দেশের দক্ষিণাঞ্চল বরগুনা-সাতক্ষীরা এলাকায় পানি সংকট, বাড়ছে রোগ
দেশের দক্ষিণের জেলা বরগুনা এবং সাতক্ষীরা এলাকায় তীব্র পানি সংকট দেখা দিয়েছে। লবণাক্ততা বৃদ্ধির কারণে পুকুরের মিঠা পানির উৎস শুকিয়ে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে টিউবওয়েলের পানিও দিন দিন কমে আসছে। দূষিত পানি ব্যবহারের ফলে বেড়েছে ডায়রিয়া, কলেরা, আমাশয়,জন্ডিস, গ্যাস্ট্রিক, ইউরিন্যাল ইনফেকশান, চর্মরোগ, কোষ্ঠকাঠিন্য, যৌনাঙ্গে চুলকানি ও ঘা এর মতো রোগ। বেসরকারি সংস্থা একশন এইড বাংলাদেশের মাধ্যমে এসব তথ্য জানা গেছে।বিজ্ঞাপন
বুধবার (২১ এপ্রিল) সংস্থাটি থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। সেখানে বলা হয়, বিশেষ করে উপকূলীয় জেলাগুলোতে পানি সংকট বেশি। দূষিত পানি ব্যবহারের কারণে নানা ধরনের রোগ দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে নারীদের মধ্যে এই সকল রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা দিচ্ছে। যা পরবর্তীতে দীর্ঘমেয়াদী রোগ যেমন টিউমার এবং জরায়ু ক্যান্সারে রুপান্তরিত হচ্ছে।
আরও বলা হয়, মার্চ-এপ্রিল মাসে পানির সংকট মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। সাতক্ষীরা জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার দুটি ইউনিয়ন- ভাড়াশিমলা ও মথুরেশপুর এবং বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের দিকে তাকালে দেখা যায় কম বৃষ্টিপাতের ফলে সেখানকার পুকুরের পানির স্তর হ্রাস পেয়েছে। ফলে পুকুরের সঙ্গে সংযুক্ত পন্ড স্যান্ড ফিল্টার অকেজো হয়ে পড়েছে।বিজ্ঞাপন
সাতক্ষীরা জেলার কালিগঞ্জের বিভিন্ন পুকুরে দেখা দিয়েছে ব্যাঙাচির আধিক্য। দৈনন্দিন ব্যবহারের জন্য এই অঞ্চলের ১০টির বেশি গ্রামের ছয় শতাধিক পরিবারের মানুষ এই উৎস থেকে পানি সংগ্রহ করে থাকেন। এই ব্যাপারে নারায়ণপুর গ্রামের রহিমা খাতুন বলেন, পানির আর কোনো উৎস না থাকায় তারা এই পানি সংগ্রহ করে ব্যবহার করছেন।
কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর কর্তব্যরত চিকিৎসক মাহাতাব হোসেন জানান, ইদানিং অনেক নারী ইউরিন্যাল ইনফেকশান, যৌনাঙ্গে চুলকানি এবং সাদা স্রাবের (লিউকোরিয়া) মতো অসুখ নিয়ে চিকিৎসার জন্য আসছেন। পানির ঘাটতি নারী, কিশোরী এবং পুরো পরিবারের স্বাস্থ্যের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে।বিজ্ঞাপন
সাতক্ষীরার এক মহিলা পানির ব্যবহারকারী জানান, বাজারে পানির দাম দ্বিগুণ হয়ে গেছে। অধিকন্তু করোনা মহামারীর কারণে তাদের আয় কমে যাওয়ায় বাজার থেকে পানি কিনে আনার সক্ষমতা নেই। তাই তারা দূষিত পানি ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছেন। সুতরাং এটি মহিলাদের জন্য একটি ত্রীপক্ষীয় সমস্যার উদ্রেক করেছে।
এ প্রসঙ্গে একশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির বলেন, এই সংকট মোকাবেলায় একশনএইড বাংলাদেশ প্রাথমিক পর্যায়ে জরুরি ভিত্তিতে জনগণকে পানি সরবরাহ করছে। মাঝারি পর্যায়ে আমরা ভবিষ্যত জলবায়ুর গতিবিধি বিবেচনা করে পানি সংকট নিরসনে স্থানীয়ভাবে নেতৃত্বাধীন টেকসই সমাধানগুলি খুঁজে পেতে স্থানীয় জনগণের সঙ্গে কাজ করছি। তবে এর একটি স্থায়ী সমাধান দরকার এবং এই জলবায়ু সংকট মোকাবেলায় সরকার ও সকল উন্নয়ন সংস্থার একযোগে কাজ করার আহ্বান জানাচ্ছি।বিজ্ঞাপন
তিনি আরও বলেন, মার্কিন রাষ্ট্রপতি বাইডেন এর আমন্ত্রণে বিশ্ব নেতারা ২২ এপ্রিল ২০২১ তারিখে ভার্চুয়াল জলবায়ু শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন। আমরা বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ যারা তীব্র পানি সংকটে রয়েছেন তাদের সাথে ঐকমত পোষণ করে বলতে চাই -জলবায়ু রক্ষার পদক্ষেপ যেন কেবল গ্রীনহাউজ গ্যাস নির্গমন হ্রাস লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে সীমাবদ্ধ না থাকে। এটি ২০২৫ সালের লক্ষ্যমাত্রা নয়; এর জন্য এখন থেকেই কাজ করতে হবে। তাদেরকে দায়িত্ব নিয়ে যুক্তিযুক্তভাবে কাজ করতে হবে এবং নিশ্চিত করতে হবে যাতে সাধারণ মানুষ এই দুরাবস্থা থেকে মুক্তি পায়।