জাতীয়

পদত্যাগ করলেন হেফাজতের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির

পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির ও নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির সভাপতি মাওলানা আব্দুল আউয়াল। 

সোমবার রাতে নগরীর ডিআইটি এলাকায় রেলওয়ে কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে মুসল্লিদের সামনে এ ঘোষণা দেন তিনি। এমন সিদ্ধান্তে পেছনের কারণও ব্যাখ্যা করেছেন এ প্রবীণ আলেম।

দলের ‘অতি উৎসাহীদের’কারণেই তিনি হেফাজতের এ পদ থেকে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানান  মাওলানা আব্দুল আউয়াল।

অনেকটা ক্ষোভের সুরে মাওলানা আব্দুল আউয়াল বলেন, ‘আমার নেতৃত্ব না মেনে কর্মীরা কার্যক্রম চালায় সুতরাং নেতৃত্বে থাকার কোনো কারণ দেখছি না আমি। সোমবার কেন্দ্রীয় দোয়া কর্মসূচি ডিআইটি মসজিদে করার কথা থাকলেও দলের কিছু নেতা মিলে দেওভোগ মাদরাসায় সে আয়োজন করেছেন। আমার কথা কেউ শোনে না। আমি আর কোনো দলে থাকতে চাই না। হেফাজত, ওলামা পরিষদ সবকিছু থেকে পদত্যাগ করেছি। মৌখিকভাবে কেন্দ্রে তা জানিয়েছি। তারা লিখিত চাইলে তাও দেব।’

এ প্রবীণ আলেম আরো জানান, রোববার সকাল থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়ে পুলিশ মসজিদের বাইরে ও চারপাশে অবস্থান নিয়েছিল। আমরা শত অনুরোধ আবদার করেও বের হতে পারিনি। এরই মধ্যে খবর পাচ্ছিলাম যে, সিদ্ধিরগঞ্জের চিটাগাং রোডে সন্ত্রাসীরা বাস পোড়াচ্ছে। সেখানে মাদ্রাসার ছাত্ররা ছিল না। এখন আমরা বা আমি যদি সেখানে বের হতাম তবে সিদ্ধিরগঞ্জের মতো এখানেও গুলি চালানো হতো, অনেক মায়ের বুক খালি হতো, সাধারণ মানুষের রক্ত-ঘামের টাকায় গড়ে উঠা এই মসজিদ ঝাঁজরা হয়ে যেত। কিন্তু আমাদের অতি উৎসাহী লোকজন এটা বুঝল না।

তিনি বলেন, তারা অভিযোগ করছে কেন আমি পুলিশ ব্যারিকেড না মেনে বের হলাম না। আর পুলিশ বলছে যদি বের হতেন তবে এই ১৭ বাস পোড়ানোর মামলায় আপনি হতেন ১নং আসামি। যদি সেদিন আমি বের হতাম আর লাশ পড়ত তবে আপনারাই আমাকে দোষ দিতেন। তাই আমার দলের লোকেরা ইতোমধ্যে আমাকে মাইনাস করে দিয়েছে। তারা দোয়ার স্থান পরিবর্তন করে ফেলেছে। যেহেতু আমার বয়স হয়েছে, আমি দাঙ্গা-হাঙ্গামা পছন্দ করি না, তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমার আর আমীর থাকার দরকার নেই। অতি উৎসাহীরা দল পরিচালনা করুক। 

সবশেষে তিনি আবারও পরিষ্কার করেন, আল্লাহর ওয়াস্তে বলছি আমি আর দল করব না। আমি এমনিতেই মসজিদে থাকব। আমি আর কোনো কাজে সরাসরি নেতৃত্ব দিয়ে যাব না। তাদের বলছি, তোমরা যারা অতি উৎসাহীওয়ালা আছো, তোমরা করো যাও। আমার এখন বয়স হয়েছে, অসুস্থ মানুষ, চলাফেরা করতে পারি না, তাই আমি আর হেফাজতের নেতৃত্ব দেব না। আমি কর্মী হিসেবে থাকব, নেতৃত্বের মধ্যে নাই। সংবাদ সম্মেলন কইরা ইস্তফা দিয়া দিব। আমি আর হেফাজতের নেতৃত্ব দেব না।

মাওলানা আব্দুল আউয়ালের আচমকা এই পদত্যাগ ও এমন বক্তব্যের বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ মহানগর হেফাজতের আমীর মাওলানা ফেরদাউসুর রহমান জানিয়েছেন, পদত্যাগের বিষয়টি আব্দুল আওয়ালের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত হলেও বিষয়টি সংগঠনের নিয়ম মোতাবেক হয়নি। কারণ উনি হেফাজতের কেন্দ্রীয় নেতা। মসজিদে বসে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত না দিয়ে উনি দলীয় ফোরামে বিষয়টি বলতে পারতেন।

দোয়ার বিষয়ে ফেরদাউসুর রহমান বলেন, এটি কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ ছিল; যা মহানগর দেওভোগ মাদ্রাসায় করেছে সোমবার বিকালে। উনি জেলা সভাপতি হয়ে জেলার পক্ষে তো দোয়ার আয়োজন করতে পারেননি।

এদিকে নাশকতার ব্যাপারে এই হেফাজত নেতা দাবি করেন, আমাদের কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ ছিল কিন্তু অনুপ্রবেশকারীরা এসব ঘটিয়েছে।

এই বিভাগের অন্য খবর

Back to top button