নব্যদীপ্তি_শুদ্ধ চিন্তায় তারুণ্য

আত্মহত্যায় সমাপ্তি?

একটা সার্থক উপন্যাসের অন্যতম বৈশিষ্ট্য তার বিশেষ একটি দিক, যা বিদ্যমান নাটক কিংবা গল্পেও;কবিতাতে থাকবে না এমন না। তা হলো কখনো অপ্রত্যাশিত আবার কখনো অপ্রয়োজনীয় এক বিরহী অংশ। যা ফুটে উঠতে পারে মন খারাপের এক সন্ধ্যায় জলো ছলোছলো সুরে বিষন্নতায় ভরপুর অদ্ভুত নৈঃশব্দ আর দীর্ঘশ্বাসের মাঝে, অথবা চন্দ্রবিজয়ের দ্বারপ্রান্তে থেকেও একটা স্পেসশিপের অভাবে অনর্গল কাকুতির মধ্যে। একটা রোমান্টিক সিনেমায় যদি বিচ্ছেদের অংশ নাই থাকে! তাকে দর্শকস্রোতা যে গ্রহন করবে
এক টিপিকাল সাংসারিক গল্প হিসেবে- এ বিষয়ে সন্দেহই নেই।

আশ্চর্যের কথা, যে মানুষকে নিয়ে সাহিত্য – মাঝে মাঝে সে নিজেই ভুলে যায় তার মর্মার্থ, তার লেসন, তার আনএক্সপেক্টেড বাট মোস্ট ওয়ান্টেড অংশটুকুর গুরুত্ব।
আমরা খুব সুন্দর করে গল্প লিখতে পারি, মনে মনে সুন্দর একটা গান গাইতে পারি,কবিতাও আবৃত্তি করতে পারি৷ কিন্তু কয়জন পারে বাথরুমের ইট পাথরের অডিটোরিয়ামের বাইরে মনুষ্যলোকের সামনে গলা ফাটাতে?
আমাদের খুব ইচ্ছে করে একজন সিনেমার নায়কের দৃষ্টিতে নিজেকে দেখতে। প্রিয় এক গল্পের বইএর প্রধান চরিত্রের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে এই নিষ্ঠুর বাস্তবতায়। কিন্তু সেই ইচ্ছের সাথে বাস্তবতার মিল দেখাতে ঠিক কতোজন সফল হন?
কথাগুলো লিখতে হচ্ছে যদিও তার প্রয়োজন হতোই না, যদি আমরা আজ সত্যিকারের মানুষ হতে পারতাম,সমাজটা মানুষের সমাজ হতে পারতো!
Depression – গত কয়েক মাসের অভিজ্ঞতায় এই শব্দটার সাথে যদি আপনার পরিচয় ঘনিষ্ঠ না হয়ে থাকে, নিঃসন্দেহে আপনি হয় অতি সৌখিন অথবা সমাজবিচ্ছিন্ন মানুষ। এই ইট পাথরের সভ্যতায় মানুষের মন যে ভরে না, ধীরে ধীরে বাসা বাঁধে অতৃপ্তি। মাঝে মাঝে হয়তো মনে হয়, আমার চেয়ে দুঃখী কেউ নেই। হয়তো নেই। তাই লোকের মনে প্রথম আসে চিরবেদনাহত এই জীবনের অপ্রয়োজনীয়তার কথা। কতো লোকে আত্মাহুতি দিল গত কয়েক মাসে! হয়তো এজন্যই যে তাদের নিজেদের প্রাণটাই সবচেয়ে নিষ্প্রয়োজন। আচ্ছা, কন্ট্রাডিকশন মনে হচ্ছে না? “সবচেয়ে!” কথাটির অর্থই বা কী? তা তো প্রযোজ্য এককের, এতো বড় লিস্ট কেন এল?

সবকিছুর মূলে যে সেই একই গল্প, একই বিরহী অংশ। অপ্রাপ্তির আর্তনাদ, আশংকার অতৃপ্তি, মনের অপূর্ণতা, পারিপার্শ্বিক অসম্পূর্ণতা…. আর সেই গল্পের সমাপ্তি! এখানেই যা পার্থক্য। উপন্যাস গল্পের ক্ষেত্রে যা হার না মানার স্পিরিট, কিছু ক্ষেত্রে বাস্তবতায় তা হারকে মন থেকে বরণ করে নিয়ে পৃথিবীর বুকে মৃত মানুষের দীর্ঘশ্বাস মাখা উতল হাওয়া বাওয়ানোর প্রচেষ্টা। হাস্যকর বিষয় হলো এই প্রচেষ্টার ক্ষেত্রে বিভেদ নেই, এমনকি সেইসব সিনেমার হিরোও বাদ যায় না। তাহলে কি এমন যে, আমরা বাস্তবতার প্রতি ভালোবাসা হারিয়ে ফেলেছি? আমরা কল্পনার রাজ্যের নায়ক হবার স্বপ্ন দেখতে দেখতে জীবনের গুরুত্ব হারিয়ে ফেলছি না তো?

