নব্যদীপ্তি_শুদ্ধ চিন্তায় তারুণ্য

সন্দেহ

সন্দেহে খুন হয় সম্পর্ক

সন্দেহ মানুষের একটি সহজাত বৈশিষ্ট্য। সবধরনের সম্পর্কের বড় শত্রু হলো সন্দেহ। একটি সুন্দর সম্পর্ককে নিমেষে টুকরো টুকরো করে দিতে পারে সন্দেহ নামের ঘুনপোকা।

মানুষের মনের বিভিন্ন প্রবণতার মধ্যে সন্দেহ একটি জটিল ও বিচিত্র প্রক্রিয়া। অনেকে বলে থাকেন, ভালোবাসার সম্পর্কে সন্দেহ থাকা ভালো। এতে সম্পর্কের ভিত্তি মজবুত হয়। কিন্তুু আমি মনে করি সন্দেহ কখনোই ভালো কোনো ফল নিয়ে আসে না। ছোট ছোট বিষয়ে সন্দেহ একটা সময় বিশাল রূপ ধারন করে, তিল তিল করে ভালোবাসা দিয়ে গড়ে ওঠা একটি সুন্দর সম্পর্ককে এক নিমিষেই শেষ করে দিতে পারে না। সম্পর্ক নষ্টের জন্য সন্দেহের চাইতে বড় অস্ত্র আর কিছুই হতে পারে না।

ভালোবাসার সম্পর্কে রাগ থাকা, অভিমান থাকা ভালো । এতে সম্পর্কের ভিত্তি মজবুত হয়। কিন্তু সন্দেহকে প্রশ্রয় দেওয়া মোটে ঠিক না। আমরা হঠাৎ করেই সঠিক ঘটনা না জেনে না বুঝে একজনের উপর সন্দেহ করে থাকি । এটা ভলোবাসার ক্ষেত্রেও হয় আবার বিবাহিত জীবনেও হতে পারে । তবে বিবাহিত জীবনে সঙ্গীর প্রতি সন্দেহটা বেশি দেখা যায়। এতে সঙ্গির প্রতি দীর্ঘদিনের গড়ে ওঠা বিশ্বাসের জায়গাটা নষ্ট হয়ে যায়। বিশ্বাস এবং অবিশ্বাসের অন্তর্বর্তী যে নেতিবাচক চিন্তা ও অনুভুতি আমাদের যন্ত্রনা দেয় বা কষ্টের কারন হয়ে দাড়ায় , তার নাম সন্দেহ। এ সন্দেহ নামক ঘুনপোকা যার মনের মধ্যে আশ্রয় নেয় , তাকে একেবারে মানসিক যন্ত্রণার চুড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যায় এবং নিঃশেষ করে দেয়।

সন্দেহ হতে পারে খুব স্বাভাবিক পর্যায়ের ,আবার খুব বেশি অস্বাভাবিক পর্যায়েও পৌছাতে পারে। সন্দেহ একধরনের রোগ, এ রোগের রাস ডিলিউশন প্যারানয়েড সাইকোসিস ও মরবিড জেলাসি। ভালোবাসা আর সন্দেহ কখনও একসাথে থাকতে পারে না। সংসার জীবনে ভালোবাসা আর সন্দেহ এক সাথে রেখে কখনও সংসার সুখের হয়না, সেখানে থাকে শুধু অভিনয়, মেকি আর সন্দেহের হাতছানি।

দাম্পত্য বা পারিবারিক জীবনে পদার্পণের পূর্বশর্ত হল বিবাহ বন্ধন। যা সৃষ্টির সেরা জীব হিসাবে প্রত্যেক মানুষের জন্য সৃষ্টিকর্তার মনোনীত বিধান। সুখ-সমৃদ্ধিতে ভরা শান্তিপূর্ণ জীবন প্রত্যেকটি নর-নারীর চিরদিনের চাওয়া। সম্পর্ককে অটুট ও মজবুত রাখতে প্রয়োজন দু’জন মানুষের মধ্যে সন্মানবোধ আর বিশ্বাস। যে সম্পর্কে, বিশ্বাস, সন্মানবোধ থাকেনা সে সম্পর্ক কখনও মধুর হয়না। সুখি দাম্পত্য জীবন গড়ে তুলতে হলে দুজন দুজনার প্রতি বিশ্বাসি থাকতে হবে, থাকতে হবে অফুরন্ত ভালোবাসা আর আস্থা । বিবাহিত জীবনে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে আত্মিকভাবের আদান প্রদানসহ জীবনের ছোটখাট বিষয়গুলোতে পারস্পারিক ভালবাসা,সন্মান ও বিশ্বাসবোধের মধ্যে দিয়ে দুজন দুজনার হৃদয়ের এক গভীরতম স্থানে পৌছাতে পারে । তাই এই বিবাহ বন্ধন কখনও যেন জন্তু জানোয়ারের মতন জৈবিক কামনা-বাসনা বা যৌনতা পরিপূণের একমাত্র উদ্দেশ্য বা স্থান না হয় সে দিকে দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন।

