যেভাবে পরিচয় ও বিয়ে হয় ভাইরাল পুলিশ দম্পতির
‘উপ-পরিদর্শক পদে যোগদান করতে ট্রেনিং শুরু করি ২০১৮ সালের ২৭ জানুয়ারিতে। পুলিশের ট্রেনিং শেষ হয় ২০১৯ সালে। এরআগে থেকেই পরিচয় এএসপি উর্মী দেবের সঙ্গে। ২০২০ সালের ২৮ জানুয়ারিতে উপপরিদর্শক (এসআই) পদে আমার পুলিশের চাকরি নিশ্চিত হয়। এরই মধ্যে দুইজনের মাঝে মাঝে আলাপ আলোচনা হয়। একপর্যায়ে একে অপরকে পছন্দ করি। বিষয়টি যার যার পরিবারকে জানালে পরিবারের সদস্যরা আলাপের পর ২০২০ সালের ৩০ নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ের ব্যবস্থা করেন।’ সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া একটি স্ট্যাটাসের বিষয়ে জানতে চাইলে সেই ‘পুলিশ দম্পতির’ পরিচয় এবং বিয়ে সম্পর্কে বলছিলেন উপ-পরিদর্শক উজ্জ্বল ঘোষ।
বৃহস্পতিবার (১৮ মার্চ) সন্ধ্যায় বাংলাদেশ পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) উজ্জ্বল ঘোষ জিতু ও তার স্ত্রী পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) উর্মী দেবের ছবি তাদের ফেসবুকে পোস্ট করেন। এরপরই মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে এই পুলিশ দম্পতির ছবি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উর্মি দেব বলেন,‘আমার স্বামীর সঙ্গে চাকরিতে যোগদান করার পর পরিচয়। কর্মজীবন আর আমাদের ব্যক্তিগত জীবন আলাদাভাবে চালাতে হয়। যেন একটির কারণে আরেকটি ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। একই পেশায় দুইজন থাকায় ভালো হয়েছে। কারণ একজন আরেক জনেরটা সহজে বুঝতে পারবেন।’
এক প্রশ্নের জবাবে এএসপি উর্মিদেব বলেন, ‘আমরা যখন বিয়ে করি তখন দুইজনই চাকরিজীবী। আমরা বুঝে শুনেই বিয়েতে সম্মত হয়েছি। তাই আমাদের কোনো সমস্যা হবে না বলে আশা করছি। তারপরও সাংসারিক জীবনে প্রতিটি দম্পতির ব্যক্তিগত কিছু সমস্যা হতে পারে। আশা করছি এসব বিষয় আমরা দুইজন আলোচনার মাধ্যমে তা সমাধান করার চেষ্টা করে যাব।’
উর্মি দেব বর্তমানে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া রেলওয়ে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।
উজ্জ্বল ঘোষ জিতুর বাড়ি ফরিদপুর জেলা সদরে। তার বাবা ছিলেন একজন পরিবহন ব্যবসায়ী। সে দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে বড়। এবং উর্মী দেবের বাড়ি চট্টগ্রামে। তার বাবা একজন আইনজীবী। সে এক ভাই ও এক বোনের মধ্যে সবার বড়।
স্ত্রী সম্পর্কে জিতু বলেন,‘আমার স্ত্রী খুব ভালো মানুষ। তার সততার কোনো কমতি নেই। আমার মতো একজন নগন্য মানুষকে বিয়ে করে বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনি আসলেই কতটা নির্লোভ ও নিরহংকার।’
তিনি জানান, বর্তমানে তিনি কুমিল্লা জেলার মীরপুর হাইওয়ে পুলিশে কর্মরত আছেন।
উল্লেখে, বৃহস্পতিবার উজ্জ্বল ঘোষ জিতু তার ফেসবুক পোস্টে লিখেন, ‘পুলিশিং পেশার ব্যাপারে যাদের একটু ধারণা আছে, তারা বলতে পারবেন অবস্থানগত দিক থেকে আমার সহধর্মিণীর অবস্থান আমার থেকে কতটা উপরে। আমাদের বিয়ের পর আমাদের কারও চাকরি হয়নি। আমার আর আমার সহধর্মিণীর অবস্থানের এই আকাশ পাতাল পার্থক্যের তোয়াক্কা না করে এই দেবীতুল্য মানুষটা আমাকে আপন করে নিয়েছিলেন। যখন অহরহ পোষ্ট দেখি মেয়েরা লোভী হয়, মেয়েরা বিসিএস স্বামী খুঁজে পেলে সব ছাড়তে পারে, মেয়েরা টাকা আর অবস্থান ছাড়া আর কিছু বোঝে না, আমার তখন খুব হাসি পায়, মায়ের জাত নিয়ে কি আমাদের চিন্তাধারা এটা ভেবে। একজন বিসিএস কর্মকর্তা যে কিনা আমার মতো একজন সামান্য মানুষকে এতটা আপন করে নিয়েছেন তিনিও তো একজন মেয়ে।’