তমসা-তপন
বসন্তের দখিনা হাওয়া মাখা শহর, উন্মত্ত পদচারণ, চলমান বাস্তবতা.. বিরাম নেই, আছে শতক খানেক নার্সারি আর ফুলের বাগান, রাস্তার পাশে আছে বাসন্তী রঙের মায়বী পরশ। তার মাঝে যে ধীরে ধীরে সঞ্চয় হয় কালো সব উন্মাদ গল্প, মুছে যায় বহমানতা৷ তারপর যখন রাত হয়, ছলোছলো চোখের বিষন্ন চাহনি নিয়ে পূর্বে তাকিয়ে থাকে আকাশের বিন্দুগুলো- হয়তো আবার সূর্য উঠবে, এবার হয়তো সগৌরবে, আপন মাহাত্ম্য ছড়িয়ে ছড়িয়ে, থাকবে না কালবোশেখির ছায়া।
“আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে
কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে..”
কুসুমকুমারীর সেই ছেলেরা যে আর প্রশ্নবোধক চিহ্নের অপেক্ষা রাখে না! তারা এসেছে, জয় করেছে., দেখিয়ে দিয়েছে। এখনো অনেক ছেলেই আসে, আসতে থাকে, হয়তো আবারো আসবে নতুন স্বপ্নের ডানা মেলে, আবিষ্কারের প্রেরণায়।
ক্যানভাসে, কলমে, পথে- নেই কোথায় তারা?
কবির সেই কথায় না বড় হতে পারা ছেলেরা হতে পারে তাঁর কাছে এক আদর্শ ছেলে, অনেকদিন তাঁর ধারণাটুকুই যে ঠিক ছিল.. কিন্তু প্রকৃতি তো সদা বদলায়। বদলায় তার ভালোলাগা, তার প্রেম, তার ট্রেডিশান, নস্টালজিক ইমোশনাল হয়ে পুরনো ছন্দে সে চলবে না, চলাটাও ঠিক না।
দুচোখ মেললে যে এক্ষেত্রেও বদল দেখা যায়৷ কথায় বড় না হয়ে শুধু কাজ করলে লোকে মাথায় তুলে রাখবে না যে- সে তার মতো করে যাবে, আশেপাশের দুচারজনের কাছেই থাকবে তার নাম, কিন্তু কথায় বড় হওয়া যে বর্তমানে এক অসাধারণ প্রতিভা! তাতেই শ্রদ্ধা, তাতেই তৃপ্তি।
গণতন্ত্রের এই যা জ্বালা। চিরকাল কালো পর্দার তলে চোখ দেয়া লোকের দল কিভাবে বুঝবে আলো আর আঁধারের পার্থক্য?
আমাদের সমাজে বড্ড কদর কথায় বড় হওয়া মানুষের। তারা গল্প লিখেন, তাতে মিশে দেন আবেগ, আর অসাধারণ কিছু বিচ্ছিন্নকারী বাক্য। তবে দুর্ভাগ্য, তাদের হয়তো কলম নেই, তাই পরিস্থিতির নির্মম পরিহাসে তাদের উপন্যাসের পাতায় পরিণত হয় মানুষের মন, যার চরিত্রগুলো নির্দিষ্ট কিছু দিকেই সীমাবদ্ধ।
তবে এক্ষেত্রে ব্যাতিক্রম নেই, তা নয়। তবে অধিকাংশ সময় দেশের রাজনীতির আশীর্বাদ খ্যাত এইসব ছেলে-মেয়েরা যে বড্ড স্বার্থপর, নির্মম, নিষ্ঠুর। তাদের কাছে দেশ বা মানুষ এর চেয়ে দল অনেকটা বড় এমনকি দলের চাইতে তারা নিজেরা বড়।
সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন সব কলংকিত ঘটনার কথা মনে করলেই বোঝা যায়, সমাজে কি অপব্যবহার না হচ্ছে! বিশ্বাস রাখি গণতন্ত্রের প্রতি, রাজনীতির প্রতি। কিন্তু শেখ মুজিবের মতো কয়জন শুধু বড় বড় কথা না ঝেড়ে কাজ করে যান? কয়জন বা ভালোবাসেন নিজের দেশকে? তারা শুধু গল্প লিখতেই পারে, বাস্তবতা গুরুত্বপূর্ণ কই?