দাম্পত্যজীবন স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে শুধুমাত্র একটা কাগজের সম্পর্ক নয়। বরং এটি ভালোবাসা, বিশ্বাস, আস্থা ও বন্ধুত্বের সম্পর্ক। দাম্পত্য সম্পর্ককে অটুট রাখতে উভয়ের প্রতি , বিশ্বাস ও সন্মানবোধ থাকাটা অতিব জরুরি। যাতে এ সুন্দর সম্পর্ক কোনো ধরনের অনাকাঙ্খিত ঝড়ঝাপটায় হেলে বা ভেঙে পড়তে না পারে। যতবড় ঝড় আসুক না কেনো দুজন দুজনার ভালোবাসা আর বিশ্বাসের মধ্যদিয়ে সমস্ত প্রতিকুলতা জয় করবে। সাংসারিক জীবনে দুজনের চাওয়া-পাওয়া, চিন্তা-চেতনা, আদর্শিক মূল্যবোধ বিশ্বাস ছাড়া কখনই একমত পোষণ করে সুন্দর দাম্পত্য সম্পর্ক গড়ে তোলা সম্ভব নয়। এক মতের, এক চিন্তাধারার, এক মানসিতার না হলে সংসারে প্রতিনিয়ত অশান্তি লেগেই থাকে। ফলে ছোট ছোট বিষয়গুলো জমাট বেধে পাহাড় সমান হয়ে দাঁড়ায়। এ অবস্থাতে উভয়ের সন্মানবোধ, মর্যাদাবোধ, ভালবাসাবোধ কিংবা অন্তরের ভেতরের জমে থাকা গভীর আকর্ষণবোধ কোন ভাবেই দাম্পত্য সম্পর্কটাকে মজবুতভাবে ঠিকিয়ে রাখতে পারে না।

দাম্পত্য সম্পর্ক যতই মধুর হোক না কেন, দাম্পত্য জীবনে ভালোবাসার পাশাপাশি তিক্ততা মান অভিমান থাকবেই। সংসার মানেই হাসি-কান্না ও সুখ-দুঃখের সম্মিলন। সংসারে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মধুর দাম্পত্য সম্পর্কের পাশাপাশি মনোমালিন্য হওয়াটাও স্বাভাবিক। একসঙ্গে দুজন মানুষ বসবাস করতে গেলে সেই মনোমালিন্য ও তিক্ততাকে মানিয়ে নেওয়ার মানসিকতাও উভয়কে রাখতে হয়। আল্পস্বল্প তর্কবিতর্ক দৈনন্দিন জীবনে থাকতে পারে। লক্ষ রাখতে হবে সেটা যেন বিরাট কলহে রূপ না নেয়। আমরা অনেকেই বলে থাকি যে, দাম্পত্য জিবনে ঝগড়া করলে সম্পর্ক ভালো হয়। এ চিরন্তন বদ্ধমূল ধারণাটা একদম ভুল! ঝগড়া করলে সম্পর্ক কখনও ভালো হয় না, বরং ঝগড়ার সময়ে আনেকে রাগের মাথায় এমন অনেক কথা বলে ফেলে যা পরবর্তীতে চলার পথে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। আর তাই, সমস্যা যতই গভীর হোক দাম্পত্যের ক্ষেত্রে কলহটা এড়িয়ে যেতে হবে সুকৌশলে। আর বিবাহিত জীবনে স্বামী বা স্ত্রীর মধ্যে কলেহের অন্যতম প্রধান কারন হলো সন্দেহ। মনের মধ্যে এ সন্দেহ নামক বীজ যে কোন সময় ঢুকতে পারে । সন্দেহ ঢোকার জন্য কোন নির্দিষ্ট দিন , নির্দিষ্ট বয়সের দরকার হয় না । যে কোন কারনে সঙ্গীনির মনের মধ্যে আসতে পারে সন্দেহ । যার না থাকে সঠিক কোন যুক্তি বা সঠিক কারন । এটা স্বামী বা স্ত্রী উভয়ের ক্ষেত্রেই হতে পারে ।

আসলে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই প্রতিনিয়ত চিন্তা এবং পরিকল্পনার পাশাপাশি মানুষের মনে কখনও কখনও সন্দেহ জেগে ওঠে। সন্দেহের নেতিবাচক দিকের পাশাপাশি ভালো দিকও আছে।ইতিবাচক অর্থে সন্দেহ মানুষকে সাবধানী হতে সাহায্য করে। তবে সন্দেহটা ইতিবাচক এর চায়তে নেতিবাচক ভাবেই সবার মাঝে বিরাজ করে। সাংসারিক জীবনে এ সন্দেহ নামক ঘুনপোকাপটা সবচায়তে বেষি ঘোরাফেরা করে , আর মনের মধ্যে এ সন্দেহ ঢুকিয়ে দেবার জন্য তৃতীয় পক্ষকে বেশী প্রাধান্য দিয়ে থাকে কেউ কেউ। আর যার কারনে তখন তৃতীয় পক্ষের কথাকে কোন প্রকার যাচাই না করেই প্রিয় মানুষটাকে অবিশ্বাস করে তৃতীয়পক্ষকে আপন করে ফেলে। তার কথাকে বিশ্বাস করে কোন প্রকার যাচায় ছাড়াই সন্দেহের উপর ভিত্তি করে অনেকে সুখের সংসারটাকে মহা শ্বশান বানিয়ে ফেলে। তিল তিল করে গড়ে তোলা ভালোবাসার সংসার বা সম্পর্ককে নিঃশ্বেস করে

এই বিভাগের অন্য খবর

Back to top button