দুর্ঘটনা

বিশ্বে সড়ক দুর্ঘটনায় ৫ থেকে ২৯ বছর বয়সীদের বেশি মৃত্যু হয়

বিশ্বে ৫ থেকে ২৯ বছর বয়সীরাই সড়ক দুর্ঘটনায় বেশি মারা যায় বলে জানিয়েছে ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রোপিস ইনিশিয়েটিভ ফর গ্লোবাল রোড সেফটি (বিগ-আরএস)। তবে, বাংলাদেশে ৫ থেকে ১৪ বছর বয়সীদের মৃত্যুর চতুর্থ প্রধানকারণ সড়ক দুর্ঘটনা বলেও চিহ্নিত করেছে সংস্থাটি। আর সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হওয়া মানুষের ৬৭ ভাগেরই বয়স ১৫ থেকে ৪৯ বছরের মধ্যে। বৃহস্পতিবার (১১ মার্চ) ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ও ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রোপিস ইনিশিয়েটিভ ফর গ্লোবাল রোড সেফটি(বিগ-আরএস) কার্যক্রমের মধ্যে ঢাকা মহানগরীতে সড়ক দুর্ঘটনা ও মৃত্যু কমিয়ে আনার লক্ষ্যে ২০২৫ সাল পর্যন্ত একটি সহযোগিতা কার্যক্রমের সূচনা অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানানো হয়। ডিএনসিসির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও বিগ-আরএস কার্যক্রমের কারিগরি প্রধান ড. তারিক বিন ইউসুফ ঢাকা উত্তর সিটির সার্বিক সড়ক নিরাপত্তার বিষয়গুলো উপস্থাপন করেন। তিনি জানান, নিরাপদ সড়ক চাই’র তথ্যমতে, ২০১৯ সালে ৪ হাজার ৫শ’র বেশি সংঘর্ষে ৫ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত এবং প্রায় ৭ হাজার মানুষ আহত হয়েছেন। সহযোগিতা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে সারা বিশ্বে সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম প্রধান কারণ, গাড়ির গতিবেগ নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে এ কার্যক্রমে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে। ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রোপিসের পার্টনারশিপ ফর হেলদি সিটিজ’র আওতাভুক্ত সড়ক নিরাপত্তা কার্যক্রমের সহযোগী হিসেবেও ডিএনসিসি কাজ করবে। সহযোগিতা কার্যক্রমের ভার্চুয়াল উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ঢাকা উত্তর সিটি মেয়র জনাব মো. আতিকুল ইসলাম ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রোপিসের প্রতিনিধি কেলি লার্সন এবং অন্যান্য সহযোগী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে ঢাকা ট্রান্সপোর্ট কোঅর্ডিনেশন অথরিটি (ডিটিসিএ), ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি), বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ), বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)-এর অ্যাক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এআরআই) প্রতিনিধিরাও অংশগ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বিগ-আরএস কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার ও নগর কর্তৃপক্ষের সমন্বয়ে গঠিত একটি নেটওয়ার্কে অংশ নিয়েছে। যেখানে বৈশ্বিক পর্যায়ের সড়ক নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের সহায়তা নেয়ার সুযোগ রয়েছে। এ কার্যক্রমের আওতায় উপাত্ত সংগ্রহও পর্যবেক্ষণ, নিরাপদ সড়ক এবং নিরাপদ চলাচল, পুলিশের আইন প্রয়োগ এবং গণমাধ্যমও যোগাযোগে সহায়তা প্রদান করা হবে। সড়কে প্রাণ সুরক্ষায় তথ্য-উপাত্তনির্ভর ও পরীক্ষিত সমাধান বাস্তবায়নে আন্তর্জাতিক সহযোগী সংস্থাগুলো ডিএনসিসিকে কারিগরি ও অর্থনৈতিক সহায়তা প্রদান করবে। সহযোগী সংস্থাগুলোর মধ্যে রয়েছে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা, ভাইটাল স্ট্যাটেজিস, গ্লোবাল রোড সেফটি পার্টনারশিপ (জিআরএসপি), ওয়ার্ল্ড রিসোর্স ইন্সটিটিউট (ডব্লিউআরআই), জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটি ইন্টারন্যাশনাল ইনজুরি রিসার্চ। ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রোপিস-এর প্রতিনিধি কেলি লার্সন বলেন, ‘সড়ক সংঘর্ষ ও হতাহতের সংখ্যা কমিয়ে আনতে ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রোপিস ইনিশিয়েটিভ ফর গ্লোবাল রোড সেফটি শীর্ষক আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্কে ঢাকা মহানগরীকে স্বাগত জানাতে পেরে আমরা আনন্দিত। সারাবিশ্বে প্রতিবছর ১৩ লাখ ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষ সড়কে নিহত হয়। পরীক্ষিতও উপাত্ত-নির্ভর কার্যক্রম বাস্তবায়নের মাধ্যমে এই মৃত্যু সংখ্যার প্রায় পুরোটাই প্রতিরোধ করা সম্ভব। প্রাণ সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় এই পদক্ষেপ নেয়ায় আমরা ডিএনসিসির মেয়রকে সাধুবাদ জানাই। তাছাড়া ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রোপিস পার্টনারশিপ ফর হেলদি সিটিজ’র অংশ হিসেবে ২০১৭ সাল থেকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সড়ক নিরাপত্তা উন্নয়ন প্রচেষ্টারও প্রশংসা করি।’ সূচনা বক্তব্যে ডিএনসিসি মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, সড়ক নিরাপত্তার বিষয়গুলো বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে ২০১৮ সালের ২৯ জুলাই এয়ারপোর্ট রোডের কুর্মিটোলায় একটি বেপরোয়া গতির বাস চাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার ঘটনায় ফুঁসে ওঠা শিক্ষার্থীদের সড়ক নিরাপত্তা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। শিক্ষার্থীরা সারা দেশের সড়কগুলো দখলে নিয়ে সড়ক নিরাপত্তার দাবিতে টানা নয় দিন আন্দোলন চালিয়ে ছিলো। মেয়র বলেন, এ কার্যক্রমের লক্ষ্য হলো ট্রাফিক আইন প্রয়োগ জোরদার করা, সড়কের নকশা উন্নত করা,অবকাঠামো নির্মাণ, সড়কে হতাহতের ঘটনার নজরদারি ব্যবস্থা এবং জনসচেতনতা বাড়াতে ও আচরণ পরিবর্তনে গণমাধ্যমে প্রচারণা চালানো হবে। বৃহত্তর সহযোগিতা ও সমন্বয়ের মাধ্যমে ঢাকা মহানগরীতে সড়ক দুর্ঘটনা ও হতাহতের ঘটনা কমিয়ে আনার জন্য তিনি ডিটিসিএ, ডিএমপি, বিআরটিএ, বুয়েট-এর এআরআই-এর প্রতি আহ্বান জানান ডিএনসিসি। তিনি বলেন, ‘আমি আশা করি আগামী পাঁচ বছরের পরিকল্পনা অনুযায়ী সড়ক নিরাপত্তা কৌশল ও কার্যক্রম বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমরা আরো বাসযোগ্য, নিরাপদ ও সহিষ্ণু ঢাকা গড়ে তুলতে পারবো। এ আশাবাদ ব্যক্ত করার মাধ্যমে তিনি এ কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন। পার্টনারশিপ ফর হেলদি সিটিজ’র পরবর্তী ধাপের অংশ হিসেবে সড়ক নিরাপত্তা উন্নয়নে ডিএনসিসি অবকাঠামো উন্নয়নে কাজ করবে। পরিপূরক হিসেবে এসকল কর্মকাণ্ড বিগ-আরএস কার্যক্রমের আওতায় পরিচালিত জীবন রক্ষাকারী কার্যক্রমকে আরো জোরদার করবে বলে অনুষ্ঠানে জানানো হয়। বিগ-আরএস কার্যক্রমের তৃতীয় ধাপে (২০২০-২০২২) যেসব দেশের নগর অন্তর্ভুক্ত হয়েছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে আর্জেন্টিনা, বাংলাদেশ, ব্রাজিল, কলম্বিয়া, ইকুয়েডর, ইথিওপিয়া, ভারত, উগান্ডা ও ভিয়েতনাম। বর্তমান নগরগুলোর মধ্যে আক্রাও কুমাসি (ঘানা), আদ্দিস আবাবা (ইথিওপিয়া), বোগোতা (কলম্বিয়া), ঢাকা (বাংলাদেশ), গুয়াদালাজারা (মেক্সিকো), হ্যানয় ও হো চি মিন সিটি (ভিয়েতনাম), কাম্পালা (উগান্ডা), মুম্বাই, বেঙ্গালুরুও নয়া দিল্লী (ভারত) এবং সাও পাওলো, সালভাদরও রেসিফ (ব্রাজিল)। ২০০৭ সাল থেকে সড়ক নিরাপত্তা ক্ষেত্রে ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রোপিস-এর বিনিয়োগের ফলে প্রায় ৩ লাখ ১২ হাজার জীবনরক্ষা পেয়েছে এবং প্রায় ১ কোটি ১৫ লাখ আঘাতের ক্ষয়ক্ষতি প্রতিরোধ সম্ভব হয়েছে। বিগত ১২ বছরের সফলতার ভিত্তিতে ২০২০ সালে ফেব্রুয়ারিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক সুইডেনের স্টকহোমে আয়োজিত ৩য় গ্লোবাল মিনিস্ট্রিয়াল রোড সেফটি সম্মেলনে ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রোপিস তাদের সহায়তা দ্বিগুণ করার ঘোষণা দেয়। সে অনুযায়ী ২০২০-২০২৫ সালের মধ্যে সারাবিশ্বের নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে আরো ৬ লাখ জীবন বাঁচানো ২ কোটি ২০ লাখ আঘাতের ক্ষয়ক্ষতি প্রতিরোধে আরো ২৪০ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ নিশ্চিত করে। সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনা প্রতিরোধে বিশ্বব্যাপী কার্যক্রমগুলোতে সড়ক নিরাপত্তার প্রধান চারটি ঝুঁকির কারণসহ (গতিবেগ, মদ পান করে গাড়ি চালানো, হেলমেট না পরা এবং সিট বেল্টও শিশুর সুরক্ষায় বিশেষ আসন ব্যবহার না করা) প্রধানতম ঝুঁকি হিসাবে গতিবেগ বিষয়ে পরীক্ষিত কার্যক্রম বাস্তবায়নের মাধ্যমে জীবন বাঁচাতে দেশীয় অংশীদারদের সাথে সহযোগিতা স্থাপন করছে বিগ-আরএসকার্যক্রম।

এই বিভাগের অন্য খবর

Back to top button