এখানকার একটু বেশি কথা বলতে পারারাই রাস্তার নায়ক। কয়জন বোঝেন পিচঢালা এই দেশের রাস্তার উপর দিয়ে কতো রক্তিম স্রোত বয়েছে?
কালো কালো মেঘওয়ালা কালবোশেখের স্পর্শ যে বার বার আঘাত হানে, লোকেও হারায় জ্ঞান আর হয়ে যায় মহাভক্ত! দিনশেষে জয় তো কথারই! এসবের মাঝেও যারা কর্মে নিজেকে বলি দানে কুন্ঠিত হয় না, তারা আসলেই মহামানব। এতে যে অনেক ক্ষেত্রে মূল্যটুকু পাওয়া যায় না। কারণ রাস্তায় নামতে জানেন তারা দেশপ্রেমিক হিসেবে। কোনো নেতাপ্রেমিক হিসেবে নয়! কিংবা লোকের কাছে বড়মাপের প্রভাবশালী সাজার জন্য না আর সেই প্রভাবের প্রতিপ্রভাবে লোভনীয় কিছু প্রাপ্তির আশায়। কেন্দ্রীয় পর্যায়ের শাসনের প্রতি লোকের সন্তুষ্টি স্বাভাবিক। কিন্তু প্রান্তিক পর্যায়ে ক্ষুদ্র মানসিকতার সূর্যসন্তানদের অভাব নেই দেশে!
তাএ মাঝেও যে পুষ্পের দল বেঁচে থাকে, দেখে স্বপ্ন, দেখায় স্বপ্ন৷ তাদেরই হাত ধরে হয়তো একদিন ফিরবে বিশ্বাস, নীতি, আর আশার কবিতা।
কিন্তু এতো সহজ যে কিছু নয়! নিজের কান্ডযদি দৃঢ় না হয়, ঝড়ে তো তা ভাংবেই! মানুষের বেঁচে থাকা তো অপেক্ষা নিয়েই। অপেক্ষা, সৌন্দর্যের, সুশীলতার। কর্মস্পৃহায় জোর দান একান্ত প্রয়োজন, এমন শক্তি যার সামনে হার মানে মিথ্যার গল্প, যার জন্য লোকে সালাম জানায় মন থেকে, দেখতে শুরু করে অসাধারণ মানুষ হিসেবে। উপরতলার প্রতি ভালোবাসা না থাকলেও মানুষ যে পারে সবার উপরে বসিয়ে রাখতে। সেই তো প্রকৃত গল্পকার, বাস্তবতার ঔপন্যাসিক।
সূর্য উঠুক, দেখা যাক, হয়তো এবার মেঘ নাও আসতে পারে। কিন্তু এমন নয় তো, সাথে সাথে বসন্তও চলে গেল আর তার পুষ্পের দলও?
এমনটা তো হতেই পারতো, ঝড়ের মেঘ গুলো সরিয়ে নিতে নতুন উপায়ে- গণতন্ত্র যে মূর্খের শাসন- ভুল বলেছিল এরিস্টটল?
পরক্ষণেই ভয় হয়, যদি তার সাথে পরবর্তী মাসগুলোর স্নিগ্ধ বর্ষণটুকুও চলে যায়? মিয়ানমার তো জ্বলন্ত উদাহরণ।
দুর্ভাগ্য হলেও সত্য, আমরা out of the box চিন্তা খুব কমই করেছি, তাই নতুন কিছুতে আমাদের মন বসবে না.. পাখিই গান গাক, ফুল না থাকলেও চলে….
মোঃ তাহমিদুল ইসলাম