্রতিই মানুষের আগ্রহ বেশি। তাই কৌতূহল বশতঃ এগুলোর প্রতি তরুণদের আসক্তি সৃষ্টি হয় এবং ধীরে ধীরে তারা এর সংস্পর্শে আসে। এভাবেই তারা নেশার জগতে পা বাড়ায়। এই নেশা তাদেরকে এমনভাবে গ্রাস করে যে সেখান থেকে তাদের ফিরে আসা অত্যন্ত কঠিন ও অসম্ভব হয়ে পড়ে।
ভৌগলিক দিক থেকে বাংলাদেশে মাদক অতি সহজে পাওয়া যায়। তাই আমাদের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ মাদকের মরণ নেশা থেকে তরুণ সমাজকে বাচানো। মাদক চোরাকারবারী বা সরবরাহকারীর রয়েছে বিশাল নেটওয়ার্ক। এসমস্ত চোরাকারবারীর সাথে জড়িত রয়েছে বাংলাদেশের এক প্রভাবশালী মহল। তাদের যোগাযোগ রয়েছে দেশীয় আন্তর্জাতিক পর্যায়ে। এভাবেই তারা অত্যন্ত সংগোপনে মাদক তুলে দিচ্ছে তাদের সহযোগীদের হাতে এবং সেখান থেকে তরুণদের হাতে। এই মাদকের ভয়াল ছোবল থেকে আমরা কবে রেহাই পাবো??
মাদক সেবীর অধিকাংশ কিশোর কিশোরী, তরুণ তরুণী, যাদের ওপর দেশের ভবিষ্যৎ নির্ভর করে। যাদের ওপর দেশের অগ্রগতি, উন্নয়ন, ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে তাদের একাংশই যদি পথভ্রষ্ট হয় তাই তাদেরকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনতে হবে। অভিভাবকদের সবসময় সজাগ থাকতে হবে। সন্তানদের সাথে বন্ধু সুলভ আচরণ, তাদের ব্যাপারে খোঁজ খবর নেওয়া, এমনকি রাতে নিজ কক্ষে শয়ন করছে নাকি সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে। তাদের প্রতি কখনো উদাসীন হওয়া যাবে না। তাদের সাথে রুক্ষ ব্যবহার করা যাবে না। ভালোবাসা, পারিবারিক বন্ধনের মাধ্যমে তাদেরকে এসব কিছু থেকে দুরে রাখতে হবে। মাদকমুক্ত সমাজ গঠনে সবাইকে একসাথে সচেতন হতে হবে। মাদক বিরোধী অভিযান, নৈতিক শিক্ষা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, সামাজিক মূল্যবোধ জাগ্রত করতে হবে। এছাড়াও তরুণদের রক্ষা করে আইনের শাসন ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি মাদকের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার অন্য কোন বিকল্প নেই। তবেই আমরা মাদকের নীল ছোবল থেকে রেহাই পেতে পারি।
আজিজুল হাকিম অনিক
নব্যদীপ্তি_শুদ্ধ চিন্তায় তারুণ্য