একটা অপ্রত্যাশিত দিক আছে বলেই প্রতিটা জিনিস সুন্দর বলে মনে হয়৷ বাড়িতে মায়ের হাতে মার না খেলে তার পরবর্তী স্নেহের পরশ পাওয়া যে অসম্ভব। ফেল করার পদ্ধতি না থাকলে পাশ করার মাঝের আনন্দ আছে? কিন্তু তার জন্য যে দু চারজনকে ফেল করতে হয়। তার মানে কি এই যে সে চিরদিন ব্যর্থ থাকবে? আদুভাইও ক্লাস এইটে উঠতে পেরেছিল৷ হাস্যকর হলেও এটাই সত্য, সেই শত ব্যর্থতার পর ক্লাস এইটে উঠে আদুভাইএর যায়গায় আপনি থাকলে যে আনন্দ পেতেন, সারাজীবন পাশ করে শেষে একটা ফেলের জন্য জীবন বলি দেয়ার মাঝে তার বিন্দুমাত্র ছোঁয়া আছে কি? ধর্মে আত্মহত্যা মহাপাপ। কিন্তু শুধু পরকালই কি তার শাস্তি? এ জগতে নেই? এর উত্তর অনিশ্চয়তার মধ্যেই নাহয় থাক। আফটার অল, এখানে এক্সপেরিএন্সড কোনো পাঠক নেই, আশা করি।

জীবনটা আপনার। দায়িত্ব আপনার শুধু নিজের জীবনের প্রতি? একটা চিঠি লিখে গলায় ফাস দিলেই সব শেষ? এতোদুর পর্যন্ত আপনাকে নিয়ে এল যারা, তাদের প্রতি? নিঃসন্দেহে এসব মানুষ চরম কৃতঘ্ন। যে পথের উপর সে পা রেখেছে, যে বাছুরের থেকে কেড়ে নেওয়া দুধ খেয়ে সে এতোদূর এসেছে, তাদের মুখে তার জন্য শুধু অবিরাম অন্তহীন অভিশাপ। অভিশাপ তার ফেলে যাওয়া দীর্ঘশ্বাসে ভরা বাতাস থেকে।

কার জন্য বা কিসের জন্য এ অধঃপতন? নিজের জীবনের চেয়ে তার প্রয়োজন কি বেশি? কখনোই না।
মানুষ, তুমি বাঁচো, তুমি বাঁচো। সামনে বিপত্তি আসবে। সেটুকু না থাকলে যে সুন্দর জীবনযাপন নিতান্ত বিরক্তিকর আর একগুঁয়ে। কিন্তু কেন সেই একগুঁয়ে জীবনের একচুল পরিবর্তন সমস্যার কারণ হবে? তা তো উপলক্ষ জয়ের, উপভোগের, ভালোবাসার, সমাধানের। এই না হলে প্রকৃত মনুষ্যত্ব! একজন বিজয়ী মানুষের আবির্ভাব কি করে হবে যদি যুদ্ধই না থাকে?
শেষ করছি নিজের লেখা কবিতার কিছু লাইন দিয়ে..

কীসের এতো ভয়?
এতো হতাশা করে তব মনোক্ষয়
কার সাধ্য, কে দেয় তোমায় পীড়া
তুমি দুর্বোধ্য, তোমার তুমিতে তুমিই সেরা।
এ জীবন চিরন্তন নয়, ভালোবাসা চির অক্ষয়
ক্ষুদ্র কোনো কল্পনায় স্তব্ধ হইও না বন্ধু
বড় করতে শেখ নিজেকে, নিজের মনকে
একবার আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখো..
সাদা সাদা মেঘমালারও সৌন্দর্য আছে,
শুধু কালবোশেখের কৃষ্ণ পর্দা দৃশ তুমি দু চোখো?

কেন চাও সমাপ্তি পবিত্র এ সত্ত্বার
নিঃশেষ করে স্বপন দেখানো ফুল ফল তরুলতা
কীসে তুমি হয়েছ আজ অসার?
অব্যাহত এক হাহাকার!

কষ্টের কবিতায় সুর লাগিয়ে রাতটাও যে বড্ড রঙিন,
কালো আকাশের ছায়া মাখিয়ে, এ মনো যে হয়ে যায় সৌখিন।
ভালোবাসার সংগীতে বেদনার ছোঁয়া দিতে,
হুতুমে গান গায়
স্বপ্নেরো পরশে নন্দিত মানসে লালিত তৃপ্তি
বিরহ বেদনায়।

জয় হোক মানুষের।
~ মোঃ তাহমিদুল ইসলাম

নব্যদীপ্তিশুদ্ধচিন্তায়_তারুণ্য

এই বিভাগের অন্য খবর

Back to top button